হোয়াইট কলার অপরাধ ও করপোরেট দুর্নীতির তদন্তকে কম গুরুত্ব দিয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর দেশব্যাপী ফিল্ড অফিসগুলোকে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এজেন্টকে অভিবাসন আইন প্রয়োগে নিযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, এই নির্দেশনা মার্কিন আইন প্রয়োগ কাঠামোয় একটি বড় রদবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা সন্ত্রাসবিরোধী, গুপ্তচরবৃত্তি এবং আর্থিক জালিয়াতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত কার্যক্রমে বরাদ্দ সংস্থান কমিয়ে দেবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন দমনে আরো কঠোর নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এই পরিবর্তন এসেছে। মার্কিন বিচার বিভাগ ইতোমধ্যে এফবিআইয়ের বাজেট ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে, হোয়াইট-কলার ও কর্পোরেট অপরাধ তদন্তে অগ্রাধিকার কমানোর নির্দেশনাও জারি হয়েছে। এক অভ্যন্তরীণ স্মারকে এফবিআই কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, এই সপ্তাহ থেকে অভিবাসন সংক্রান্ত কার্যক্রমে গতি আনতে হবে। বিচার বিভাগ প্রত্যাশা করছে, এজেন্টদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। সূত্র অনুযায়ী, এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এই সপ্তাহেই ৬৬৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আগাম অবসরগ্রহণের আবেদন অনুমোদন করেছেন।
নতুন নির্দেশনার আওতায় দেশের ২৫টি বৃহৎ ফিল্ড অফিসে ৪৫ শতাংশ এজেন্টকে অভিবাসন কার্যক্রমে পূর্ণ সময়ে নিযুক্ত করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, আটলান্টা অফিসে ৬৭ জন এজেন্ট সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা অভিবাসন ও বিতাড়ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবেন। লস অ্যাঞ্জেলেস অফিস ৯টি পৃথক স্কোয়াড গঠন করছে, যারা এমন অভিবাসীদের খুঁজে বের করবে যারা ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করেছেন যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ না-ও থাকে। এক ফিল্ড অফিস কর্মকর্তা বলেন, এটা আমাদের মূল কাজ নয়। এটা একটা ভুল ধারণা। অভিবাসন অভিযানগুলো এফবিআইয়ের সুসংগঠিত অপারেশনের মতো নয়। তিনি জানান, অনেক এজেন্ট এই নতুন নির্দেশনার বিরোধিতা করছেন, তবে প্রতিশোধের আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
এদিকে বিচার বিভাগের ক্রিমিনাল ডিভিশনের প্রধান ম্যাথিউ গালেওত্তি এক স্মারকে করপোরেট অপরাধ তদন্তে যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। স্মারকে বলা হয়েছে, সব করপোরেট অনিয়মের জন্য ফেডারেল অপরাধ মামলা আবশ্যক নয়। তিনি তদন্তকারীদের নির্দেশ দিয়েছেন, কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পূর্বে সম্পাদিত দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে অপ্রয়োজনীয় হলে তা বাতিল করার জন্য। বর্তমানে এফবিআইয়ের যেসব সংস্থান সন্ত্রাসবাদ, গুপ্তচরবৃত্তি এবং আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করে, সেগুলো এখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, এই রূপান্তর এফবিআইয়ের ঐতিহ্যবাহী ভূমিকার পরিপন্থী এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন বিতাড়নের ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে, অপরাধের রেকর্ড থাকা হাজার হাজার অভিবাসী এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর এই অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এফবিআই এজেন্টদের মূল দায়িত্ব- যেমন সন্ত্রাসবাদ দমন, গোয়েন্দা সুরক্ষা এবং আর্থিক অপরাধ তদৗল্প থেকে সরে এসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে নিয়োগ দেওয়া একটি গুরুতর ও বিপজ্জনক নজির। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার কাঠামোকেই দুর্বল করছে না, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফেডারেল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অপব্যবহারকেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে।
এফবিআই যেসব অপরাধ তদন্তে পারদর্শী যেমন সাইবার অপরাধ, জালিয়াতি, করপোরেট দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সেখান থেকে সরে এসে অভিবাসীদের ওপর নজরদারিতে মনোনিবেশ করার ফলে পুরো সংস্থার কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা, দেশীয় সাইবার হুমকি ও কর্পোরেট দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে এ ধরনের নীতিগত পরিবর্তন জননিরাপত্তার চেয়ে রাজনৈতিক প্রদর্শনীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এফবিআইয়ের ইতিহাসে এটি এক নজিরবিহীন পরিবর্তন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক অগ্রাধিকারের নাটকীয় রূপান্তরের প্রতিফলন।