৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩৯:২৮ অপরাহ্ন


কার কি প্রতিক্রিয়া
এনসিপি কি একা হয়ে যাচ্ছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
এনসিপি কি একা হয়ে যাচ্ছে এনসিপি নেতৃবৃন্দ


গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় বইছে। এঘটনায় সব পক্ষই দাবি করছে তারা-ই লাভবান হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের ঘটনা এনসিপিকে একভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো কারো মতে, রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটি হয়তবা প্রশাসন নির্ভর হয়ে যাচ্ছে বলে কারো কারো অভিমত। অন্যদিকে ক্ষতির ধাক্কা বিএনপি’সহ অন্যসব দলের ঘাড়েও এসে পড়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে গোপালগঞ্জের একটি বড়ো বার্তা বার্তা হলো ‘মাঠ এখন অনৈক্যে ভরা, চলছে একে অপরকে ঘায়েলে সবাই ব্যস্ত। এর পাশাপাশি গোপালগঞ্জের ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের বিপ্লবী ইমেজে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকারের অহিংস ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক অঙ্গনের সচেতনরা।

কি হয়েছিল গোপালগঞ্জে?

দফায় দফায় গোপালগঞ্জে হামলা, ভাংচুর, সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটে। গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। এতে অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেলেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও দুজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে, ১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে ওইদিন সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ সদস্য ও তাঁদের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

কার কি প্রতিক্রিয়া

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার দিন রাত সাড়ে নয়টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কোন দিন কোন জেলায় যাব, এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা, নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা গোপালগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি কায়দায় হামলা করে তারা।’ গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা দেখা যায়নি বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে উদ্বেগ-ও জানিয়েছে দলটি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে যে ‘উন্মত্ত পরিস্থিতির’ সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গোপালগঞ্জে সংঘটিত হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে সিপিবি। পাশাপাশি জানমালের নিরাপত্তা বিধানের দাবিও জানিয়েছে তারা।

এনসিপিকে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া ওই বিবৃতিতে গোপালগঞ্জে হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে সমালোচনা করে দলের নেতারা অন্য রকম একটি মন্তব্য করেন। এতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি নির্ধারণ করবে, অন্যথায় গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়া হবে। বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যেই ফুটে উঠেছে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইমেজে গড়ে উঠা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)’র সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার বিষয়টি। বোঝা যায় এনসিপি ‘গোপালগঞ্জে’ অভিযান কর্মসূসিতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিলো না। কেননা সব মহলেই প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র একেবারে শীর্ষ নেতারা এমন একটি স্পটে এভাবে অগোছালোভাবে কর্মসূচি নিয়ে কিভাবে উপস্থিত হয়েছিল। এর পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির’র মারাত্মক সাংগঠনিকের পাশাপাশি রাজনৈতিক ইমেজও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রশ্ন দেখা গিয়েছে মাত্র একবছরেই দলটির রাজনৈতিক ইমেজ এই জায়গায় চলে এলো কিভাবে? কেনো গোপালগঞ্জে দলটির সাংগঠনিক ভিত যাচাই না করে এমন একটি কর্মসূচি পালনে ঝুঁকি নেওয়া হলো? কেনো সেখানে এনসিপি’র পাশে ২০২৪ সালের মতো ছাত্র-জনতা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের তীব্র প্রতিরোধ ঠেকাতো ঠেকাতে পারলো না? কেনো গোপালগঞ্জে গিয়ে হামলার মুখে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়া এনসিপি নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে (এপিসি) করে সেখান থেকে বের হন। এমনকি পরে তাঁরা সাঁজোয়া যানে করেই গোপালগঞ্জ ছাড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। আবার প্রশ্ন উঠেছে এনসিপি’র একেক জন নেতা একেক ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি নিয়ে। কেননা দেখা গেলো যে, গোপালগঞ্জে জাতীয় এনসিপি নেতাদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় ওই জেলায় দায়িত্বরত গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়াসহ তিনটি দাবি জানিয়েছে দলটির নেতারা। ঘটনার পরের দিন রাতে বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহানগর উত্তর শাখার সংগঠক মোস্তাক আহমেদ দাবিগুলো তুলে ধরেন। কিন্তু গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশ শেষে তাদের ঘিরে হামলার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ঐদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে সারজিস ভিন্ন কথা লেখেন। তিনি লেখেন ‘গোপালগঞ্জে খুনি হাসিনার দালালেরা আমাদের উপরে আক্রমণ করেছে। অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে। অন্যদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া দাবি করেছেন, তিনি যতটুকু দেখেছেন, গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা পালন করেছে। তারা সফলভাবে সেখান থেকে প্রত্যেককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। তবে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সশস্ত্র হামলা করেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

এনসিপি’কে একা মনে হয়েছে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হচ্ছে যে নতুন এই দলটি সেখানে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে একলা হয়ে গেলে বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। কেননা সেখানে কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে বাধা পাওয়ায় জন্য দলটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বারবার দেয়া বক্তব্যে তাদের এমন অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। কারো কারো মতে, গোপালগঞ্জে যদি এতো সাংগঠনিক ভিত থাকতো তাহলে তো দলটির শীর্ষ জনপ্রিয় এসব নেতা সাজোয়া যানে করে এলাকা ছাড়তে হতো না। বিষয়টি অনেকের মনে হয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হেলিকপ্টারে করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো। কারো কারো অভিমত গোপালগঞ্জের এমন ঘটনায় কি প্রমাণিত হচ্ছে না যে ২০২৪ সালে জুলাইয়ে যাদের কথায়, বিবৃতিতে ডাকে কোটি জনতার ঢল নামে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সেই তাদেরকে এখন জনতা নয় প্রশাসনের ওপর ভর করতে হচ্ছে? 

