৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৮:০৭ অপরাহ্ন


অ্যাসাইলাম প্রার্থীরা আবেদন পেশ করার সময় সতর্ক হয়ে প্রসেস করুন
কোর্টে শুনানি ছাড়াই ডিপোর্টেশন!
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৫
কোর্টে শুনানি ছাড়াই ডিপোর্টেশন! ইমিগ্রেশন কোর্টে শুনানি ছাড়াই অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের ডিপোর্ট করা হচ্ছে (প্রতীকী ছবি)


আমেরিকায় অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। যেসব অ্যাসাইলাম প্রার্থী নিজ নিজ দেশে নির্যাতনের নজির এবং ভবিষ্যতে নির্যাতনের সম্ভাবনার বিশদ বিবরণ সহকারে অ্যাসাইলাম আবেদন করবে না, তাদের ইমিগ্রেশন জাজ কোর্টে কোনোরকম শুনানি না করেই ডিপোর্ট করতে পারবে।

বর্তমানে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক অ্যাসাইলাম মামলা স্থগিত রয়েছে। তাদের মধ্যে আবেদনকারীদের অনেকেই বিশদ বিবরণ না দিয়ে কিংবা পরে স্টেটমেন্ট দেবে বা আদৌ কোনো স্টেটমেন্ট না দিয়ে এবং নির্যাতনের অতীত ধরন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কোনোরূপ যুক্তি দাঁড় না করিয়ে অ্যাসাইলাম আবেদন পেশ করেছেন তাদের মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিগগিরই এ নিয়ে বিধিবিধান জারি করা হবে বলে একাধিক সূত্র ধরে বিভিন্ন প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আইনগতভাবে যুক্তিসিদ্ধ নয় এমন মামলা কোনো শুনানি ছাড়া বাদ দিতে জাজদের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যাতে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করে ব্যাকলগ কমানো যায়।

প্রথমে গত এপ্রিল মাসে ইমিগ্রেশন রিভিউয়ের জন্য নির্বাহী অফিসে প্রস্তাবিত পলিসি পেশ করা হয়। এ অফিস বিচার বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। বিচার বিভাগ নির্ধারণ করবে কারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট হতে পারে।

এমন ডিরেকটিভ বিচার বিভাগ দিতে পারে, যাতে ইমিগ্রেশন বিচারকরা যার ভিত্তিতে নির্ধারণ করবে, কারা শুনানি ব্যতিরেকে অ্যাসাইলাম পাওয়ার যোগ্য নয়। তারা এ সিদ্ধান্ত নেবে জটিল ও দীর্ঘ ফরম পূরণ করে যে অ্যাসাইলামের আবেদন করা হয়েছে তার ভিত্তিতে। অনেকে এই ফরম পূরণ করতে জানে না। অনেক আইনজ্ঞ আছেন, যারা ফরম পূরণ কিংবা মামলার বয়ান লিখতে পারেন না। তাদের মাধ্যমে যদি যেনতেন প্রকারে অ্যাসাইলাম চাওয়া হয় তা নাকচ হতে বাধ্য। আর বিচার বিভাগ এ ধরনের আবেদন দ্রুত বাদ দিয়ে অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়ায় সুরাহা করতে চায়। এমনকি যারা অ্যাসাইলাম চেয়েছেন তারা যদি ভিসা নিয়ে প্রবেশ করে তারপরও তাদের ডিপোর্ট করার কথা ভাবছেন যদি কোনো প্রকার অসংলগ্ন কিংবা দুর্বল দাবি নিয়ে অ্যাসাইলাম চাওয়া হয়। 

বর্তমানে অ্যাসাইলামসহ প্রায় ৪০ লাখ মামলা ইমিগ্রেশন রিভিউর নির্বাহী অফিসে (ইওআইআর) স্থগিত আছে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় শতাধিক নির্বাহী অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেছেন। বিচারক, আইনজ্ঞ ও দোভাষীদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। যাতে অ্যাসাইলাম শুনানি জোরেশোরে দ্রুততার মধ্যে নিষ্পত্তি করে নির্বাহী কর্মকর্তারাও এই সংখ্যা স্বল্পতা সত্ত্বেও সব বিষয় সমাধান করতে পারে।

১৯৮০ সাল থেকে অ্যাসাইলাম মামলা আমেরিকায় আইনের অংশ হয়। যারা স্বদেশে নির্যাতনের শিকার হবে তারা অ্যাসাইলাম চাইতে পারেন। 

আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন মনে করে অ্যাসাইলাম ইমিগ্রেশন কোর্টে সবচেয়ে দীর্ঘায়িত মামলা। এই মামলা প্রিপ্রেয়ার করতে সময় নেয় ৫০ থেকে ৭৫ ঘণ্টা। বর্তমানে নিউইয়র্কে অ্যাসাইলাম অফিসে ২০১৬ সালে যারা আবেদন করেছিলেন তাদের ডাকা হচ্ছে। তারপর আগে যে হারে অ্যাসাইলাম অফিসে মামলা অ্যাপ্রুভ করা হতো, এখন তা করা হয় না। অধিকাংশ মামলাই কোর্টে পাঠানো হয়। সেখানে কখন মামলার শুনানি হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রবীণ আইনজ্ঞ পাওয়া দুষ্কর। খুব ভালো মামলা না হলে প্রবীণ ল ইয়ার পাওয়া যায় না।

