৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:১৯:৫৬ অপরাহ্ন


১৯৭১ এবং ২০২৪ অভিন্ন আদর্শ সংযুক্তি জরুরি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৪
১৯৭১ এবং ২০২৪ অভিন্ন আদর্শ সংযুক্তি জরুরি শহিদি মার্চ


আদর্শগতভাবে ১৯৭১ স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন কিন্তু এক অভিন্ন। উভয় ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের স্বপ্ন শোষণহীন বৈষম্যহীন সমাজ, বাকস্বাধীনতা, মেধাভিত্তিক সমাজ গঠন। কিন্তু দুঃখের বিষয় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নানাভাবে বলা বা একতরফাভাবে প্রচার, প্রকাশ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধকে ৫৩ বছরেও অকৃত্রিম আর পূর্ণাঙ্গভাবে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হয়নি। ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্ব কুক্ষিগত করায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা জন্ম নিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের। জাতি জানতেই পারেনি ২৬ মার্চ, ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ কীভাবে বহুধা বিভক্ত বাংলাদেশিদের সমস্যা সংকট মোকাবিলা করে শ্রদ্ধেয় তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডারদের কারো কারো অবদান খাটো করা হয়েছে। নানামুখী চক্রান্তে ১৯৭২-৭৫ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়েছে। ৭৫-৯০ দেশ চলেছে উল্টো রথে। এমনকি ১৯৯১-২০০৭ যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে নিজেদের মতো করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সাজিয়েছে। ফরমায়েশি ইতিহাস রচনা করেছে। ২০০৮-২০২৪ মুক্তিযুদ্ধকে পারিবারিককরণ করে মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শকে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দলের দেশ শাসনের সময় দুর্নীতিবাজ লুটেরা গোষ্ঠী দেশের মানুষের অধিকার, বাকস্বাধীনতা হরণ করে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষী করে তুলেছি। ২০২৪ এসে আরো একটি ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণের জন্য তথাকথিত চেতনা ব্যবসায়ীরা দায়ী।

প্রশ্ন করুন, মুক্তিযুদ্ধ কি কারো একক বা কোনো বিশেষ পরিবারের একক অর্জন ছিল? ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সূচিত শাসন শোষণ, গণহত্যার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাংলায় জাতির একটি জনযুদ্ধ। অবশ্যই নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে জনযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে তার অবর্তমানে প্রবাসী সরকারকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে নেতৃত্ব দিয়েছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মানসুর আলী এবং কামরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। শ্রদ্ধেয় জেনারেল ওসমানী বীর সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষ নানাভাবে যুদ্ধ করেছে। লাখো মানুষ শহিদ হয়েছে। লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ছিল জীবনের সেরা অর্জন। কিন্তু কেন বীর জাতি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিচ্যুত হলো? কেন তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শধারী দলের শাসনামলে দেশে দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা, গুম জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেল? কেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, যুদ্ধকালীন জাতীয় নেতাদের প্রকৃত মূল্যায়ন করা হলো না?

৫৩ বছর পর এসেও দেশের নতুন প্রজন্মকে আবারও বৈষম্যহীন, শোষণহীন সমাজ, সমঅধিকারভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য প্রায় দেড় সহস্রাধিক জীবন বিসর্জন দিতে হলো? এ প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক উত্তর অন্বেষণ জরুরি। আরো জরুরি ১৯৭১ এবং ২০২৪ অভিন্ন আদর্শের সংযুক্তি। এটি করা সম্ভব নয়, হলে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ হারিয়ে গেছে ১৯৭২-২০২৪ সেই পথেই বিলীন হতে পারে ২০২৪। তাই যেভাবে ২০২৪ স্মৃতি জাদুঘর সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, একইভাবে ১৯৭১ প্রকৃত স্মৃতি নির্মোহভাবে সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সেখনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, সৈয়দ নজরুল আহমেদ, সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমেদসহ চার নেতা, জেনারেল ওসমানীসহ সব সেক্টর কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের অবদান লিপিবদ্ধ থাকবে। 

২০২৪ আন্দোলনের আবু সাঈদ, মুগ্ধদের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭১ বীরদের জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ১৯৭১-এর সঙ্গে ২০২৪ সংযুক্ত করা হলে উভয় যুদ্ধের অভিন্ন আদর্শে দেশ পরিচিত হবে, শোষণমুক্ত, বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে বিকশিত হবে।

শেয়ার করুন