৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৪০:৫৪ অপরাহ্ন


আদালতে হাজিরা দিলেই গ্রেফতার
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে মামলা আইস কর্তৃপক্ষ আদালত প্রাঙ্গণে অভিবাসীদের গ্রেফতার করছে


যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ইমিগ্রেশন আদালতে বাধ্যতামূলক হাজিরার পর তাদের গ্রেফতার করার প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ নীতিকে বেআইনি ও অমানবিক বলে আখ্যা দিয়ে, ইমিগ্র্যান্ট অধিকার সংগঠনগুলো নিউইয়র্কের সাউথার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে গত ১ আগস্ট। শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল ক্লাস অ্যাকশন মামলা দায়ের করেছে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা অভিবাসীদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার মৌলিক অধিকারকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। মামলাটি দায়ের করেছে মানবাধিকার সংগঠন দ্য ডোর, আফ্রিকান কমিউনিটিজ টুগেদার, নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এনওয়াইসিএলইউ), আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), মেইক দ্য রোড নিউইয়র্ক (এমআরএনওয়াই) এবং আইন সংস্থা ইমেরি সেলি ব্রিনকারহফ অ্যাবাডি ওয়ার্ড অ্যান্ড মাজেল এলএলপি। মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ইচ্ছেমতো অভিবাসীদের গ্রেফতার করছে, এমনকি তারা আদালতে মামলার ইন্টারভিউ দিতে গেলেও রেহাই পাচ্ছেন না। এতে করে তারা তাদের অভিবাসন মামলার ন্যায্য শুনানির সুযোগ হারাচ্ছেন। এ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসিডিউর অ্যাক্টের পরিপন্থী, যা ফেডারেল সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। মামলায় দাবি করা হয়েছে, এ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক আইনের লঙ্ঘন এবং তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হওয়া উচিত।

দ্য ডোরের লিগ্যাল সার্ভিস সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর বেথ বাল্টিমোর বলেন, আমরা প্রতিদিন আতঙ্কিত তরুণ-তরুণীদের ফোন পাই, যারা ভয় পাচ্ছে আদালতে যেতে, কারণ তারা জানে সেখানে গেলেই তাদের গ্রেফতার হতে পারে। কেউ যেন তার নিরাপত্তা ও বিচার পাওয়ার অধিকার এ দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বাধ্য না হয়। আফ্রিকান কমিউনিটিজ টুগেদারের ডেপুটি নির্বাহী পরিচালক ডায়ানা কনাতে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে অভিবাসীদের আদালতেই গ্রেফতার করছে, যেন তারা আর সেখানে না যায় এবং নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এটি একটি সচেতন কৌশল হলে অভিবাসীদের আইনি সুরক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার।

অনওয়াইসিএলইউয়ের পরিচালক অ্যামি বেলশার বলেন, আইসিই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে আদালতে যাওয়াই হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বিচার নির্বাসন নীতির একটি অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসিএলইউয়ের উপপরিচালক মাইকেল টান বলেন, আইসিইয়ের এ পদ্ধতি শুধুই নির্মম নয়, এটি একটি ‘সন্ত্রাসের শাসন’ প্রতিষ্ঠা করছে। আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ করছি এ অবৈধ কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করার।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের এক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ডিলান, নিউইয়র্কের এক কলেজ শিক্ষার্থী এবং বাফেলোতে বসবাসরত ১৯ বছর বয়সী অলিভার মাতে ভেলাজকেজ আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আইসিইয়ের হাতে গ্রেফতার হন। অন ওয়াইসিএলইউ অলিভারের পক্ষে মামলা দায়ের করে এবং তাকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। মেক দ্য রোড নিউইয়র্কের সহ-আইন পরিচালক হ্যারল্ড সোলিস বলেন, আমরা কোর্টে দেখেছি কীভাবে অভিবাসীদের আটক করা হচ্ছে। তাদের কাছে মা-বাবা, ছাত্রছাত্রীদেরও রেহাই নেই। এভাবে মানুষকে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

আইনি প্রতিষ্ঠান এমারি সেলি ব্রিঙ্কারহফ আবাদি ওয়ার্ড অ্যান্ড মাজেলের অ্যাসোসিয়েট অ্যাটর্নি এমিলি ওয়েঞ্জার বলেন, কোর্টে গিয়ে হাজিরা দেওয়া লোকদের টার্গেট করা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে, পরিবারগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। এসব গ্রেফতারের কোনো যৌক্তিকতা নেই, শুধু আইসিইয়ের কোটা পূরণ ছাড়া।

এ মামলার মাধ্যমে বাদীপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এ বেআইনি নীতি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হোক এবং অভিবাসীরা যেন নির্ভয়ে কোর্টে গিয়ে তাদের ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন, তবে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন