৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:২৬:০৬ অপরাহ্ন


মাহমুদ খালিলের মুক্তির দাবিতে ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ : ৯৮ জন আটক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
মাহমুদ খালিলের মুক্তির দাবিতে ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ : ৯৮ জন আটক নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারের ভেতরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র‍্যাজুয়েট ছাত্র মাহমুদ খালিলের সমর্থনে জুইশ ভয়েস ফর পিস সংগঠনের প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ করেন, এরপর কিছু প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করা হয় (ইনসার্ট)


নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে গত ১৩ মার্চ ট্রাম্প টাওয়ারের ভেতরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র‍্যাজুয়েট ছাত্র মাহমুদ খালিলের মুক্তির দাবিতে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খালিলের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। পুলিশ ট্রাম্প টাওয়ারের ভেতর থেকে প্রায় ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। জুইশ ভয়েস ফর পিস প্রতিবাদের ডাক দেয়। বিক্ষোভকারীরা সেদিন লাল শার্ট পরিহিত ছিলেন, যাতে লেখা ছিল ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করো এবং আমাদের নামে নয়। এদের অধিকাংশই ছিলেন জুইশ ভয়েস ফর পিস (যেভিপি) সংগঠনের সদস্য, একটি ইহুদি সংগঠন যারা ইসরায়েল সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পরিচিত। তারা ট্রাম্প টাওয়ারের গোল্ডেন এস্কেলেটরসের কাছে দাঁড়িয়ে ‘মাহমুদকে মুক্তি দাও! তাদের সবাইকে মুক্তি দাও!’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে তারা সিট-ইন প্রতিবাদ শুরু করেন, যেখানে তারা লবির ভেতর বসে পড়েন এবং পুলিশ তাদের বারবার চলে যেতে বললেও তারা সরে দাঁড়াননি।

বিক্ষোভকারীরা একটি বিশাল ব্যানার উন্মোচন করেন, যার ওপর লেখা ছিল ইহুদিরা বলে মাহমুদ ও ফিলিস্তিনকে মুক্তি দাও এবং নাজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, ছাত্রদের বিরুদ্ধে নয়। তারা বলেন, এই প্রতিবাদটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো একটি পদক্ষেপ। বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ডেবরা উইঙ্গার, অভিনেতা আর্লিস হাওয়ার্ড, মর্গান স্পেক্টর এবং নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের সিটি কাউন্সিল সদস্য আলেক্সা অ্যাভিলেস। উইঙ্গার বলেন, আমি এখানে আমার অধিকার রক্ষার জন্য দাঁড়িয়েছি, এবং মাহমুদ খালিলের জন্য, যাকে বেআইনি ভাবে আটক করা হয়েছে এবং একটি অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটি কি আমেরিকা মনে হচ্ছে? তিনি আরো বলেন, এই প্রশাসন ইহুদি নিরাপত্তার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না এবং তারা অ্যান্টিসেমিটিজমকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার জন্য ব্যবহার করছে।

মাহমুদ খালিল, যিনি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এবং গ্রিন কার্ডহোল্ডার, কয়েকদিন আগে ৮ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে আটক হন। তাকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্নিংসাইড হাইটসে তার অ্যাপার্টমেন্টে গ্রেফতার করা হয়। খালিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফিলিস্তিনি আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানানো এবং হামাসের প্রোপাগান্ডা বিতরণের পরিকল্পনা ছিল। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার গ্রেফতারকে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি অত্যাচারের অংশ হিসেবে দেখছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘এটি বহু গ্রেফতারের মধ্যে প্রথম’ এবং তিনি হুমকি দিয়েছেন যে, ছাত্ররা যারা ‘প্রো-টেরোরিস্ট, এন্টি-ইসরায়েল, এন্টি-আমেরিকান’ কার্যকলাপে জড়িত, তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।

প্রতিবাদকারীদের অবস্থান নিতে দেখে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং বিক্ষোভকারীদের চলে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারা সরে না দাঁড়ালে, পুলিশ ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে অবৈধ প্রবেশ,বাধা সৃষ্টি এবং গ্রেফতার প্রতিরোধ।

মাহমুদ খালিলের আইনজীবীরা তার মুক্তির জন্য লড়াই করছেন এবং তাদের দাবি, তার গ্রেফতার সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল। এছাড়া তারা জানিয়েছেন, খালিলের স্ত্রী, যিনি আট মাসের গর্ভবতী, তার স্বামীকে আটক করা দেখে আতঙ্কিত ছিলেন, এবং তাকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য পুলিশ হুমকি দেয়। গত ১২ মার্চ, একটি ফেডারেল আদালত খালিলের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করে। ম্যানহাটন ফেডারেল বিচারক জেসি ফুরম্যানের আদেশে খালিলকে লুইজিয়ানায় আটকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন। বিচারকের সামনে উভয় পক্ষের পক্ষ থেকে আইনি মোশন জমা দেয়া হয়েছে, এবং এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

নিউইয়র্ক সিটি ডেপুটি মেয়র কেজ ডাউথ্রি জানিয়েছেন, বিক্ষোভের সময় কেউ আহত হয়নি এবং শহর প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই ঘটনাটি পর্যালোচনা করবো এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেজন্য আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হবে। জুইশ ভয়েস ফর পিস সংগঠনের সদস্যরা বলেছেন, তারা এই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন যতদিন না মাহমুদ খালিল মুক্তি পাচ্ছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অবসান হচ্ছে। তাদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি যে পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে, তা মানবাধিকারের প্রতি পরিপন্থী এবং এটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদ করছি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদের আওয়াজ তুলবো।

শেয়ার করুন