৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৬:৪৭ পূর্বাহ্ন


মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আজিজের পর কে : ফুরফুরা মেজাজে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৪
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আজিজের পর কে : ফুরফুরা মেজাজে বিএনপি বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র


সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব:) আজিজের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি আজিজ ও তার পরিবারও এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত এ খবর এখন আর বাংলাদেশের কারোরই অজানা নেই। গত ২০ মে সোমবার ভোরে মার্কিন স্টেড ডিপার্টমেন্টের পরিবেশিত এ খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। 

খবরটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ যে ইস্যুগুলো উল্লেখ করে সাবেক ওই প্রভাবশালী সেনাপ্রধানকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেগুলো তার একার পক্ষে করা সম্ভবপর নয়। সেখানে আরো অনেকেই জড়িত বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। জেনারেল আজিজের মার্কিন ভিসা বাতিলের খবর প্রকাশিত হয়েছিল ২০২১ সনে। সেটা শুধু তার বেলায়ই হয়েছিল। এবার পরিবার সহ। এতে করে শুধুই যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে তার বাধা তা নয়। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত কার্যকর করে কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশ। বিষয়টা বেশ জাটিল। একই সঙ্গে এমন নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তগণ ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন করতে যেয়েও ঝামেলার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে সাবেক এ সেনাপ্রধান এবং তার পরিবারবর্গের জন্য এটা একটা খুবই কঠিন পদক্ষেপ মার্কিনীদের। অন্য আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আরো অনেকে রয়েছেন। এখন শুধু জেনারেল আজিজের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে আজিজের পরে কে? সূত্র জানায় ইতিমধ্যেই এই সব নাম যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকটি সূত্র জানায়, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

কী আছে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে উদ্বৃত করে প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাপক দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে সাবেক জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে, পূর্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে আজিজ আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হলেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তার (আজিজ আহমেদ) কর্মকান্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণ আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, আজিজ আহমেদ তার এক ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করেন। এছাড়া অন্যায়ভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইদের ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করেন।

বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি

সাবেক সেনাপ্রধানের ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জেনারেল আজিজ সেনা প্রধানের আগে বিডিআর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তারও আগে তিনি বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করে ওই পর্যায়ে এসেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ সেটা কখনকার সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে তার উপর পরের অভিযোগটি ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। আর সেটা হলো তার (আজিজ আহমেদের) কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণ আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। 

অন্যটি তার পরিবারের সদস্যদের কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেয়া ও অন্যান্য বিষয়। এর মধ্যে কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেয়া এবং সেটা সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়ার কথা উল্লেখ করা রয়েছে। সাধারণ মানুষে এ বিষয়গুলো নিয়েই ব্যাপক আলোচনার খোড়াক তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি যে পাওয়ার ব্যাবহার করতেন সেটারও ইঙ্গিত দিয়েছে। আর তা হলো- আজিজ আহমেদ তার এক ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করেন।

বিশেষ যে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিনীরা সেটা ছিল বিবৃতির শেষপ্রান্তে। সেখানে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা আবারও নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থপাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

যার অর্থ দীর্ঘদিন থেকেই মার্কিনীরা যেসব বিষয় নিয়ে বারবার বলে এসেছিল যে তারা বাংলাদেশের বিভিন্নখাত নিয়ে বিশ্লেষণ করছে। পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে যে সব বিষয় তারা নজর দিচ্ছেন যাতে সেগুলো আরো শক্তিশালী করে বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে এ ব্যাপারে সহযোগিতাবরণ ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি সেগুলোর দিকে তাদের যে এখনও সক্রিয়তা রয়েছে সে ইঙ্গিতটা তারা এ বিবৃতিতে দিয়ে দিয়েছেন। এবং জেনারেল আজিজকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় তারা অগ্রসর হচ্ছে সেটাই মনে করেন রাজনৈতি বিশ্লেষকগণ। 

ফুরফুরা মেজাজে বিএনপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার খবরে বিএনপি প্রকাশ্যে তেমন খোশ মেজাজ না দেখালেও দলের অভ্যন্তরে খুশির জোয়ার বইছে। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিনীদের কর্মকাণ্ডে বিএনপি বেশ আশাবাদী ছিল যে অন্তত একটি সুষ্ঠু ধারার পরিবেশ তৈরি হবে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে জো বাইডেনের যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বিশ্বের যেসব স্থানে গণতন্ত্রে পিছিয়ে পড়া তাদেরকে সঠিক ধারায় নিয়ে আসার- সে সূত্র ধরে। মার্কিনীরা কম তৎপরও ছিলেন না। দিয়েছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের জন্য ভিসানীতি। কিন্তু দিল্লিতে টু টু বৈঠকের সব জলাঞ্জলি হয়েছে। হঠাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপসে যায়, ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে যেয়ে সেটা ভারতের এক প্রবীন কূটনীতিবিদ সেদিনও বলেছেন। আর বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা কেমন হলো কারা অংশ নিয়েছে সেগুলো তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