বর্তমান সমন্বয় সাধনের বিল (Reconciliation) কংগ্রেসে যেভাবে পাস হয়েছে, তাতে ১৪৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার অবৈধ অ্যাসাইলাম আবেদনকারী কিংবা বৈধ আবেদনকারী, যারা যথার্থ যুক্তি দেখাতে পারেনি মামলা দেওয়ার সময় তাদের ডিপোর্টেশনে ব্যয় করা হবে। 

এখন কংগ্রেসে ‘বিগ বিউটিফুল’ বিলে অ্যাসাইলাম আবেদনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে তা ছিল ১ হাজার ডলার পরে রুল জারির সময় কী করা হবে, তা বোঝা যায় না। অনেকে এই অর্থ দিয়ে আবেদন করতে পারবে না। আগে প্রথম ওয়ার্ক পারমিটে ফি লাগতো না। এখন প্রথম ওয়ার্ক পারমিটে ৫৫০ ডলার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যে সম্পর্কে বিধি আগামী ২০২৬ সালে চালু করা হবে। 

ডেমোক্র্যাটদের বিবেচ্য

ইতোমধ্যে কংগ্রেস অত্যন্ত নোংরামির সঙ্গে ইমিগ্রেশনকে অহেতুক ব্যবহার করছে। এক দশক আগে দক্ষিণ সীমান্তে, যারা আমেরিকা আসার জন্য জড়ো হয়েছিল, তারা মৌসুমি শ্রমিক। তারা অস্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য এক জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন। আর তা শুরু হয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে লেবার ভিসা না থাকার কারণে। অনেক অর্থনৈতিক ইমিগ্র্যান্ট অ্যাসাইলাম চাচ্ছেন। দেখা গেছে, কোভিড-১৯ শুরুর আগে ৮০ শতাংশ লোক সীমান্ত অতিক্রম করে এসে বৈধতা পেতো, এখন ২৫ শতাংশের বেশি পায় না। আমেরিকায় ইমিগ্রেশন প্রয়োজন; কিন্তু এখন ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে পেশিশক্তির ব্যবহার হচ্ছে বেশি। কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস নেই। অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বহিষ্কার করলে সমস্যায় সমাধান হবে না। বরং সীমান্তে অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়া আরো যুক্তিযুক্ত উপায়ে নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। আমেরিকার এ বিষয়ে দায়িত্ব আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিতরা যেমন এ দেশে আশ্রয় পেতে পারে, অন্যদিকে তেমনি এ দেশে যাতে তারা আশ্রয় থেকে বঞ্চিত না হয়।

আমাদের করণীয়

যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে। (ক) তাহলো- যথার্থ সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আশ্রয়ের আবেদন করা। (খ) সময় থাকলে পরিপূর্ণভাবে আবেদন পেশ করা। (গ) বিশদ বিবরণ দিয়ে আবেদন পেশ করা। যাতে ইমিগ্রেশন কোর্ট বলতে না পারে, শুনানির প্রয়োজন নেই। (ঘ) সীমান্ত দিয়ে যারা এসেছে, তাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। যেমন-আই-৫৮৯-এর সঙ্গে অ্যাসাইলামের জন্য পূর্ণ আবেদন পেশ করা। (ঙ) যথাসময়ে ‘আইস’-এ রিপোর্ট করা আর আমেরিকায় প্রবেশের এক বছরের মধ্যে আবেদন পেশ করা। (চ) যারা পরিপূর্ণভাবে আবেদন প্রস্তুত করতে পারে না, তাদের কাছ থেকে সতর্ক থাকা। 

অ্যাসাইলামের বিশাল অঙ্কের মধ্যে এখন হাবুডুবু খাচ্ছে সব অ্যাসাইলাম-প্রত্যাশী। এ অ্যাসাইলাম-প্রত্যাশীদের নিয়ে আজকের যে, প্রতিবেদন তা কমিউনিটির ভুক্তভোগীদের যথাযথভাবে লক্ষ করা উচিত। 

অ্যাসাইলাম প্রসেসিংয়ে যারা বৈধ, তাদের ব্যতিরেকে বর্তমানে ৮৩ লাখ(?) কাগজপত্রবিহীন ইমিগ্র্যান্ট আছেন আমেরিকার। এদের মধ্যে ১৫ লাখ বিচারাধীন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাদের অনেকেই ভয়ে সংকুচিত। প্রশাসনের চাপের মুখে ইমিগ্র্যান্টদের অবৈধ স্ট্যাটাসে বর্তমানে রেস্তোরাঁ কিংবা খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করছে। মাঠে ময়দানে যারা কাজ করতো, তাদের ৭০ শতাংশ শ্রমিক উধাও হয়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ শস্য পিক করা হয়নি। কাজেই সাপ্লাই না থাকাতে জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী এ পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, অনেক শ্রমিক মাইগ্র্যান্টকে কাজের সুযোগ দিয়ে লেবার ভিসা প্রদান করে অ্যাসাইলামের লাইন থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নেও সময়ের দরকার।

শেয়ার করুন