৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪২:৪১ অপরাহ্ন


সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৫
সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম  কিছুই জানে না!


সুন্দরবন দিবস- ২০২৫ পালন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন,

আজকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস অথচ তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
 


শুক্রবার সকাল  জাতীয় জাদুঘরের সামনে, শাহবাগ, ঢাকায় “সুন্দরবন বিনাসী গৃহীত সকল প্রকল্প বন্ধের” দাবীতে এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।

বাপা সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাপা নির্বাহী সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ড. মাহবুব হোসেন, বাপা নির্বাহী সদস্য ড. হালিম দাদ খান, মানবাধিকার কর্মী দিপায়ন খীসা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও শিল্পি, আবু সেলিম, সিডিপি’র কর্মকর্তা এ্যডওয়ার্ড মধু, গ্রীন ভয়েস কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম রাতুল ও তিতলী নাজনিন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সহসমন্বয়ক আশিকুর রহমান জিম, গ্রীন ভয়েস ইডেন শাখার সমন্বয়ক নুশরাত তৃষা, গ্রীন ভয়েস বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ শাখার সমন্বয়ক রাফিকা ইসলাম সেতু প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম, হাজি শেখ আনছার আলীসহ বাপা’র অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পরিবেশবাদী এবং সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও গ্রীন ভয়েস বিভিন্ন বিশ্বাদ্যালয় ও কলেজ শাখার শিক্ষার্থী সদস্যগণ।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্টে বনভূমির পরিমাণ ২৫% শতাংশ থাকলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা কমতে কমতে ১০% শতাংশ অবশিষ্ট আছে; যার ফলে দেশে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ ধেয়ে আসছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো দেশের উন্নয়ন করতে তাদের বনভূমির উপর হাত দেয়না। অথচ আমাদের দেশের উন্নয়ন গুলোই প্রকৃতিকে ধংস করে গড়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রথমেই দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় হাত দেওয়া উচিত ছিল। বিগত সময়ে যারা বন, ভূমি ও নদী খেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জাকির হোসেন বলেন, উন্নয়নের দর্শন হবে দেশের বন, ভূমি ও নদী রক্ষার। সুন্দরবনকে রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বনের ভিতর রিসোর্টসহ নানা ধরণের আবাসান গড়ে তোলা হচ্ছে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাপা সুন্দরবন সম্মেলন করে; এসময় থেকে বাপা প্রতিবিছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তিনি সুন্দরবন দিবসকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।

মো. আলমগীর কবির বলেন, বিতাড়িত আওয়ামী সরকারের গৃহীত সুন্দরবন বিনাশী রাপমপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে সুনদরবনের চরিত্র বিনষ্ট হয়েছে। বনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এই বনের সাথে যাদের জীবন জীবিকা জড়িত তারা আজ মানবেতর দিনাতিপাত করছে। নদী ও খালগুলোতে মাছ পাওয়া যায় না, এলাকাটা সবসময় ধোয়াচ্ছন্ন থাকে, অত্রএলাকার গাছের পাতার উপর ছাইয়ের স্তর পড়ার ফলে গাছ জীবন চক্র ভিষণভাবে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। মাওয়ালীরা মধু পায়না, মাছের প্রজনন নষ্ট হয়েছে, বন্যপ্রাণীর সংখ্যা অনেক কমেছে। জলবায়ুর বিরুপ আচরণ দেখা দিয়েছে অতি গরম অনুভূত হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন অন্তর্বতীকালীন সরকার বিগত সরকারের করে যাওয়া অনেক দূর্নীতির সংস্কার করছে, পরিবেশের অনেক যায়গায় সংস্কার কাজ চলমান কিন্তু বিগত সরকারের সুন্দরবন ধংসের সংস্কারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না যা পরিবেশবাদীদের ভাবিয়ে তুলেছে।  

মিহির বিশ্বাস বলেন, সুন্দরবন দেশের প্রাকৃতিক ঢাল ও সার্বভৌমত্ত রক্ষার প্রতীক। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে এ দেশকে রক্ষা করছে অথচ সেই বনেই সরকারিভাবে ধংস চালানো হচ্ছে বছরের পর বছর। এ বনের মাধ্যমেই লবন পানির ভারাসাম্য রক্ষিত হয়।



ড. মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা বিগত ২০ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। কারণ এ বন ধংস হয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। বন ধংসের বিপরিতে সরকার কাজ করার কথা থাকলেও বিতাড়িত আওয়ামী সরকার নিজেই এ বন ধংস করেছে।

ড. হালিম দাদ খান বলেন, বিশ্ব ভালবাসা দিবেসে আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি প্রকৃতিকে ভালবাসার জন্য সুন্দরবনকে ভালবাসার জন্য। আসুন আমরা সাই মিলে দেশের প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষার প্রতিজ্ঞা করি।

দিপায়ন খীসা বলেন, দেশের সুন্দরবনকে রক্ষায় বর্তমান সরকার বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অন্যান্য সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি দিলেও দেশের ফুসফুস সুন্দরবনকে রক্ষায় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তাই তিনি সুন্দরবনে অবস্থিত ক্ষতিকর সকল স্থাপনা অপসারণ করে সুন্দরবনকে রক্ষার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

তরিকুল ইসলাম রাতুল বলেন, সুন্দরবন ধংসকারিরা বিভিন্ন অজুহাতে এ বনকে ধংস করেছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এই জাতীয় ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।
 
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সহসমন্বয়ক আশিকুর রহমান জিম বলেন, আজকে সুন্দরবন দিবস অথচ তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে কিছুই জানে না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলো শুধু নিজেদের ও নিজ দলের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছে। দেশের ফুসফুস সুন্দরবন রক্ষায় কোন ধরণের ভূমিকা পালন করেনি। ২০১৮ সালের পরে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ভারতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে অথচা বংলাদেশে বাড়েনি। কেন বাড়েনি এবিষয়েও কোন গবেষণা সরকারিভাবে করা হয়েছি কি? সুন্দরবনে নতুন ৩২৬টি কারখানা স্থাপন বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন পুরোপুরিভাবে ধংসের দিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

সুন্দরবন দিবসে আজ আমাদের দাবীসমূহ :

(১). ১৪ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় সুন্দরবন রক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে
(২). উজানের বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সফল আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনের জন্য মিঠা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে
(৩). সুন্দরবন বিনাশী গৃহীত সকল প্রকল্প বন্ধ করতে হবে
(৪). সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী বা অভ্যন্তরের নির্মাণাধীন ও পরিকল্পিত সরকারী-বেসরকারী সব প্রকল্প ও স্থাপনা নির্মাণ
     অবিলম্বে বন্ধ ও  অপসারণ করতে হবে
(৫). বনের পাশ ঘেঁষে বরাদ্দকৃত সকল শিল্প ও আবাসন প্লট বন্ধ করতে হবে
(৬). অপরিকল্পিত গাছকাটা, পশু-পাখী হত্যা ও মাছ ধরা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, বনের গাছে অগ্নি সংযোগ এবং
     বিষ প্রয়োগে জলজ প্রাণী ও মাছ হত্যা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে
(৭). সুন্দরবনের মধ্যকার নৌ-চলাচল হ্রাস, নৌ-দূর্ঘটনাপ্রশমণ, নদীর তলায় ডুবে থাকা নৌ-যান অপসারণ করতে হবে (৮). সুন্দরবনের সকল পোল্ডার অপসারণ করতে হবে
(৯).  বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাজের পরিধি, একাগ্রতা, সক্ষমতা  ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে
(১০). কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

শেয়ার করুন