১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৮:৩১ পূর্বাহ্ন


এরিক অ্যাডামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা খারিজ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৫
এরিক অ্যাডামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা খারিজ মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং তার আইনজীবী আলেকস স্পিরো


নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামের বিরুদ্ধে ফেডারেল দুর্নীতি মামলার অভিযোগ ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ম্যানহাটন ফেডারেল কোর্টের বিচারক ডেল ই. হো কর্তৃক খারিজ করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগগুলো চিরতরে খারিজ হয়ে যাওয়ায়, ভবিষ্যতে এই অভিযোগ পুনরায় আনা যাবে না। এই সিদ্ধান্তটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী আইনি জটিলতা শেষ হলো, তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে। যদিও তিনি বলছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। মামলার খারিজের রায়ে বিচারক হো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে) যে যুক্তি দিয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। ডিওজের দাবি ছিল যে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আনা হয়েছে এবং এটি মেয়রের শাসনকাজে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে বিচারক হো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেন, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আনা হয়নি এবং মামলার সময় নির্বাচনের প্রভাব প্রমাণিত হয়নি।

বিচারক আরো উল্লেখ করেছেন, আদালতের কাজ নয় বিচার বিভাগকে মামলা চালানোর জন্য বাধ্য করা এবং মামলাটি পুনরায় আনা না যেতে, সেজন্য তিনি এটি খারিজ করার সঙ্গে সঙ্গে মামলাটি অস্তিত্বহীনভাবে খারিজ করা রায় দিয়েছেন, অর্থাৎ ভবিষ্যতে এই মামলার পুনরায় তদন্ত করা যাবে না। মেয়র অ্যাডামের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের নভেম্বরে ফেডারেল সরকার দুর্নীতির অভিযোগ আনে, যেখানে বলা হয়েছিল যে, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় অবৈধভাবে তহবিল সংগ্রহ করেছেন এবং কিছু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তাদের জন্য সুবিধা প্রদান করেছেন। এই অভিযোগগুলো মেয়রের স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলে। মেয়র অ্যাডামস এবং তার আইনজীবীরা বারবার দাবি করেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি এবং এ মামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা বলেছিলেন, এই মামলা মাধ্যমে অ্যাডামসকে রাজনৈতিকভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছিল, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়। অ্যাডামস এই রায়ের পর সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এখন আমরা এই বিষয়টি বন্ধ করতে পারি এবং কেবল ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি। তবে, মামলার অবসান হলেও কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে এখনো কিছু চাপ থাকতে পারে।

বিচারকের রায় : একটি রাজনৈতিক ইস্যু?

বিচারক হো তার ৭৮ পৃষ্ঠার রায়ে সরকারের যুক্তি অস্বীকার করেছেন, যেখানে তারা বলেছিল যে মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। হো বলেন, ‘এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়নি’ এবং তিনি মামলার সময় নির্বাচনের কাছাকাছি হওয়া এবং এতে সরকারের হস্তক্ষেপের অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, পূর্ববর্তী দুর্নীতি মামলাগুলোর সঙ্গে মামলার সময়ের সম্পর্ক সঙ্গতিপূর্ণ। অন্যদিকে সরকারের যুক্তি ছিল যে এই মামলা অ্যাডামসের শাসনকাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল, বিশেষ করে অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে কিন্তু হো তা অস্বীকার করেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, এটা সম্পূর্ণ অপ্রমাণিত যে এই মামলা প্রশাসনের কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

রাজনীতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ : নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

এখন অ্যাডামসের সামনে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলো তিনি আসলেই ২০২৫ সালের মেয়র পদে নির্বাচন করবেন কি না। যদিও তিনি একাধিকবার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আবার নির্বাচনে দাঁড়াবেন, বাস্তবতা হলো, নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য এখন পর্যন্ত তার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সম্প্রতি তিনি তার নির্বাচনী প্রচারের জন্য একটি মুখপাত্র নিয়োগ করেছেন, তবে অর্থসংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে এখনো সমস্যা রয়ে গেছে। এছাড়াও প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ অনেক পেছনের সমর্থকরা এখন তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অ্যাডামস তার নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে এখনো কোনো প্রকাশ্য আলোচনায় অংশ নেননি, তবে তিনি বলেছেন, আমি একজন শক্তিশালী ক্যাম্পেইনার, আমি জানি কীভাবে পরিষ্কার এবং স্পষ্ট বার্তা দিতে হয়। সিটির জনগণ জানে, আমি একজন পরিচিত নেতা।

অ্যাডামস ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াবেন

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচনে ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি ডেমোক্রে‍টিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছেন। অ্যাডামস তার এ সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এখন থেকে আমি শুধু জনগণের পক্ষে কাজ করতে চাই। আমি রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে থেকে শহরের উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে প্রস্তুত। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চাপ এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে আরো শক্তিশালীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। বর্তমানে অ্যাডামসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, শহরের জনগণ কীভাবে তার নতুন প্রার্থী হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তার গতিশীলতার ওপর ভোটারদের মতামত কী হবে।

ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ কঠিন

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ডেমোক্রেটিক দলের লাইন ছেড়ে ২০২৫ সালের পুনর্নির্বাচনে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই সিদ্ধান্ত তার জন্য এক নতুন এবং অনিশ্চিত পথে যাত্রা শুরু করেছে, যা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা দৈলি নিউজকে জানিয়েছেন যে তার দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনা প্রায় শেষ করে দিয়েছে। অ্যাডামসের সিদ্ধান্তে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো এটি একটি নতুন এবং অনন্য উদ্যোগ, কারণ আধুনিক সময়ে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে কোনো প্রার্থী কখনোই শুধু স্বাধীন লাইন থেকে নির্বাচিত হননি। তার ওপর অ্যাডামসের জরিপে খারাপ ফলাফল, কম অর্থ সংগ্রহ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য দুর্নীতির চুক্তির অভিযোগ তার প্রার্থিতার পথে বড় বাধা তৈরি করেছে।

অ্যাডামসের শত্রুরাও কম নয়, এর মধ্যে প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো, ডেমোক্রে‍টিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানী এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া অন্যতম। ৩ এপ্রিল আগামী জুনের ডেমোক্রে‍টিক প্রাইমারি থেকে পদত্যাগ করে নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিলেও এটি তার পুনর্নির্বাচনের পথকে আরো সংকীর্ণ করেছে, এমনটাই বলছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অ্যাডামসের অনুমোদন রেটিং গত মাসে মাত্র ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের আইনগত সমস্যার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার ফলে তার রাজনৈতিক সমর্থনও কমেছে। এরিক অ্যাডামসের জন্য যদি জরিপের ফল ভালোও হতো, তবুও তার জন্য এটি খুব কঠিন হবে। কারণ একটি বড় দলের লাইন না থাকলে জয় পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

মেয়র অ্যাডামস একে অন্যের ওপর এক প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে তার আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি জয়ী হব। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মঞ্চে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে কি না, সেটি সময়ই বলবে, যা তার রাজনৈতিক জীবনের চূড়ান্ত মোড় বা স্নিগ্ধ সমাপ্তি হতে পারে।

শেয়ার করুন