৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন


‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ মতাদর্শ তদন্তের নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ মতাদর্শ তদন্তের নির্দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প


যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সুবিধা যেমন গ্রিনকার্ড, ওয়ার্ক পারমিট বা অভ্যন্তরীণ স্ট্যাটাস পরিবর্তনের আবেদনকারীদের মধ্যে ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ মনোভাব ও কার্যক্রম আছে কি না, তা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ১৯ আগস্ট (স্থানীয় সময়) ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস নতুন এক নীতিমালা প্রকাশ করে এ নির্দেশনা জারি করে। নতুন এই নীতিমালায় ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তারা যেন যাচাই করেন কোনো আবেদনকারী কি কখনো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মতবাদ সমর্থন, প্রচার বা সমর্থন করেছেন, কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংগঠনের মতাদর্শের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কি না, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। এমন মতাদর্শের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে অ্যান্টিসেমিটিক বক্তব্য ও জঙ্গিবাদে সমর্থন। যদি এমন কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসবকে চরম নেতিবাচক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করতে এবং সেই ভিত্তিতে আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে।

এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে সেইসব অভিবাসন সুবিধার ওপর, নিজস্ব বিবেচনাধীন বা নিজস্ব সিদ্ধান্তানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ আইনত সব যোগ্যতা পূরণ করলেও আবেদন বাতিল করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিনকার্ড, ওয়ার্ক পারমিট ও শিক্ষার্থীদের স্ট্যাটাস পরিবর্তনের মতো আবেদন। তবে ইউএসসিআইএস ঠিক কিভাবে অ্যান্টি-আমেরিকান দৃষ্টিভঙ্গি বা কার্যকলাপ সংজ্ঞায়িত করবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সংস্থাটি বলেছে, অভিবাসন আইনের একটি ধারার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে যারা বিশ্ব কমিউনিজম, সর্বাত্মবাদ, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কিংবা মার্কিন সরকারের পতনের পক্ষে অবস্থান নেয়, তারা নাগরিকত্বের অযোগ্য।

এ সপ্তাহের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ইউএসসিআইএস কর্মকর্তারা যেন প্যারোল বিশেষ অনুমতি বা শর্তসাপেক্ষ মুক্তি নীতির অপব্যবহার হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখেন। এ প্যারোল নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য না এমন অভিবাসীদের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। বাইডেন প্রশাসন এই নীতিটি অভূতপূর্বভাবে ব্যবহার করেছিল মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে চাপ কমাতে। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউএসসিআইএস কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবেন প্যারোল আবেদনে মিথ্যা বা ভুয়া তথ্য দেওয়া হয়েছে কি না।

ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাগেসার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সুবিধা তাদের জন্য নয় যারা দেশকে ঘৃণা করে। আমরা এমন নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা অ্যান্টি-আমেরিকান মনোভাব শনাক্ত করবে এবং কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ স্টিফেন ইয়েল-লোহর এ নির্দেশনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ নীতিমালার ভাষা অত্যন্ত বিষয়ভিত্তিক । এটি ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের আগের চেয়ে আরো বেশি ভিত্তি দিচ্ছে একটি আবেদন ‘নিজ বিবেচনায়’ বাতিল করার জন্য। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী এজেন্ডার অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছেন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে। শুধু অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে নয়, বরং তিনি বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থাও কঠোর করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সম্প্রতি ইউএসসিআইএস নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় ভালো নৈতিক চরিত্র বা সদাচরণের প্রমাণ যাচাই আরো বিস্তৃত করার কথা জানিয়েছে। আগে যেখানে গুরুতর অপরাধ না থাকলেই এই শর্ত পূরণ হতো, এখন কর্মকর্তারা আবেদনকারীর সামাজিক কার্যক্রম, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের ইতিহাসসহ বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয় বিবেচনা করবেন।

ট্রাম্প প্রশাসন আরো জানিয়েছে, আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা যাচাইয়ের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে তাদের মানসিকতা ও অভিবাসন উপযুক্ততা নির্ধারণ করা যায়।বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন এ নীতিমালা অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরো কঠিন করে তুলবে এবং অনেক আবেদনকারী বৈধভাবে যোগ্যতা পূরণ করলেও শুধু মতাদর্শগত কারণে তাদের আবেদন বাতিল হতে পারে। বিষয়টি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন