বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রবাসের তথাকথিত সুশীল সমাজের কিছু সদস্য এবং পতিত সরকারের কিছু প্রোপাগান্ডা মেশিন মেনে নিতে পারছে না। তাদের মনে বড়ই কষ্ট। এ কষ্টের সঙ্গে যোগ হয়েছে চুলকানি। শহরের অলিগলিতে চুলকানির মলম ফেরি করা লোকগুলোর কথা শুনে আমরা মজা পাই। কিংবা কাঠফাটা গরমে ঘেমে গিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শরীরের ভাঁজে দুর্দণ্ড চুলকে নিতেও আরাম পাই আমরা। কিংবা পইপই করে ডাক্তার যেখানে বলে দিয়েছেন, ঘা চুলকাবেন না, ক্ষতি হবে; তারপরও আপন মনে সে স্থান চুলকাতেও নিষিদ্ধ আনন্দ পান অনেকেই। চুলকানোর সঙ্গে এই যে, আরামের সম্পর্ক আমাদের প্রবাসী সুশীলরা ক্ষতি হবে জেনেও তা করছেন। তথাকথিত এ সুশীল বাবুদের চুলকানি দেখে প্রবাসীদের অনেকে মজা আর আরাম পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ড. ইউনূসের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে ছবি তুলেছেন তা নিয়ে নিউইয়র্কের কিছু দলবাজ, সুবিধাবাদী এবং তথাকথিত সুশীল বাবু নানা তির্যক মন্তব্য করছেন। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝি বৈঠক হয় ইত্যাদি ইত্যাদিসহ নানা বাজে কথাবার্তা। অথচ হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসনোট দিয়ে এ বৈঠকের কথা স্বীকার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও ফলাও করে ছাপাও হয়েছে।
নিউইয়র্কের পরিচিত একজন ছড়াকার তার ফেসবুকে লিখেছেন:
‘বানরের দল জোট পাকিয়েছে
আগলিয়েছে আগল
অন্ধকে আজ পথ দেখানোর
ভার নিয়েছে পাগল।’
নিউইয়র্কের একজন অ্যাকটিভিস্ট সম্পাদক তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন-
‘তার ডাকে জনগণের সাড়া না পেয়ে রাজনৈতিক দল গড়তে ব্যর্থ হলেও বিপ্লবে বিন্দুমাত্র ভূমিকা না রেখেও বিপ্লবী সরকার প্রধান!!
এটাই তার জীবনের বড়সাফল্য!’
নিউইয়র্কের একজন হজ-ওমরাহ ব্যবসায়ী, যার ভাই নেত্রীর বদান্যতায় একটি ব্যাংকের মালিক হয়েছিলেন, তিনি তার ফেসবুকে লিখেন:
‘তিনি জনগণের সঙ্গে না মিশে প্রাইভেট ক্লাবে মিশলেন ধনাঢ্য সমাজের সঙ্গে। জুলাই বিপ্লবের পাওনা এ কী এটাই? খুউব জানতে ইচ্ছে করে।’
কানাডা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা এবং আইপি টিভির বাঙালি মালিক সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন:
অভিনন্দন জানাতে পারলাম না!
‘বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে এসেছেন। অধিবেশন চলাকালীন সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, কুশল বিনিময় করছেন। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। এ সফরে তিনি বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু অর্জন করবেন এটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা।
অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ড. ইউনূস তার এ সফরে বাংলাদেশকে যেভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরছেন, তা শোভনীয় হয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) বিশ্বনেতাদের ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ (রক্তাক্ত বিজয়) নামে একটি অ্যালবাম উপহার দিচ্ছেন (২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আঁকা দেওয়াল চিত্রের একটি অ্যালবাম)। বিশ্লেষকরা প্রশ্ন রেখেছেন-উপহার হিসেবে আর কি কিছু পাওয়া গেল না? তারা বলেন, নিদেনপক্ষে গ্রাামীণের একখানা গামছা উপহার দিলেও তো দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে সবার কাছ থেকে তিনি বাহবা কুড়াতে পারতেন!
এ অ্যালবাম কে তৈরি করলো, কি উদ্দেশ্যে করলো এ নিয়ে নানান জল্পনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই তো অভ্যুত্থান হয়েছে, তাই বলে বিদেশিদের কাছে কি দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের এসব চিত্র কেউ তুলে ধরেছে? তা-ও সরকারিভাবে!’
