নিউইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১ মিলিয়ন মুসলমান রয়েছেন। যার মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার ভোটার রয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির ভোটারের ১২ শতাংশ হলেন মুসলমান। কিন্তু আমরা ঐক্যবদ্ধ নই। গত নির্বাচনে মুসলিম ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ থাকলে মেয়রসহ সিটির গুরুত্বপূর্ণ সব আসনেই বিজয়ের ক্ষেত্রে নেয়ামক শক্তিতে পরিণত হতে পারবেন অর্থাৎ নিজেদের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে কখনোই অবহেলা-অবজ্ঞার সম্মুখীন হবেন না। এবারের নির্বাচনে আমরা জয়ী হওয়ার জন্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এ কথাগুলো বলেছেন, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানি। তিনি আরো বলেন, একসময় আমার সঙ্গে এন্ড্রু কুমোর ভোটের ব্যবধান অনেক ছিল। গত সপ্তাহে এই ব্যবধান কমেছেন ১২ শতাংশ এবং বর্তমান সপ্তাহে ভোটের ব্যবধান মাত্র ৮ শতাংশ। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আমি নির্বাচনে জয়লাভ করবো। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র এরিখ অ্যাডামস এবং এন্ড্রু কুমোর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুইজনই দুর্নীতিবাজ। আমরা নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দা কিন্তু সিটি হলের বাসিন্দা আমরা হতে পারিনি। আগামী দিনে আমরা সিটি হলের বাসিন্দা হতে চাই এবং ইমিগ্র্যান্ট, মুসলিম কমিউনিটি এবং সিটির গরিব মানুষের পক্ষে কাজ করতে চাই। তিনি সবাইকে আমাগী ২৪ জুন ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
গত ২৯ মে অপরাহ্নে জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের বক্তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে এই প্রথম একজন মুসলমান ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মেয়র পদে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং সাম্প্রতিক প্রায় সব জনমত জরিপেই তার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সে আলোকে সব মুসলমান ভোটার ঐক্যবদ্ধ থাকলে দক্ষিণ এশিয়ান ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হবেন জোহরান মামদানি। ‘অ্যাম্পাওয়ারিং মুসলিমস : আওয়ার চয়েস ফর নিউইয়র্ক সিটি ইলেকশন’ শিরোনামের এই সমাবেশ থেকে সবাই সমস্বরে উচ্চারণ করেন জোহরান মামদানিকে বিয়ের মুকুট পরাতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির মেম্বার হিসেবে শুধু মুসলিম কমিউনিটিই নয়, অভিবাসী সমাজে জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্বে পরিচিতি লাভকারী জোহরান মামদানির মতো সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে পুনরায় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অবতীর্ণ জুমানি উইলিয়ামস এবং সিটি কম্পট্রোলার জাস্টিন ব্র্যানানকেও দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়েছেন মুসলিম আমেরিকানরা।
রাইজ আপ এনওয়াইসি, মুসলিম ভোট প্রজেক্ট, মুসলিম অ্যাকশন কোয়ালিশন, মুসলিম কমিউনিটি ফোরাম, মুনা এপিজে অ্যাকশন, বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ (বাগ), জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সম্মিলিত উদ্যোগে সিটির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি, পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানি উইলিয়াম, সিটি কম্পট্রোলার জাস্টিন ব্র্যানানের সমর্থনে আয়োজিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গিয়াস আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সহ-সভাপতি এ এফ মিসবাহউজ্জামান, বাকের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন, মুনার আবু সামিয়া সিরাজুল ইসলাম, রাইজ আপের শামসুল হক, ব্যানানের প্রতিনিধি কাজী তোজওয়ার, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম প্রমুখ।
জুমানি উইলিয়াম আগামী ২৪ জুন তাদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, তার কারণে আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট ও মুসলিম কমিউনিটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানান।
এ সময় বক্তব্যকালে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন, তথা জেবিবিএর প্রেসিডেন্ট ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এবং বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন শাহনেওয়াজ বলেছেন, ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ বিভিন্ন আসনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে সত্যিকারার্থে যারা মুসলমান, তথা অভিবাসী সমাজের বন্ধু তাদের বিজয় দিতে হবে। এটা সময়ের দাবি। তারা আরো উল্লেখ করেন, সিটিজেনশিপ নিয়েছেন, কিন্তু ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি, তাদের সময়ক্ষেপণের অবকাশ নেই। সময় ফুরিয়ে যায়নি। সত্বর তালিকাভুক্ত হোন এবং কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন। আগাম ভোটের সুযোগও নিতে পারেন সবাই। উল্লেখ্য, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের এ নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাটকে লড়তে হবে রিপাবলিকানসহ অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে ৪ নভেম্বরের চূড়ান্ত নির্বাচনে।
দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় যাবৎ এই সিটিতে বসবাসরত তারেক রহমান, আরমান চৌধুরী, আফতাব মান্নান, ডা. আব্দুস সালাম মুসা, সাবির খান, ডা. জুন্নন চৌধুরী, শামসুল হক, আব্দুল কাদের, জ্যাকসন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান প্রমুখ এ সময় বলেন, এবারের নির্বাচনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পছন্দের প্রার্থীদের বিজয় দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তাকে সুসংহত করার পথ বেয়ে সবাইকে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথও সুগম করতে হবে। এজন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।