১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:১১:০২ পূর্বাহ্ন


আমরা ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যার সমাধান পরিকল্পনায় ঘুরপাক খাচ্ছি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
আমরা ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যার সমাধান পরিকল্পনায় ঘুরপাক খাচ্ছি ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে


পৃথিবীর উন্নত ও আধুনিক শহরগুলো নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমস্যা সমাধানের কৌশল থেকে সরে এসেছে। অথচ আমরা এখন পরিবহন সমস্যার সমাধান কৌশল হিসেবে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক পরিবহন সমাধান পরিকল্পনা করে যাচ্ছি, যা ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে। পরিবহন-ভূমি ব্যবহার-পরিবেশ-জনজীবন এর পারস্পরিক সম্পর্কজনিত প্রভাব বিশ্লেষণ না করেই ব্যক্তিগত গাড়িকেন্দ্রিক নেয়া এই সংযোগ সড়কটি সার্বিক জনস্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাতে গিয়ে এসব কথা বলা হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ এর কারণে হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্কের পরিবেশ ইতিমধ্যেই ধ্বংসের পাশাপাশি কাঁঠালবাগান-কাটাবন-নীলক্ষেত-পলাশীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিবহন ব্যবস্থা সীমাহীন সংকটে পড়বে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক অনতিবিলম্বে বাতিল করবার জোর দাবি জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

মেগাপ্রজেক্টের বিনিয়োগ ফেরত আনা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দেয়ার জন্য এই সংযোগ সড়কটি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এই এলাকায় বিদ্যমান অতিব্যস্ত রাস্তাসমূহের উপযোগিতা নষ্ট করবে। একইসাথে এই এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প উঠানামার কারণে বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক জ্যাম আরও অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করে আইপিডি।

বিগত সরকারের সময়ে পরিবেশগত, পরিকল্পনাগত প্রভাব বিশ্লেষণ এবং জনগণের মতামত ছাড়াই যে সকল মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর অন্যতম হল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্পের প্রথম দিককার প্রস্তাবনায় ও এই সংযোগ সড়ক ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সড়ক অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের যথাযথ পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে যথাযথ সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, জনগণের এটাই ছিল প্রত্যাশা। অথচ এটা অত্যন্ত দূ:খজনক যে, হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক এর পরিবেশ ধ্বংস করে এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক প্রকল্প নির্মাণ বাতিলের দাবিতে পান্থকুঞ্জ পার্ক সংলগ্ন এলাকাবাসী, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন পরিবেশ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত আন্দোলন এক মাসের অধিক পার হলেও এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিস্ময়কর নীরবতা পালন করছে। এই প্রকল্পের কারণে ইতিমধ্যে হাতিরঝিল এলাকায় জলাধার ভরাট এবং পান্থকুঞ্জ উদ্যানের সহস্রাধিক গাছ কাটা হয়েছে।

হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ সংলগ্ন এলাকায়

প্রস্তাবিত শতাধিক পিলারসমূহ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জলাধারের পানিপ্রবাহ ও সার্বিক উপযোগিতা ধ্বংস করবে। সংযোগ সড়ক প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই পার্ক-উদ্যান-জলাধার সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও বিভিন পরিকল্পনার সুস্পষ্ট লংঘন করেছে। এই সংযোগ সড়ক বাতিল না করা হলে ট্রাফিক জ্যাম মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে সার্ক ফোয়ারা, বাংলা মোটর, কাটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত ও পলাশী মোড়সমূহে। গাড়ির চাপ অনেক বেড়ে যাওয়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

এর সামগ্রিক একাডেমিক পরিবেশ ও পরিবহন ব্যবস্থা সংকটে পড়বে। বিগত সরকারের আমলে পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে জনগণের মতামত গ্রহণ ও গণশুনানির আয়োজন ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। টপ ডাউন প্ল্যানিং বা উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া এ ধরনের পরিকল্পনা জনগণের প্রকৃত চাহিদাভিত্তিক সমাধানের সাথে সম্পৃক্ততাবিহীন। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। একইসাথে বিগত সরকারের আমলে দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র ও ঠিকাদারদের প্রভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী পরিবহন পরিকল্পনা বাদ দিয়ে অতি ব্যয়বহুল এবং কম উপযোগী পরিবহন অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণের যে প্রবণতা ছিল, সেটা থেকে রাষ্ট্র ও সরকারকে সরে আসবার জোর দাবী জানাচ্ছে আইপিডি।

শেয়ার করুন