এরপর থেকে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনবল ভেঙ্গে চুপসে যেতে থাকে। সে থেকে আবার তারা উঠে দাঁড়ানোর চিন্তা করছে যখন ঠিক সে মুহূর্তে এমন খবর। বিএনপি অবশ্য এবার বলছে- আর কোরো উপর ভরসা করবেন না তারা। যা করার দেশের জনগণকে নিয়েই করবেন। কিন্তু এটা তাদের মুখের কথা, অন্তরের নয়। কারন চতুর্থ টার্ম ক্ষমতার মসনদে আরোহনকারী আওয়ামী লীগকে সহজেই যে নামানো যাবে না সেটা তারা ভালই জানেন। এমনি মুহূর্তে নির্বাচন পূর্বে যে গতিপ্রকৃতি ছিল মার্কিনীদের, আজিজকাণ্ডে আবার তারা স্বভূমিকায় ফিরেছে এটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। খুশির কারণ ও ফুরফুরে হয়ে ওঠার পেছনে এ বিষয়টাই কাজ করছে। 

যদিও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য অত্যন্ত গুরুগম্ভীর। এটাই অবশ্য যথার্থ। ২১ মে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘নিজের ঘর নিজে সামাল দিতে না পারলে, অন্য কেউ সামাল দেবে না। নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। এদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) পরাজিত করতে হবে। আজকে অনেকেই আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে খুশি হবেন। আমি মনে করি, এটা বিভ্রান্ত করা। বিভ্রান্ত হচ্ছি আমরা সব সময়। র‌্যাবের কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাতে কি ওদের ভয়ঙ্কর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? হয়নি।’

ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা হাজার বার বলেছি। সারা দুনিয়া বলেছে। তারা (আওয়ামী লীগ) অস্বীকার করেছে। এখন খবর এসেছে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণ দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা এবং জনগণের বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করা। এই কথাটাই আমরা বলার চেষ্টা করেছি। সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা রাষ্ট্রযন্ত্র, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন। ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছেন।’

বিস্মিত আজিজ 

আল জাজিরার ‘প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই আজিজ আহমেদ ফ্রন্টলাইনে। যেসব ইস্যুর উপর নির্ভর করে এ নিষেধাজ্ঞা সেটা ওই চ্যানেলের প্রচারিত ইস্যুগুলোই কাউন্ট করেছে মার্কিনীরা। 

যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিবৃতি ও সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন সাবেক এ সেনাপ্রধান। তিনি বলেছেন, ‘আমি অবাক হয়েছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিশ্চিত, এটা লোকজন বুঝবে।’ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি, অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন অনুষ্ঠানে যে অভিযোগ দুটি আনা হয়েছিল, সেটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। যদিও এখানে অত কিছু বিস্তারিত বলা হয়নি কিন্তু, একই জিনিস।

আজিজ বলেন, ‘প্রথম অভিযোগ হলো, আমি আমার ভাইকে বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন আছে, তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে সে যাতে এড়িয়ে চলতে পারে সে জন্য আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করে দুর্নীতি করেছি। দ্বিতীয় হলো, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নিয়েছি; আমি আরেকটি দুর্নীতি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলবো, আমার সেই ভাই, যদিও এখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকে বিদেশে এবং নিশ্চয়ই সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গেছে। সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার পথ-পদবি ব্যবহার করেছি এই অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না, এটা সঠিক না।

দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে বলবো, ‘আমি চার বছর বিজিবি প্রধান এবং তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি একটা প্রমাণ দিতে পারে আমি আমার ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, আমি যে কোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন, ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট দেইনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পাবলিক করার আগে আমাদের মিশনকে (যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশন) জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, আমেরিকার সঙ্গে আমরা এনগেজডমেন্টের মধ্যে আছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিলো সেটি হচ্ছে থ্রি সি ভিসা নীতি। কিন্তু জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে যে ভিসা নীতি দিয়েছে সেটা ফরেইন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস এপ্রোপ্রিয়েশন্স অ্যাক্টের অধীনে। অর্থাৎ যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছিলো সেটির অধীনে তাকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। অন্য অ্যাক্টের অধীনে তাকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার মিট দ্য রিপোর্টার্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আপনারা দেখেছেন আওয়ামী লীগের অনেক সংসদ সদস্য দুর্নীতির দায়ে জেলে গিয়েছেন। সরকারি দলের অনেকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করছি।

অপর এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান কামাল বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এটা নতুন কিছু নয়। 

