৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন


কনস্যুলেটে এরা কারা
‘জুতা মারার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ’
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
‘জুতা মারার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ’ বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের মতবিনিময় সভায় উপস্থিতির একাংশ


নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড. আহসান এইচ মনসুর এবং সভাপতিত্বে করেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। অনুষ্ঠানের আয়োজনেও ছিল নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট। শুরু থেকেই অনুষ্ঠানটি ভালো এবং সুন্দরভাবে চলছিল। প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তার বক্তব্য শেষ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই মনোযোগ দিয়ে তার বক্তব্যও শোনেন। গোল বাঁধে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে। কয়েকজনে প্রশ্ন করার পর রূপসী বাংলা টিভির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুজ্জামান খোকন প্রশ্ন করতে উঠেন। প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রথমে প্রশ্ন না করে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, এখানে আমার যে অভিজ্ঞতা তা কারো নেই। তিনি বলেন, আমি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে সংসদ সদস্য ছিলাম এবং কয়েকটি সংসদীয় কমিটিতেও আমাকে রাখা হয়। তিনি বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অর্থনীতি বুঝতেন না। তার সময়ে সাইফুর রহমানও অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সমালোচনা করতেই উপস্থিত বিএনপির পাতি এবং সিকি নেতারা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে থাকেন। এই সময় তিনি বলতে থাকেন- আপনাদের ইতিহাস জানতে হবে। এরপর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, শুরু হয় হইচই এবং চিল্লাচিল্লি। প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরওয়ার্দী উচ্চস্বরে চিৎকার করে তাকে বাধা দিতে থাকেন। তার সঙ্গে যোগ দেন বিএনপির আরো কয়েকজন পাতি এবং সিকি নেতা। অবস্থা এমন যে সব কিছু যেন তাদের মতই চলতে হবে। তারা যা বলবেন, তাই শুনতে হবে। অনেকটা মাস্তানী স্টাইলে। অনুষ্ঠানে যে কেউ দ্বিমত বা সমালোচনা করতে পারেন, তাই বলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে হবে? কোন সভ্য দেশে এটা চলতে পারে! আমেরিকার মতো উন্নত দেশে থেকেও তাদের এই আচরণ কেন- এমন প্রশ্ন অনেকের। অবস্থা বেগতিক দেখে আনিসুজ্জামান খোকন একটি প্রশ্ন করেন এবং উচ্ছৃঙ্খলকারীদের উদ্দেশে বলেন, আমাকে জুতা মারার জন্য ধন্যবাদ।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে এখনো পতিত স্বৈরাচারের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। পতিত সরকারের এমপির আত্মীয়স্বজনও কর্মরত রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবর্তন না হলেও তাদের আমন্ত্রণের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আগে দাওয়া বা নিমন্ত্রণ দেওয়া হতো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে, এখন দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবর্তন হয়নি, পরিবর্তন হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের। হতেই পারে! এটা বাঙালি চরিত্রেরই অংশ! আর সরকারি আমলা! তাদের কথা বলাই বাহুল্য। তবে প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতারা থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীরা থাকতে পারেন, মূলধারার ব্যবসায়ীরা থাকতে পারে। এসব পাতি এবং সিকি নেতাদের উপস্থিতি কেন? তাদের কারা নিমন্ত্রণ জানান? কোন যোগ্যতায় আমন্ত্রণ জানান? বিএনপি করেন এটাই কী তাদের বড় যোগ্যতা? এসব চামচামি বন্ধ করতে হবে। যোগ্যদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের অনুষ্ঠানে হয়তো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। তাই বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অনুষ্ঠানে নয়। তাতে করে অনুষ্ঠানে শ্রীহানি হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। যে কারণে গভর্নর বলেই ফেললেন অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। সুতরাং আগামী দিনে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগকৃত বলে বিএনপির নেতার চেয়েও কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের বড় বিএনপি সাজার প্রয়োজন নেই।

শেয়ার করুন