৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫২:১৯ অপরাহ্ন


হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
মুসলিম ও আরব ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগে সমঝোতা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
মুসলিম ও আরব ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগে সমঝোতা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়


২০২৪ সালে ফিলিস্তিনি, মুসলিম এবং আরব ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হয়রানি অভিযোগে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দফতরের সিভিল রাইটস অফিসের (ওসিআর) সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। গত ১৭ জানুয়ারি সমাধানটি চূড়ান্ত হয়। মুসলিম লিগ্যাল ফান্ড অব আমেরিকা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি, মুসলিম এবং আরব ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হয়রানি অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল। তারা অভিযোগ করেছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনি, মুসলিম এবং আরব ছাত্রদের বিরুদ্ধে হয়রানির ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। এ অভিযোগের ভিত্তিতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দফতরের সিভিল রাইটস অফিসের (ওসিআর) হার্ভার্ডের নন-ডিসক্রিমিনেশন এবং অ্যান্টি-বুলিয়িং নীতিমালা পর্যালোচনা করে এবং বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ রেকর্ডও পরীক্ষা করে। তারা দেখতে পায়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক রিপোর্ট সংগ্রহ করলেও সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি এবং বৈষম্য প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দফতরের সিভিল রাইটস অফিসের (ওসিআর) জানায় যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ‘যত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি’ সেগুলোর প্রতি, যা বৈষম্য ও শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। তারা বিশেষভাবে হার্ভার্ডের নন-ডিসক্রিমিনেশন এবং অ্যান্টি-বুলিয়িং নীতিমালা নীতির সমালোচনা করেছে, যেখানে অভিযোগগুলো যদি অন্য কোনো ফোরামে সমাধান করা হয়ে থাকে তবে সেগুলো বাতিল করা যেতে পারে, যা তাত্ত্বিকভাবে টাইটেল ফাইভ অনুসারে বৈষম্য তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ সমাধানের ফলে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন নীতিগুলো সংশোধন করতে হবে, যেন প্রতিবেদনগুলোকে আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং তদন্ত করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের কর্মীদের টাইটেল ফাইভ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অভিযোগের সঠিকভাবে রেকর্ড রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই সমাধানটি সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইট বা মিডিয়ার মাধ্যমে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র, জেসন এ নিউটন বলেছেন, হার্ভার্ড সবার জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাগতজনক পরিবেশ বজায় রাখার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এ সমঝোতায় কোনো অপরাধ বা দোষ স্বীকার করেনি।

এদিকে মুসলিম লিগ্যাল ফান্ড অব আমেরিকার সিভিল লিটিগেশন সিনিয়র অ্যাটর্নি, চেলসিয়া জি গ্লোভারের মতে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো প্রেস রিলিজ না দেওয়াটা ছিল ‘কাপুরুষতা’ এবং তিনি বলেছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি এ বিষয়ে কথা বলতে চায় না, তবে তা প্রয়োজনীয়। এ সমাধানের শর্ত অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের নীতিমালার আপডেট করা এবং আরো কার্যকরভাবে অভিযোগের রেকর্ড রাখা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২৪ সালের মে মাসের মধ্যে এ পরিবর্তনগুলো করা এবং ৩০ জুনের মধ্যে কর্মীদের টাইটেল ফাইভ প্রশিক্ষণ সাপেক্ষে সঠিক তথ্য প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। যদিও হার্ভার্ড এটি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেনি, এ সমঝোতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দফতরের সিভিল রাইটস অফিসের (ওসিআর) হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য নীতি এখন আরো শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, যাতে কোনো ছাত্রই বৈষম্যের শিকার না হন।

এ সমঝোতা এবং সংশোধনী নীতিমালার মাধ্যমে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তার বৈষম্য রোধ ও সঠিক তদন্ত প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অপরাধ স্বীকার করেনি, তবে এটি নিশ্চিত করেছে যে ভবিষ্যতে আরব, মুসলিম এবং ফিলিস্তিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে বৈষম্য প্রতিরোধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিভিল রাইটস অফিসের হস্তক্ষেপ এবং এ সমাধানটির মাধ্যমে হার্ভার্ডের নীতি এখন আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সুবিবেচনাপূর্ণ হয়ে উঠবে, যা সব ছাত্রের জন্য নিরাপদ ও সমানাধিকারপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এ ধরনের পরিবর্তন সমাজের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে।

শেয়ার করুন