তাদের এসব মন্তব্য পড়ে তাদের নেত্রী হারানো ও দলের ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনার কথাই ফুটে উঠেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। আবার এদের হায়া-লজ্জা আছে কি না তা-ও জানতে চেয়েছেন অনেকে।
নিউইয়র্কের রাস্তায় দৌড়াচ্ছে ‘জামায়াত’
একই দিনে দুটো গাড়ির একই নামের নম্বর প্লেট চোখে পড়লো নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসে। একটি কার অন্যটি ভ্যানগাড়ি। নাম একই-‘জামায়াত’। কৌশলী জামায়াতে ইসলামীর প্রবাসে প্রচারণার এটাও একটা কৌশল হতে পারে। যেমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হঠাৎ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। প্রবাসের এ শহরেও তাদের সদর্প প্রচারণার কৌশল হিসেবে এ ‘জামায়াত’ নামের গাড়ির নম্বর প্লেটের নামকরণ হলেও হতে পারে।
‘রক্তাক্ত বিজয়’-এর বাজার মাত
ড. ইউনূস এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে আসার সময় গণঅভ্যুত্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব দেওয়াল চিত্র এঁকেছিলেন, সেসবের ছবিসংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বা ‘রক্তাক্ত বিজয়’ নামের একটি অ্যালবাম সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। এ বইটি তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বনেতাদের উপহার দেন। একই সঙ্গে কীভাবে বাংলাদেশের ছাত্ররা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছে, ছাত্ররাও গুলির সামনে কীভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছে সে গল্প বললেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, তারা যেভাবে কথা বলে এরকম কথা আমি আগে কখনো শুনিনি। তারা নতুন পৃথিবী, নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রস্তুত। প্লিজ, আপনারা তাদের হেল্প করবেন, যেন তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। বিশ্বনেতারা ড. ইউনূসের এসব কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য তারা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন! বিশ্বনেতারা এ বইয়ের বিষয়বস্তুর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলকেও এ আর্টবুক উপহার দিয়েছিলেন। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের হাতে এ উপহার তুলে দিয়েছিলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে গ্রাফিতির ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে বলেছিলেন, এসব গ্রাফিতিতে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পাশবিক শক্তিকে প্রতিহত করতে নৃশংস এক বাহিনীর মুখোমুখি আন্দোলন-বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও যুবকদের দাবি-দাওয়া, আবেগ-অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা চিত্রিত হয়েছে। রক্তাক্ত বিজয় নামের এ অ্যালবামটি এবার ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরে বাজার মাত করেছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
মৌসুমি সাংবাদিকরা এবার হতাশ!
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার নিউইয়র্কের মৌসুমি সাংবাদিকদের হতাশ করেছেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এসে সংবাদ সম্মেলন না করায় তাদের হতাশ হতে হয়েছে। এদের অনেকেই কোনো মিডিয়ায় কাজ করেন না। নিয়মিত সাংবাদিক নন। তবে তাদের কার্ড আছে। কারো কারো নিজেরই অনলাইন মিডিয়া। আবার কেউ অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক। কেউ কেউ ঢাকার কোনো অখ্যাত পত্রিকার একটি কার্ড সংগ্রহ করে সাংবাদিক বনে গেছেন। তারা বছরে এদিনটির জন্য ‘তীর্থের কাক’-এর মতো অপেক্ষা করে বসে থাকেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এলে সাজুগুজু করে তারা আগেভাগেই সামনের আনলগুলো দখল করে বসে থাকেন। আর নিউইয়র্কের পেশাদার এবং প্রবীণ সাংবাদিকরা পেছনে বসে থাকতেন চুপচাপ।
নিউইয়র্কে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিলিয়ে কতগুলো মিডিয়া? তাতে ক’জন সাংবাদিক কর্মরত? ফোবানা, সোসাইটি বা জালালাবাদের নির্বাচন বা সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার করতে যারা গলায় কার্ড ঝুলিয়ে প্রথমসারির আসনগুলো দখল করে থাকেন, তাদের কতজন পেশাদার! তাদের কতজন অনুষ্ঠানের খবর রিপোর্ট করেন? এগুলো কোন পত্রিকা বা টিভিতে প্রচারিত হয় কেউ কি তার হদিস রাখেন?
সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এলে যাদের আইডি পেতে জাতিসংঘ মিশন সহায়তা করেন, তাদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকরাও পর্যন্ত বসতে পারেন না অনেক অনুষ্ঠানে। যাদের সাংবাদিক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই, তারা যখন সাংবাদিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়, তখন প্রকৃত সাংবাদিকরা লজ্জিত হন। সাধারণ মানুষ তখন ভুয়া আর ভুঁইফোড় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রকৃত সাংবাদিকদের গুলিয়ে ফেলেন। গণমাধ্যমের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা, অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধা তৈরি হয়। তাদের চিহ্নিত করা কি খুবই কঠিন কাজ? দয়া করে এ কাজগুলো আপনারা করুন। তাহলে একদিকে সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি পেশাদার সাংবাদিকরা বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন।
প্রকৃত সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং গণমাধ্যমের পরিপূর্ণ পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে সহায়তা করবেন, এ প্রত্যাশা আমাদের।
নিউইয়র্ক, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