৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৬:১১ অপরাহ্ন


নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে বিব্রত অন্তর্বর্তী সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১১-২০২৪
নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে বিব্রত অন্তর্বর্তী সরকার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক/ফাইল ছবি


রাজনৈতিক মাঠে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সংশিষ্ট ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিব্রতবোধ করছেন, আছেন অস্বস্তিতে। দ্রুত তড়িঘড়ি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে ফেলতে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এতোটা চাপে রাখাকে তারা ভালো চোখেও দেখছেন না। অন্যদিকে তিনমাস না যেতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেয়া বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে বড় দলগুলির বক্তৃতা-বিবৃতি, যথেচ্ছ মন্তব্যে তারা বিব্রত বোধ করছেন। বিশেষ করে তড়িগড়ি নির্বাচনের আয়োজনে মাঠের চাপে সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা এঅবস্থার মধ্যে পড়েছেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারো কারো মন্তব্যে বিব্রতবোধ করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনকি প্রশাসনে দখল-পাল্টা দখল রুখে দিতে রাজনৈতিক দলগুলি পক্ষ থেকে বাধা দেয়া ও প্রভাব বিস্তারকেও ভালো ভাবে নিচ্ছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এমনটাই আভাস মিলেছে বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে। 

এখন দেখা যাক কে কী বলছেন

চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা ছেড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সেসময় টালামাটাল পরিস্থিতিতে চারিদেকে জল্পনা কল্পনা রটে যায় কি হচ্ছে বা কি হবে? এমন টালমাটাল অবস্থায় দায়িত্ব কে নেবেন বা নিতে যাচ্ছেন? কেননা গত ১৭ বছর ধরে একদিকে ফ্যাসিবাদি শাসনের নিস্পেষণে দেশের মানুষ একদিকে যেমন নিঃস্ব অন্যদিকে লুটপাট অর্থপাচারে বিপর্যন্ত দেশ। এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা মিলে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলন শেষে আমন্ত্রণ জানিয়ে ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃতে আসীন করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। নেওয়া হয়েছে সংস্কারের উদ্যোগ যা, এখনো তা চলমান। কিন্তু তার প্রায় ১০০ দিনের শাসনামল নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে চলছে নানান ধরনের বক্তৃতা বিবৃতি বিদ্রুপ। দেদারসে চলছে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু আচরণ ও মন্তব্যা। এখন দেখা যাক কে কি বলছেন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘদিনের জঞ্জাল পরিষ্কারের তুলে ধরলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় বসতে না বসতেই প্রথমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগস্ট মাসেই প্রথম ভাষণেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ দাবি জানান তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চান। গত আগস্ট মাসে সে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দীন আহমেদ। নেতৃবৃন্দ এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন জানান। ভবিষ্যতেও এই সমর্থন থাকার কথা জানান তারা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় যে, সরকারের পক্ষ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয় সে বিষয়ে তারা অনুরোধ করেন। একিই বৈঠকে তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ও সম্ভাবনা আছে সে বিষয়ে একমত পোষণ করেন। সবশেষে তারা সরকারের সংস্কার, নির্বাচন সম্পর্কিত এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবাই একসঙ্গে কাজ করার এবং সমন্বিত অংশীদার হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “নির্বাচন আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি। তবে নির্বাচনের রোডম্যাপে আমরা সরকারের কাছে কোনও মাস দিনকাল নিয়ে কথা বলিনি বলে তখন জানান।”এর পরেই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপি আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করলেও জামায়াত গুরুত্ব দিয়েছে সংস্কারে। আর একই দিনে অনুষ্ঠিত সংলাপে নানা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। 

এসময় জনগণের মাঠে একটা আশার সঞ্চার করে যে রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি’র মতো একটি বড়ো রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু এমন বক্তব্যে বেশিদন স্থির থাকেনি বিএনপি। দলটি শুরু করে দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দাবি জানাতে থাকে। এমনকি প্রতিদিনই দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে মাঠ গরম করে রাখছে দলটি। জানা গেছে,এর পেছনের বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের যুক্তিও দেখানো হয়। কেননা বিএনপি’র নেতারা মনে করেন পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের চারপাশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী লোকজনই ছেয়ে গেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াতের লোকজন শক্ত আসন গেড়ে বসেছে। বিএনপি’র ধারণা জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি’কে আগামীতে নির্বাচনে দূরে থাকতে বা কোণঠাসা করে ফেলতে। তাদের ধারণা জামায়াত তার পুরো ঘর গুছিয়ে নির্বাচন করতে চায়। একারণে বিএনপি জোড়ে শোরে নির্বাচনের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে মাঠে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু জামায়াতকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত চাইতে গিয়ে দলটির সিনিয়র নেতারা নানান ধরনের আশঙ্কার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষদের বেশ কয়েকজন বিব্রতবোধ করছেন বলে শোনা যায়। 

সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেই ফেলেন, জনগণ এই সরকারের সঙ্গে আছে। তাদের বসানো হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য। তার পরও জনগণের ন্যায্য পাওনা ভোটাধিকার কবে দেবেন, এটা বলতে দ্বিধা কেন? কী কারণে নির্বাচন কমিশন এখনও বহাল তবিয়তে আছে? সংস্কারের জন্য আপনাকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) রাজনীতিবিদদের পরামর্শ নিতে হবে। সর্বশেষে এক আলোচনা সভায় নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হলে অনেক বির্তকের অবসান হবে, এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, আর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সেটি খুব জরুরি এই মুহূর্তে।’

তারেক রহমানের কঠোর বার্তায়ও বিব্রত

অন্তর্বর্তী সরকার জন-আকাঙ্ক্ষার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মনে হয় তারা জন-আখাংকার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে চাইছে না; বরং তারা যেটা ভালো মনে করছে, সেটাই হয়তো তারা চাপিয়ে দিতে চাইছে। তারেক রহমান আরও বলেন, অনেক অপ্রাপ্তি থাকার পরও জনগণ কিন্তু এখনো এই সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে, তারা আস্থা হারাতে চাইছে না। তবে একটা প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি আদৌ জনগণের ওপর আস্থা রাখতে চায়? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এমন বক্তব্যে উষ্মা আছে অন্তর্বর্তী সরকারের থাকা সংশ্লিস্টদের। 

শরিকরাও থেমে নেই

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি’র সাথে দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলনের অন্যতম শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও মুখ খুলেছেন। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্য, আয়-ব্যয়ে অসংগতি-এসব বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, এই সরকারের তিন মাস হয়ে গেছে। কিন্তু এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। মানুষ আর বেশি দিন সরকারকে সময় দেবে না।

মুখ খুললেন খোদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস 

যদিও গত ১৭ নভেম্বর রোববার ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ৩৪ মিনিটের ভাষণ। তবে এর মমার্থ অনেক নির্মমই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ নরমে গরমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানালেন তড়িঘড়ি নির্বাচনের চেয়ে টেকসই সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে নির্বাচন কয়েক মাস পেছালেও ধৈর্য ধারনের আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেই দিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। এর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেরও একটা ধারণা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হবে। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি।

বিব্রত হচ্ছেন উপদেষ্টারাও

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে কাউকে উপদেষ্টা করা হয়নি। তিন বিভাগ থেকে কী একজনও নেই, যিনি মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্য। অঞ্চলবৈষম্য আমরা সমর্থন করি না।’ জানা গেছে তার পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যে বিব্রত বোধ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। একারণে তিনি বলেই ফেলেছেন, তারা (সরকার) আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করে না। দেশের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যাকে প্রয়োজন মনে করেছেন, তাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন। অন্যদিকে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এই সরকারের প্রয়োজনীয় সময়টাকে যদি বিলম্ব কেউ মনে করে সেটা অন্য বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয় সময়ের একটা দিনও বেশি থাকতে চাই না। সেটা সময় নির্ধারণ করবে। ডিসেম্বর মাস পার হতে দিন।

বিব্রতবোধের নেপথ্যে ও শেষ কথা

অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিব্রতবোধ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক একজন উপদেষ্টা বলেন, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই রাজনৈতিক দলগুলি বড়ো ধরনের সহায়তা করেছিল। কিন্তু এবার তারা ১৭ বছরের জঞ্জাল সারিয়ে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অতটা সহযোগিতা পাচ্ছেন না বা পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি কাছ থেকে। তিনি বলেন, বরং দ্রুত নির্বাচন নির্বাচন দাবি করে পরিস্থিতি জটিল করে তোলা হচ্ছে। জনগণকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে বিষিয়ে তোলা হচ্ছে। তার মতে, এটা এমনভাবে করা হচ্ছে যেনো ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তী সরকারের যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় আসীন হবার আশায় আছেন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করায় দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা। এরপর এটা করাও হয়েছে। এর পাশাপাশি সেনা প্রধান বলেছিলেন, ‘দেশের সকল কার্যক্রম এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে। এসময় ওয়াকার-উজ-জামান আশ্বাসও দিয়ে বলেন, ‘দয়া করে, সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর উপর আস্থা রাখুন। আমি সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি এবং জনগণের জানমাল রক্ষার অঙ্গীকার করছি। আপনারা আশা হারাবেন না। আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবি পূরণ করব এবং শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো। সাবেক ওই উপদেষ্টা দেশ প্রতিনিধিকে জানান, ৫ আগস্ট এমন ধরনের ভাষণের আগে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে তার কাজে সহায়তারও আশ্বাস চেয়েছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে। আর এজন্য এখনই রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের মুখে গত ১৭ বছরের জঞ্জাল সাফ করা বাদ দিয়ে শুধু একটি নির্বাচন তড়িগড়ি করে ফেলতে অন্তর্বর্তী সরকারে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়ে ও তা আদায় করে নেয়াটা হবে হিতে বিপরীত। এমন পরিস্থিতিতে উপদেষ্টাদের নিয়ে জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হবে। যার মাসুল হয়তো আরো নেতিবাচত হবে বলেও মনে করে দেশ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক ওই উপদেষ্টা। তার মতে বিভেদ-বিভ্রান্তির সুযোগ নিতে অপেক্ষায় আছে পতিত সরকারের প্রভাবশালী প্রতিনিধিরা। 

শেয়ার করুন