৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:০৮:০০ অপরাহ্ন


অতিকথন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে বৈষম্য
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
অতিকথন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে বৈষম্য বক্তব্য রাখছেন রিজওয়ানা হাসান


একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। নানা সংকটে জর্জরিত সরকার এমনিতেই ব্যাতিব্যাস্ত। কিছু উপদেষ্টা, কয়েকজন সরকার সমর্থক ছাত্র নেতার বাচালতা সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। 

দেশের সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক। সর্বশেষ সরকারের কেন্দ্রীয় কর্মস্থল সচিবালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড দেশ পরিচালনায় সরকারের যোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা যৌক্তিকভাবেই বলেছেন অগ্নিকাণ্ড অন্তর্ঘাত তৎপরতা। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং সরকার সমর্থক ছাত্রনেতারাও বলছেন পূর্ববর্তী সরকারের শুভাকাক্সক্ষীদের ষড়যন্ত্রের পরিণতি। কোনো কিছু ঘটলেই তার পেছনে পূর্ববর্তী সরকারের ষড়যন্ত্র খোঁজা কিছু মানুষের মুদ্রা দোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার মাস পেরিয়ে পাঁচ মাস হতে চলেছে বর্তমান সরকারের।

এরপরও যদি পূর্ববর্তী সরকার সমর্থকরা সরকারের হৃৎপিন্ডে অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে, তাহলে জনগণ কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রাখবে? বেছে বেছে কীভাবে দুইজন ছাত্র-জনতা আন্দোলনের নেতা, দুইজন উপদেষ্টার নিয়ন্ত্রণাধীন দফতরগুলোতে আগুন ধরানো হলো? যেসব মন্ত্রণালয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ বিস্তর সেগুলতেই কেন আগুন? কীভাবে একই ভবনের দুই প্রান্তে একই সঙ্গে আগুন লাগলো? সচিবালয় সরকারের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অন্যতম সুরক্ষিত কেপিআই হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু জুলাই-আগস্টের পর থেকেই সচিবালয়ে অনুপ্রবেশ সতর্কতা অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকরা অধিকাংশ সময়ে অনুপ্রবেশ করে নানা তদবিরে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে আন্তঃক্যাডার বিতর্ক, বিভেদ, বৈষম্য সংঘাত সৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এমনি অবস্থায় সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ ভবনে অগ্নিকাণ্ড এবং স্পর্শকাতর দলিল দস্তাবেজ পুড়ে যাওয়া রহস্যজনক।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সেনা সমর্থিত সরকার কিন্তু গণভবন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে লুটপাট, অগ্নিকা- নিয়ে কোনো তদন্ত করতে সাহসী হয়নি। অনেক সরকারি, বেসরকারি কার্যালয় এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে লুটপাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দেশজুড়ে চাঁদাবাজি, মব লিনচিং চলছে। নির্বাচন/সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য সৃষ্টি হয়নি। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী অরাজকতা নিয়ে সরকার আদৌ নিরপেক্ষ বিচার করার সক্ষমতা রাখে কি না, সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি স্বল্প সময়েই কেন বাতিল করে কাদের পরামর্শে নতুন কমিটি গঠন করা হলো? ঘটনার আদৌ সুষ্ঠু তদন্ত হবে কি না সন্দেহ। হয়তো উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়ে ধামা চাপা দেওয়া হবে।

সবাই জানেন, সরকারি কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের কাজে বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। সরকার কি পারবে দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নিত্যনতুন সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে। অনভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের অতি কথনের জন্য সর্বত্র বৈষম্য নতুন করে দানা বাড়ছে। সচিবালয়ে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হয় সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। দেখলাম দেশের এখজন শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিক বলেছেন দেশে ঘটতে থাকা অনেক কর্মকা-ের সংবাদ প্রচারে তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অবারিত সংবাদ প্রবাহের কারণে সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক মাধ্যমে আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

জানি না সরকার কতটা সংস্কার করতে পারবে বা আদৌ পারবে কি না। তবে উচিত হবে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ অবারিত রেখে যথাশিগগরি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে নিরাপদে ক্ষমতা হস্তান্তর। আশা করবো সরকার প্রধান বাচাল উপদেষ্টাদের অতিকথন থেকে বিরত রাখবেন। অতিকথন থেকে সাধারণভাবে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মনে রাখা উচিত তারা অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক। দেশব্যাপী সরকারের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত শিথিল।

শেয়ার করুন