অনেক বিলম্বে হলেও পেট্রোবাংলা বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্যাস তেল অনুসন্ধানের জন্য পরিমর্জিত মডেল পিএসসির ভিত্তিতে দর প্রস্তাব আহবান করেছিল। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে পরিমার্জিত মডেল পিএসসিতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের জন্য যথেষ্ট প্রণোদনা ছিল। প্রতিবেদক নিজেও বিভিন্ন জ্বালানি বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে শীর্ষস্থানীয় তেল কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী দেখেছি। বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় তেল কোম্পানি এক্সক্সন মোবিল স্বতপ্রণোদিত হয়ে গভীর সাগরের ১৫ টি ব্লকে বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়ে ছিল। তারও আগে বঙ্গোপসাগরের মায়ানমার অংশে কাজ করা অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি উড সাইড পেট্রোবাংলা মায়ানমার সাগর সীমা সন্নিহিত বাংলাদেশ অংশের পাঁচটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিলো। তীব্র গ্যাস সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশ সেগুলো বিষয়ে আগ্রহ দেখায় নি। এমনিতেই সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান বিষয়ে বিদেশী তেল কোম্পানীসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশের কোন উজ্জ্বল র্ট্যাক রেকর্ড নেই। এমতাবস্তায় বাংলাদেশে বিশাল গ্যাস বাজার থাকা, মডেল পিএসসির বাড়তি প্রণোদনা কেন তেল কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করলো না সেটি নিয়ে নানা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে।
সাগর সীমা নিয়ে মায়ানমার বা ভারতের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। দুটি দেশি তাদের অংশে দীর্ঘ দিন ধরে তেল গ্যাস অনুসন্ধান করে সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের সাগর সীমায় তেল গ্যাস প্রাপ্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ানমার সংলগ্ন সাগর এলাকায় ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট পরাশক্তিগুলোর আগ্রহ আছে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয় না।
পরিমার্জিত মডেল পিএসসিতে অন্নান্য আকর্ষণীয় প্রণোদনাসহ গ্যাসের মূল্য ব্রেন্ট ত্রুড ১০% ধরা আছে। দরপত্র আহ্বানের সময় মূল্য ৯০ ডলার ছিল যা এখন কমে ৭০ ডলার, কেউ কেউ তেলের মূল্য হ্রাসকে তেল কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহী হয়ে পড়ার কারণ মনে করলেও আমাদের বিবেচনায় বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশ উষ্ণ সম্পর্ক তেল কোম্পানিগুলোকে নিরুৎসাহিত করে থাকতে পারে। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট হয়েছে। সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং কোন কোন উপদেষ্টার কিছু আগ্রাসী কথা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ ঝুঁকি নেয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সন্দেহ নেই।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরন, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, নরওয়ে ও ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস অ্যান্ড স্লামবার্জার, জাপানের ইনপেক্স করপোরেশন ও জোগম্যাক, চীনের সিনুক, সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি এবং ভারতের ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনেছিল শেভরন, এক্সনমবিল, ইনপেক্স, সিনুক ও জোগোম্যাক। শেষ পর্যন্তু তাদের কেউ আসেনি দরপত্রে।
বিদ্যমান পরিস্থিতির সুরাহা না হলে বাংলাদেশে আহবান করা কোন আন্তর্জাতিক দরপত্রে সাড়া মিলবে বলে মনে হচ্ছে না। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান পিছিয়ে গেলে বাংলাদেশকে অবধারিতভাবে আমদানিকৃত প্রাথমিক জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ আমদানির উপর নির্ভর করতে হবে। অনির্বাচিত সরকারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা স্থাপন করতে হলে অবিলম্বে জ্বালানি প্রশাসনে সৎ,দক্ষ দেশ প্রেমিক পেশাদারদের সম্পৃক্ত করে আগ্রাসী জ্বালানি দ্যূতিয়ালি প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক দ্রুত পুনঃস্থাপন করতে হবে।