৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২২:১৭ অপরাহ্ন


ড. ইউনূসের সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ নিয়ে নানা জল্পনা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
ড. ইউনূসের সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ নিয়ে নানা জল্পনা ড. মূহাম্মদ ইউনূস


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সর্ব্বোচ সতর্কতার নির্দেশ নিয়ে সারাদেশে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এধরনের নির্দেশ কি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিকে ঠেকাতে দেয়া হলো? নাকি কথায় কথায় মাঠে নেমে একশ্রেণীর দাবি-দাওয়া হাজিরকারীদের পাশাপাশি দলীয় ব্যনারে সারাদেশে দখলদার আর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনের আভাস দিলেন তিনি? কারো কারো মতে, হার্ড লাইনের আভাস দিলেন, যারা মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার আসলে কিছুই করতে পারবে না বা পারছে না? এ-নিয়ে চলছে সারাদেশে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

আগে দেখা যাক প্রধান উপদেষ্টা কি বললেন

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিছু বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যত বক্তব্য দিয়েছেন তার মধ্যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সোমবারের বক্তব্য কঠোর ও ইঙ্গিতপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওই বক্তব্যের চুম্বক অংশে আছে খুবই স্পর্শকাতর। তিনি বলেছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। এর পাশাপাশি তিনি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন, যা আরো ইঙ্গিতপূর্ণ। তিনি আরও যোগ করেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আমাদের অবশ্যই একটি কমান্ড সেন্টার বা কমান্ড সদরদপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে।

বিশ্লেষণে কি বলেন

প্রথমেই ধরেই নেয়া যায় তিনি গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগবেই উদ্দেশ্য করেই এমন কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা দলটির পক্ষ থেকে এ-ই প্রথম রাজনৈতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। হরতাল-অবরোধসহ চলতি ফেব্রুয়ারি জুড়ে দলটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এমন কর্মসূচি ঘোষণার আগেই সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে নাটোরের লালপুরে আওয়ামী লীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। পাবনার ভাংগুড়ায় একটি ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের পুকুরপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি’র সমর্থক। ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাম্প্রতি কর্মকান্ড ও কর্মসূচিকেই টার্গেট করেই তিনি এমন কঠোরতার কথা বলেছেন। কেননা প্রধান উপদেষ্টা-তো সর্তক করেই আভাস দিয়ে জানিয়ে দিলেন। প্রধান উপদেষ্টা খবর দিলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে।

এছাড়াও

তবে এর পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি কারণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন বলে শোনা যায়। তা-র মধ্যে হলো রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি’র একটি অংশ সারাদেশে দখল, চাঁদাবাজিতে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে গেছে। কোনোভাবেই প্রশাসন শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যদিও বিএনপি’র হাই কমান্ড দখলদার আর চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোরতা দেখাচ্ছে। তারপরে-ও দলীয় ব্যানারে আগামীতে বিএনপি’ই ক্ষমতা আসবে বা আসতে যাচ্ছে-এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করেছে। আর এক্ষেত্রে সারাদেশে দখল, চাঁদাবাজিদের পাকড়াও করতে গেলেই ফুসে উঠছে তারা, প্রশাসনকে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগেরই দোসর দালাল বলে আখ্যায়িত করে তাদের কোনঠাসা করে ফেলছে। তবে সারাদেশে দখল, চাঁদাবাজি কেবল বিএনপি’র একটি অংশই জড়িত নয়। ভাগবাটোয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দখল, চাঁদাবাজিদের সাথে জামায়াতও থাকে। তবে তারা বিএনপি’কে ভাগ দিয়ে দেয় দখল, চাদার বখরা। ধারণা করা হচ্ছে, এদের রুখতে অতীতের চেয়ে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে ড. ইউনুসের প্রশাসন। কেননা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ চালাতে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে যাতে পবিত্র রমজানে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়। কেননা এটা সত্য যে সব আমলেই চাঁদাবাজ আর সিন্ডিকেটের কারণেই খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যাচ্ছে না। 

আরও কারণ..

এর পাশাপাশি সারা দেশে শিক্ষার্থীরা কথায় কথায় বিভিন্ন ইস্যুত রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এমন দাবির মুখে রাজধানী গত কয়েকমাস ধরে এক প্রকার অচল হয়ে উঠছে দফায় দফায়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এমন সুযোগ হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণীর বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে এসব দাবি এখন কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব না জেনেও দিনের পর দিন তারা রাস্তাঘাট দখল করে রাজধানীতে একটি অসহনীয় পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছে। জনমনে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হচ্ছে যে, ড. ইউনুস রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ হয়ে পড়ছে। আর এমন প্রচারণা যোগ দিচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আর একারণেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। 

শেষ কথা

এতসব কারণের পরেও আরো কারণ রয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশের পেছনে। বলা হচ্ছে ড. ইউনূস পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ গঠনের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা শুধু চাঁদাবাজ দাগাতেই নয়। এর পেছনেও রয়েছে আরও কারণ। এর পেছনে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের পূর্ব-পরিস্থিতি নিযন্ত্রণের জন্য অথবা ভূ-রাজনৈতিকও হতে পারে। কেননা পাশে অশান্ত মিয়ানমার ইস্যুটি এখনো জলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো। আর এজন্য হয়তোবা প্রধান উপদেষ্টা ‘নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছেন, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

শেয়ার করুন