৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২২:২৬ অপরাহ্ন


বাংলাদেশ ব্যাংক ও রিজার্ভ ঘিরে শঙ্কা-দুশ্চিন্তা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রিজার্ভ ঘিরে শঙ্কা-দুশ্চিন্তা মার্কিন ডলার


ক’দিন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো না কোনোভাবেই পত্রিকার শিরোনাম। কেন্দ্রীয় এ ব্যাংক থেকে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার চাকুরি ছেড়ে দেয়া, সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ কমে ১৩ বিলিয়নে নেমে আসা, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত যাকে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতও বলা হচ্ছে সেই পিটার হাসের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাত। 

একের পর এক এসব খবরে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মিডিয়ায় রীতিমত হৈ চৈ। আসলে কী ঘটছে সেগুলো জানার চেষ্টা সর্বত্র। কিন্তু অনেক তথ্যই বের হচ্ছে না। এ নিয়ে সবার মাঝে কৌতুহল, দুশ্চিন্তা। এমনিতেই দীর্ঘদিন থেকে ডলার সঙ্কট, এলসি খোলায় কড়াকড়িতে স্বাভাবিক আমদানি ও রপ্তানিতে ধাক্কা লেগেছে। ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এরপর এসব খবরে ভাল কিছু যে হচ্ছে না সেটাই আঁচ করা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রিজার্ভ বাড়ার জন্য সেসব উৎস রয়েছে, তার প্রতিটা সূচকই নিন্মমুখী। রেমিটেন্স কমছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি আয় আসছে না। আবার নতুন বিদেশি বিনিয়োগ নেই। তাই রিজার্ভ বাড়ছে না। এজন্য যে পরিমাণ ডলার আসছে, তার চেয়ে বেশি আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে, মূলত এটাই বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই রিজার্ভ চাপে পড়ছে।

দেশে অন্তত বছর দেড়েক থেকে চলছে ডলার সংকট। নানা পদক্ষেপের পরও সংকট কাটেনি। বরং ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন খাতে।

বাংলাদেশে ডলার ইনকামের বড় প্রবাহ হলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সেই প্রবাসী আয়ে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এ ছাড়া রপ্তানি আয়ে খুব বেশি সুখবর নেই। এর পাশাপাশি ডলার সংকট ও আমদানিতে নিয়ন্ত্রণের কারণে ব্যাংকে এখন ঋণপত্র (এলসি) খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। গত অর্থবছর নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে প্রায় সাত শতাংশের বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র ধরে ঢাকার মিডিয়া প্রায় অভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে। যেখানে বলা হয়েছে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ কমে ১৩.২২ বিলিয়ন ডলার, যাতে করে আইএমএফের শর্ত পূরণ নিয়ে সংশয় বিরাজ করছে। 

রিজার্ভের পতন কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আওতাধীন দেশগুলোর আমদানি বিল বাবদ ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভে বড় ধাক্কা লেগেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আকুর বিল সমন্বয়ের পর গত রোববার (১২ মে) মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বিপিএম ৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে চলতি দেনার জন্য সংরক্ষিত ৫ দশমিক ০৮ ডলার বাদ দিয়ে নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। যেখানে আগামী জুনের জন্য আইএমএফের নির্ধারিত রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রিজার্ভ ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার কম। 

এ বিষয় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ১৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন হলেও তা পূরণ নিয়ে সংশয় থাকবে। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রিজার্ভ কমছে। এক মাসে তা বাড়ার তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। 

কারণ হিসেবে এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, দেশের রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রা যেসব উৎস থেকে আসে ও ব্যয় হয়, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছিল না। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। তবে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। 

শেয়ার করুন