৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৩:১৮ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা : পতাকায় আগুন
যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি ভারতের
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৪
যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা চালানো হয়


ভারতের বিদেশ নীতির কিছু বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ক’দিন আগে শিখ হত্যাকা- নিয়ে কানাডার সঙ্গে বিবাদ এখনো বিদ্যমান! দুই দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্কে এখন নিদারুণ তিক্ততা। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের পর বাংলাদেশে কর্তৃত্ব হারিয়েছে, বলে যে কথা উঠেছে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পতনে, তার বাস্তবতার প্রমাণ তারা প্রকাশ্যেই দিতে শুরু করেছে। এতে করে উপমহাদেশে ভারতীয়দের কথিত ‘দাদাগিরি’ হুমকির মুখে। এতে চরম হতাশা বিরাজ করছে দেশটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। যেহেতু বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পরাস্ত ভারতের অনুগত্য আওয়ামী সরকার। ফলে সরাসরি কিছুই বলতে পারছিল না। পাছে বাংলাদেশের আমজনতার বিরুদ্ধে চলে যায়। তবে ভিসা কার্যক্রম থেকে শুরু করে এমন কিছু কার্যক্রম তারা শুরু করে দিয়েছিল, যাতে দেশটি যে বাংলাদেশের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছিল। পরিশেষে নিজেদের আর ধরে রাখতে পারেনি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে ভারতের কতিপয় উগ্রবাদীদের। এবার আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন অফিসে হামলা করে তছনছ করার সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে আগুন দেয় উগ্রহিন্দুরা। 

একই দিন কলকাতার বিধানসভায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে অভিযোগ এনে কেন্দ্রকে সুপারিশমালা পাঠাবেন মমতা ব্যানার্জী যে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষায় বাংলাদেশে যেন শান্তিরক্ষী পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বা দায়িত্বশীল অন্য কারো বিবৃতিও আশা করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যা তথ্য প্রচারে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা। কিন্তু থেমে নেই মিথ্যাচার। এসব আক্রমণের পেছনে মিডিয়ার প্রপাগান্ডা দায়ী বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার। এর মাধ্যমে ভারতের সাধারণ ও সরলমনা মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছেন, যাদের অনেকের আত্মীয়-স্বজনরা যেহেতু বাংলাদেশে বাস করছেন। 

তবে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এখানকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সেটা দেখার দায়িত্ব জাতিসংঘ থেকে আরো অনেক বন্ধুপ্রতিম দেশের। তাছাড়া বাংলাদেশ অশান্ত হলে পার্শ্ববর্তী স্থান বা দেশেও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে না। যেমনটা মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আভা বাংলাদেশের সীমান্তেও লেগেছে। এদিকে ভারতে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বৈদেশিক রাষ্ট্রদূতদের অবহিতকরণ 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বিশেষ করে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার’ অভিহিত করে বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তৌহিদ হোসেন ২ ডিসেম্বর সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে এক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার একটি অংশ, বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যম এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছি যে, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজব্যবস্থা যেখানে সর্বদা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে।’ উপদেষ্টা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করেন। তবে জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো সামাজিক আদর্শের প্রতিফলন নয়।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ঘটনা একেবারে অস্বীকার করছি না, তবে সেগুলো বিচ্ছিন্ন এবং বিভিন্ন আমলেই বিক্ষিপ্তভাবে ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কেউ এটিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি কূটনীতিকদের সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের অটল অঙ্গীকারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত। সরকার এটা বজায় রাখতে এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

তিনি বলেন, দেশটি (বাংলাদেশ) অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এমন ধারণা দেওয়ার জন্য দেশে এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং মিডিয়ার একটি অংশ, বিশেষত ভারত এ প্রচারে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা বিশ্বব্যাপী (সরকারের বিরুদ্ধে) প্রচারণা চলছে।’ তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন, কেউ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধিও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হোসেন বলেন, ইসকনের সাবেক নেতা চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কোন পরিস্থিতিতে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। সরকার দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না এবং তারা সব নাগরিককে সমান চোখে দেখেন।

