১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৩৯:০৮ পূর্বাহ্ন


বিতর্কিত রাজনৈতিক ইস্যু
মেটার বিরুদ্ধে মুসলিম কর্মীর ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
মেটার বিরুদ্ধে মুসলিম কর্মীর ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগে মামলা ফেসবুক


যুক্তরাষ্ট্রের টেক জায়ান্ট মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনক (ফেইসবুক)-এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় বৈষম্য এবং মুসলিম কর্মীর মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করার অভিযোগে গত ২৪ জুন টেক্সাসের ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন কর্মচারি মোহাম্মদ ফেরাস মাজিদ এবং কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস। মামলার বাদী মাজিদ ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মুসলিম, যিনি ২০১৮ সাল থেকে মেটাতে কর্মরত ছিলেন। তার দাবি, ফিলিস্তিনে মুসলিমদের ওপর চলমান নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করায় তাকে শাস্তিমূলক আচরণের শিকার হতে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত চাকরি হারাতে হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মেটা কর্তৃপক্ষ তার অভ্যন্তরীণ কর্মস্থল প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ার্কপ্লেস’ এবং ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া মাজিদের মতামত মুছে দিয়েছে, তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছে, ধর্মীয় প্রতীকসমূহ-যেমন প্যালেস্টাইনি পতাকা ও কেফিয়া (ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ) প্রদর্শনে বাধা দিয়েছে এবং এমন আচরণ করেছে যা পরিষ্কারভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিপন্থী। অন্যদিকে, মেটার অনেক অ-মুসলিম কর্মী ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলি জনগণের প্রতি সমর্থন বা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন নিয়ে নির্ভয়ে মতপ্রকাশ করলেও, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে করে স্পষ্টভাবে একটি পক্ষপাতদুষ্ট ও বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

বাদী ফেরাস মজিদ বলেন, মুসলিম হিসেবে বিশ্বব্যাপী উম্মাহর প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে, যা তাকে গাজায় মুসলিমদের ওপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বাধ্য করেছে। তিনি তার অফিস কক্ষে প্যালেস্টাইনি কেফিয়া প্রদর্শন করেন এবং ওয়ার্কপ্লেস -এ গাজার মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগণের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানান। এসব কাজকে মেটা ‘বিতর্কিত রাজনৈতিক ইস্যু’ বলে অভিহিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, যদিও ঠিক একই রকম পরিস্থিতিতে অ-মুসলিম কর্মীদের বক্তব্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মাজিদের অভিযোগ, তিনি গাজায় মুসলিমদের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে পোস্ট করেছিলেন, যা সম্পূর্ণভাবে তার ধর্মীয় অনুভূতি থেকে উৎসারিত। কিন্তু একই সময়ে মেটার অনেক অমুসলিম কর্মচারি ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের পরিস্থিতি কিংবা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ্যে মতামত প্রকাশ করলেও, তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে স্পষ্টভাবে একটি দ্বৈত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মেটা যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন এবং টেক্সাস লেবার কোড লঙ্ঘন করেছে। মেটা তার তথাকথিত নিরপেক্ষ নীতিমালাগুলোর অপব্যবহার করে মুসলিম কর্মীদের মতপ্রকাশ দমন করেছে, যার ফলে তা এক ধরনের গোপন বৈষম্য তৈরি করেছে। একইসঙ্গে, একজন মুসলিম কর্মী হিসেবে মাজিদের সঙ্গে সরাসরি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

ফেরাস মাজিদ মামলায় দাবি করেছেন, ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন মুসলিমের ধর্মীয় দায়িত্ব এবং কোরআনের সূরা আন-নিসা (৪:১৩৫) ও বিভিন্ন হাদিসেও তার প্রতিফলন রয়েছে। তাই তার এই প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশ কেবল সাংবিধানিক অধিকার নয়, বরং একটি ধর্মীয় কর্তব্য। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, মেটাকে যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ধর্মীয় বৈষম্য থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়, তার বিরুদ্ধে নেয়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্তসমূহ ও নেতিবাচক রেকর্ড মুছে ফেলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ চালু করা হয় এবং ফেরাস মাজিদ যেন উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও চাকরিতে পুনর্বহাল (বা বিকল্পভাবে ‘ফ্রন্ট-পে’ ও মানসিক ক্ষতিপূরণ) পান।

মামলাটি বর্তমানে টেক্সাসের পশ্চিম জেলা আদালতের আওতায় বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার রায় শুধু ফেরাস মাজিদের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এখন পর্যন্ত মেটা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মামলাটি নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি।

শেয়ার করুন