৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন


জাতীয় নির্বাচন আদৌ অবাধ নিরপেক্ষ হবে কি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
জাতীয় নির্বাচন আদৌ অবাধ নিরপেক্ষ হবে কি


নির্মম হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করে জুলাই আগস্টে ২০২৪ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবস্থান ঘটিয়ে একটি নতুন ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য সামনে রেখে। সমাজ জীবনের সর্বত্র বিরাজিত বৈষম্য, অবিচার-অনাচার, অপশাসনে নিষ্পেষিত সাধারণ মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল অন্তত কিছু মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে স্বাধীন দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, বিচারসহ, সামাজিক যাবতীয় বিষয়ে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রত্যাশা ছিল জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সহায়ক শক্তিগুলো সবার সমর্থনে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ন্যূনতম সময়ে নির্মোহভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিদের কাছে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে, আগস্ট ২০২৫ একটি বছর সরকার পরিচালনার পর নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বের সরকার জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ আর মূল্যায়ন করবে জনগণ। তবে মৌলিক প্রশ্ন হলো সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে ধ্বংসের দারপ্রান্তে দাঁড়ানো সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসন দিয়ে সরকার আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে কি না?

৫ আগস্ট সরকারপ্রধান জুলাই ঘোষণা দিলেন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ফেব্রুয়ারি ২০২৬ জাতীয় নির্বাচন। পুরো একটি বছরের বড় অংশজুড়ে সরকারের গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তথাকথিত সংস্কার বিষয়ে কি সমঝোতা করলেন বোধগম্য হলো না। ঘোষণার পর পর দেখা গেল অধিকাংশ দল ঘোষণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি তুলে ধরেছে। একটি বিশেষ দল যারা ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গেই দেশ শাসনের ক্ষমতা অর্জনের জন্যে হন্নে হয়ে উঠেছিল তাদের প্রেসক্রিপশন মতো জুলাই ঘোষণা হয়েছে বলে কিছু অভিযোগ তোলা হচ্ছে। প্রান্তিক কিছু দলের দাবি ঘোষণায় নাকি তাদের মতে হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ বিচার প্রক্রিয়া বিষয়ে, সংস্কার বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নেই। যে উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তার অধিকাংশ অপূর্ণ রয়ে গেছে। এমনকি অবশিষ্ট সময়ে সংস্কার করে সরকার আদৌ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে কতটুকু সক্ষম হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

জুলাই-আগস্ট গণবিপ্লবের সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। অনেক থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, অস্ত্রাগার লুট হয়েছে। অনেক সন্ত্রাসী জেল থেকে পালিয়েছে। সন্ত্রাসী, খুনিদের ঢালাওভাবে মুক্তি দেয়া হয়েছে। গত এক বছরে সরকার পুলিশ বাহিনীকে সঠিকভাবে সংগঠিত করতে পারেনি। বেসামরিক প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকারের অনভিজ্ঞ উপদেষ্টারা বাগে আনতে পারেনি। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক এবং মন্ত্রণালয়ে সচিব, সরকারি সংস্থায় প্রধান পদায়নে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আছে। আরো অভিযোগ আছে সরকার ছাত্রদের একটি অংশের মাধ্যমে গঠিত রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে বিরাগভাজন হয়েছে। মব সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞকে সামাল দিতে পারেনি। অনেকের ধারণা উপদেষ্টা নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার দক্ষতা এবং সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে আগে প্রধান উপদেষ্টা কিছু পরিবর্তন না আনলে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিডিআর হত্যাযজ্ঞ, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, বিচারিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক বিভাজন আছে। কয়েকটি প্রধান দল ছাড়া বাদ বাকি প্রান্তিক দলগুলো জানে তাদের জনভিত্তি নেই। তাই নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে তাদের অস্তিত্বের সংকট দৃশ্যমান হবে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করা হয়েছে তার পরিণতি অবস্যই ভোগ করবে দায়ী গোষ্ঠী। দায়দায়িত্ব বহন করতেই হবে সরকার এবং সরকার ঘনিষ্ঠ মহলকে। 

তবুও চাইবো নির্বাচন ঘোষিত সময়ে অনুষ্ঠিত হোক। জনগণ সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট প্রদানের সুযোগ পেয়ে নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিক। নিঃসন্দেহে সরকারে আসা নতুন সরকার পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই কৌঁসুলি ভূমিকায় দেশ পরিচালনার চেষ্টা করতে ত্রুটি করবে না।

শেয়ার করুন