কি বার্তা দিলেন নাহিদ

২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে নতুন এই রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। আর এই দলটির উদ্যোগে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। কিন্তু সেখানে দলটির যেভাবে পুরো ঘটনা একা একা মোকাবিলা করতে হয়েছে তা ছিল আলোচনার প্রধান বিষয়। এক বছর আগে যে দলটির নেতাকর্মীদের আন্দোলনে তোড়ে স্বৈরচার লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল, এখন সেই দলের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গোপালগঞ্জে কেনো এমন হাল হবে? কারো কারো মতে, এমন বিষয় নিয়ে এনসিপি নেতারাও ভাবতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে। তা না হলে এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কেনোই বা বলেছেন, ‘আমরা এক ধরনের ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি। আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় নানাভাবে বাধা আসছে।’আবার কেনোইবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে বললেন, ‘এক বছর যেতে না যেতেই ত্যাগ-তিতিক্ষা ভুলে যাচ্ছি। পরস্পর পরস্পরকে অপমানিত করার সুযোগ করছি। কেন জানি না, আমাদের মধ্যে সেই চর্চা ইদানীং শুরু হয়ে গেছে।’

পাশে ছিল না বিএনপি

এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের সাথে এনসিপি’র মতভেদে বা অনৈক্যের কারণে ঘটনার দিন গোপালগঞ্জে এনসিপির সে-ই কর্মসূচি একপ্রকার জনসমর্থনহীন ছিল বলা চলে। কেননা পুরো গোপালগঞ্জে যখন নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীরা ঘেরাও করে ফেলে, তখন এনসিপি পাশে বলা চলে প্রশাসনেরই শক্ত অবস্থান ছিল, সর্বস্তরের জনতার নয়। কারো কারো মতে, সেদিন গোপালগঞ্জে প্রশাসন শক্ত অবস্থান না নিলে ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনের ওই নেতারা জীবন নিয়ে ফিরে আসতেন কি-না সন্দিহান ছিল অনেকে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় না যে গোপালগঞ্জে এসনিপি নেতাদের নিজেদের দলের যেমন শক্ত অবস্থান ছিল না তেমনি তাদের প্রতি অন্যসব রাজনৈতিক সহানুভূতি বা ঐক্যবদ্ধ থাকার মেসেজও ছিল না। এমনকি গোপালগঞ্জে ডাকা পদযাত্রা ও পরে সমাবেশে সাধারণ জনগণের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়ভাবে কম। কারো কারো মতে, তাদের পাশে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকদের যেমন পাওয়া যায়নি তেমনি এনসিপি’র থিংক ট্যাঙ্ক বলে পরিচিত জামায়াত শিবিরের উপস্থিতিও চোখে পড়েনি। 

বিএনপিসহ বাকিরা ক্ষতিগ্রস্ত

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্যাশ করতে পারেনি বিএনপি বা অন্যদলগুলি। কেননা শোনা যায় আগামীতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে তাদের সাথে রাখা হবে এনসিপিকে। এমনটাই শোনা যায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্র থেকে। কিন্তু গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঘটনা রাজনীতিতে অন্যরকম বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা নানান কারণে এনসিপি এখন ইমেজ সঙ্কটে আছে। ফলে এমন দলকে পাশে নিয়ে ভবিষ্যতে বিএনপি কতটা পথ চলবে তা নিয়ে বেশ সন্দিহান। এদিক থেকে বিএনপির এখন অন্যরকম চিন্তা করবে কি-না সময় বলে দেবে। 

বাংলাদেশের ইমেজে আবার ধাক্কা

প্রায় দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশ ছিল গণতন্ত্রহীন। ছিল ফ্যাসিবাদের দখলে। রাজনৈতিক গুম, খুনের দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় বলে বলা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়। আশা ছিল বাংলাদেশে এখন আগের অবস্থা থাকবে না, হবে একটি অহিংসার বাংলাদেশ। কিন্তু গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ নিয়ে বাংলাদেশ আবার নানান ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কেননা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম একটি আশা ছিল ন্যায়বিচার। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম সরকার পতনের এক দফা দাবির ঘোষণার সময় ‘সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা’র কথা বলেছিলেন। গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মারা গেছেন। অথচ মাত্র একবছরই হয়নি এখন দেখা যাচ্ছে গত ৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি’র জুলাই পদযাত্রা ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হামলা, পরে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় নিহত চারজনের ময়ন-তদন্ত হলোই না। গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের ক্ষেত্রে (ইমন তালুকদার, সোহেল মোল্লা, রমজান কাজী ও দীপ্ত সাহা) সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়নি। এখন আবার বলা হচ্ছে গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের ময়না তদন্তের জন্য প্রয়োজনে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে। এটা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অন্যদিকে খবর বেরিযেছে যে, গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে চান না। ফলে কারো কারো মতে, এরধরনের পরিস্থিতি বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। কারো কারো ধারণা এই সময়ে এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ইমেজ সঙ্ক সৃষ্টি করবে। 

শেয়ার করুন