‘দেশে কোনো সমস্যা নেই, আমরা এমনটা বলছি না। সমস্যা আছে এবং আমরা সেই সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করছি’ উল্লেখ করে হোসেন বলেন, সরকার অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে সফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে ভারতের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য’। ভারত সরকারকে বাংলাদেশে একটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘এগুলো মমতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক মন্তব্য। আমি এ ধরনের পরামর্শের কোন ভিত্তি দেখি না।’ 

আগরতলায় উপ-হাইকমিশনার অফিসে হামলার প্রতিবাদ 

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে কিছুসংখ্যক বিক্ষোভকারীর পরিকল্পিত হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারত সরকারকে দ্রুত তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের পরিকল্পিতভাবে মিশনের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতেই তারা পতাকার খুঁটি ভেঙে ফেলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এটি দুঃখজনক যে মিশন রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল না। আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলার একটা ধারা তৈরি হয়েছে। এর আগে গত ২৮ নভেম্বরও কলকাতায় একই কায়দায় সহিংস হামলা হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আগরতলার এই ঘটনা ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।’ মন্ত্রণালয় বলছে, যেহেতু কূটনৈতিক মিশনগুলো সুরক্ষা দেওয়া ভারত সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ‘পাশাপাশি বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যেকোনো ধরনের হামলা প্রতিরোধ এবং কূটনীতিকবৃন্দ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো’ হয়।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন এমন প্রতিবাদ কেন? 

বরাবরই ভারতের বিশেষ করে বাংলাভাষাভাষীদের মধ্যে দারুণ একটা ভাব বিদ্যমান। কিন্তু এটা হঠাৎ তিক্ততায় পড়ে যাওয়ার মূল কারণ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মুছে যাওয়ার অবস্থা তৈরির ফলে। ভারতীয়দের অনেকেই এটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশের জনগণ যতটা না বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, শেখ হাসিনা ও তার দলের পতন ঘটেছে, তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব ও দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারের জন্য। কিন্তু ভারত এটা মানতে নারাজ। তারা দেখছে তাদের অতি আপন বা অনুগতের নিদারুণ পরিণতি। এ থেকেই ক্ষোভের চাপা আগুন প্রজ্বালিত তাদের মধ্যে। 

অবশ্য এটা যে খুব বেশি ছিল তাও নয়। এর পেছনে বড় একটা ভূমিকা রেখে চলছে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারত যেয়ে ঠাঁই নেওয়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ারা কলকাতা ও তার আশপাশে বসে ক্রমশ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যেহেতু বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, ফলে কলকাতা ও তার আশপাশের মানুষদের সহজেই জাগিয়ে তোলার কর্ম খুব ভালোভাবেই করছেন। এর আগেও বাংলাদেশের সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল একবার আগরতলায় আওয়ামী লীগ জনসভা করবে। যেখানে যোগ দেবেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেটা আর বাস্তবে রুপ নেয়নি। ওই জনসভা না করতে পারলেও সেই আগরতলায় আরেকটা পর্ব বেশ সাকসেসফুলভাবেই করেছে তারা। তাছাড়া ভারত সরকার যে এভাবে একটা আক্রমন হতে দেবে এটা অন্তত গণতন্ত্রমনা একটা দেশের কাছে কেউ কল্পনাও করেনি। 

পূর্ব প্ল্যানে উপ-হাইকমিশনে আক্রমণ 

এর আগে বেনাপোল বন্দরের ওপারে পশ্চিমঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর পেট্রাপোলে গত ২ ডিসেম্বর সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ সময় পেট্রোপল সীমান্তে ভারতীয় হিন্দুদের জড়ো হওয়ার নির্দেশনা দেয় এবং দলে দলে কতিপয় হিন্দু সেখানে উপস্থিতও হন। এ ঘটনা প্রবাহে এমন একটা হামলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের যথার্থ নিরাপত্তা দেয়নি। এমন ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষক মহল। 

এছাড়াও কলকাতা ও তার আশপাশে ভোটের যে একটা লড়াই আছে বিজেপি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সেটা বেশ জমিয়ে তুলেছে বাংলাদেশে কথিত ইস্যু তৈরি করে। কে বেশি বাংলাদেশের হিন্দুদের শুভাকাক্সক্ষী সেটা প্রমাণেই এখন চলছে মহড়া। বেশ কিছুদিন যাবৎই ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে এমন হলুদ সাংবাদিকতা করে আসছিল ইন্ডিয়ার কিছু মিডিয়া। আবার ভারতেরই কিছু কিছু মিডিয়া বিভিন্ন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ওই তথ্য যে ভুল সেটা গ্রাফ একে উপস্থাপন করেছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সত্যটা প্রকাশ করলে ভারতের মিডিয়ার অসত্য বয়ান হালে পানি পাচ্ছিল না। 

এরপরই বাংলাদেশের এক হিন্দু নাগরিককে (সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস) রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় আটকের পর থেকে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে কলকাতা ও তার আশপাশের অতি উৎসাহী কিছু হিন্দু উগ্রবাদী। যার সূত্র ধরে তোলপাড়। যাকে ধর্মগুরু আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নামক কথিত প্রপাগান্ডার বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি চিন্ময়কে আটকের পর সাইফুল ইসলাম নামক এক আইনজীবীকে উগ্রবাদী ইসকনের অনুসারীরা কুপিয়ে হত্যার পরও ভারতের মিডিয়ার বয়ান ছিল সাইফুল চিন্ময়ের আইনজীবী হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। 

উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশ

আগরতলায় উপ-হাইকমিশন অফিসে হামলায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সেখানে ছাত্রদের ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এছাড়া রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃবৃন্দ প্রতিক্রিয়া জানান। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দসহ অনেক দল আলাদাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

বাংলাদেশের হিন্দুরা বিব্রত 

বরাবর এমন ইস্যুতে বাংলাদেশের হিন্দুরা বিব্রতবোধ করছেন। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ভূমিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সব ধর্মবর্ণ পেশার মানুষ জড়িত। স্বৈরাচার বিদায়ে তারাও ছেড়েছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর ওপর যে কথিত অত্যাচার, হামলার অভিযোগ এটা মিথ্যা, সে কথা বিভিন্ন মাধ্যমে তারাও জানান দিচ্ছেন। কিন্তু সেগুলোতে কর্ণপাত নেই ভারতের কতিপয় মানুষের। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একজন হিন্দুকেও হত্যা করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। কিন্তু সেই ক্রেডিট তারা নিতে পারছেন না ভারতের মিডিয়ার প্রপাগান্ডায়। 

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর হিন্দুদের সব পূজা অর্চনা নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপরও ভারতের কতিপয় মিডিয়া ও এক দল উগ্রবাদী ‘হিন্দু ট্রাম্পকার্ড’ খেলে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে অশান্তকরণের চেষ্টায় লিপ্ত। 

ইতিমধ্যে অনেক হিন্দু ধর্মের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রাণের দেশ বাংলাদেশের হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলা এবং ভারত সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

পরিশেষে

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ভারত ইচ্ছে করলে এ দেশের ওপর আক্রমণ করবে বিষয়টা এতোটাই সহজ না। এ পর্যন্ত যতটুকু হয়েছে তার জন্যও হয়তো ভারতকে আন্তর্জাতিক পর্যায় জবাদিহি করতে হবে। যদিও এসব কাজে গোটা ভারতকে দায়ী করার সুযোগ নেই। দেশটির ক্ষুদ্র একটা অংশের অতি উৎসাহী হওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে। যে চিন্তাশক্তির সঙ্গে ভারতের অন্তত ৯৯ শতাংশ মানুষের বিশ্বাস ও যোগসূত্র আছে বলে মনে হয় না। 

ভারত ইতিমধ্যে সে দেশে পতিত আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিয়ে বড় মনের পরিচয় দিয়েছে। কারণ পালিয়ে যাওয়ার অন্য কোনো দেশ যে তাদের গ্রহণও করছে না। তাহলে কোথায় পালাবেন তারা? ফলে সে দেশেই আশ্রয় গ্রহণ করেছে সাবেক পতিত সরকারের বহু নেতা। ফলে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সাবেক এসব নেতার চিন্তা ও ইচ্ছাশক্তিরও প্রয়োগ ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। 

শেয়ার করুন