যে কারণে জেনারেল আজিজের নিষেধাজ্ঞায় চাঞ্চল্য 

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। ওয়াশিংটন থেকে খবরটি আসে গত ২০ মে (বাংলাদেশ সময়) ভোররাতে। তখন বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ ঘুমে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবরটি চাউর হতে থাকে। জেনারেল আজিজ ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই আলোচিত। যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই তার ওপর নজর রাখছিল। ডোনাল্ড লু’র সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে সবাই ধারণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোধহয় সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে তার নীতিতে অটল থাকে এটা তারই প্রমাণ। বিভিন্ন মহলে বৈঠকে ডোনাল্ড লু আরও কিছু বিষয় ইঙ্গিত করে গেছেন। তার সফরের পর সরকারি মহলে যথেষ্ট উচ্ছ্বাস ছিল।

বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আসায় নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।

নানা সূত্রের খবর, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের ওপর। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই। তবে এখানে এটা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, ডোনাল্ড লু তার বিবৃতিতে সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির বিষয়টি উত্থাপন করে গেছেন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন ‘আজকে আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা করেছি। সরকারি কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আমরা (দুই দেশ) একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এর মাধ্যমে যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতি করেছে তাদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারি।’ লু’র সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্নীতির দায়ে জেনারেল আজিজ এবং তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা এলো। দেশটির ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রিসেয়েশন অ্যাক্ট ৭০৩১ (সি) এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বাইডেন প্রশাসন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই ঘোষণার মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি উইন্ডো ওপেন করলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জেনারেলের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা জারির পর জনমনে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল। সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আর কার কার বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে? স্মরণ করা যায়, জেনারেল আজিজের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয় ২০২১ সালে। তখন তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা বাতিলের খবর ছিল না। ২০২১ সালের ১১ই ডিসেম্বর মানবজমিন প্রথম রিপোর্টটি প্রকাশ করে। সেই খবরে উল্লেখ ছিল সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজকে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার মার্কিন ভিসা বাতিল হয়েছে। এক পত্র মারফত জেনারেল আজিজকে যুক্তরাষ্ট্র সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-জাজিরায় জেনারেল আজিজের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর প্রচারের পর যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্তটি নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারিতে (২০২১) ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে রিপোর্টটি প্রচার করে আল জাজিরা। এতে সামি (ছদ্মনাম) নামের হাঙ্গেরিতে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির সহায়তায় হারিস আহমেদ নামের এক ‘আসামি’র পরিচয় প্রকাশ করা হয়। হারিস বুদাপেস্টে ‘মোহাম্মদ হাসান’ নামে বসবাস করছিলেন। তিনি আজিজ আহমেদের ভাই। আহমেদ পরিবারের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ প্রকাশ করা হয়। আজিজ আহমেদ অবশ্য তখন সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে পরবর্তীতে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত খবরকেও অসত্য বলে দাবি করেছিলেন। জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল এবং তাকে দেশটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণার সত্যতা আজ স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। উল্লেখ্য, জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০২১ সালের ২৪শে জুন অবসরে যান। বর্তমানে স্বস্ত্রীক ঢাকাতেই রয়েছেন। তার ৩ ছেলে, একজন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অপর দুই ছেলের একজন ব্যাংকার, অন্যজন দুবাইতে কানাডিয়ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

আজিজ আহমেদ বললেন, নিষেধাজ্ঞার ঘটনা সরকারকেও কিছুটা হেয় করে

দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যে অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, এ নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তাই এ ঘটনা সরকারকেও কিছুটা হেয় করে। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ গত ২১ মে মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গত ২০ মে সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর ফলে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজিজ আহমেদ বলেন, তিনি অবাক ও মর্মাহত হয়েছেন এবং বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। যে দুটো অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়, মিথ্যা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়। তথ্যচিত্রটি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তাঁর ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ছিল। এ বিষয়ে আজিজ আহমেদ বলেন, আল-জাজিরার এই তথ্যচিত্র ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা একই সূত্রে গাঁথা। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যদিও ব্যক্তিগত, তবে বর্তমান সরকারের সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই ঘটনাটি সরকারকেও কিছুটা হেয় করে।

আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ২৫ জুন। ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক ছিলেন। তার আগে আজিজ আহমেদ কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশে সহায়তাকারীদের সাধুবাদ জানালো যুক্তরাষ্ট্র 

দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাপক সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের টুইটার) লিখেছেন:

‘সাবেক বাংলাদেশি জেনারেল আজিজ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য- আজকের এই ঘোষণা দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা বাড়াতে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সাথে কাজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকেই পুনঃনিশ্চিত করে।’

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ম্যাথিউ মিলারের উক্ত পোস্টটি শেয়ার করে নিজের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন : ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা বাংলাদেশিদের সমর্থন করি। স্বচ্ছ সরকারি প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলি। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশে সহায়তাকারীদের সাধুবাদ জানাই।’

শেয়ার করুন