সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক (কিউনি)-এর অধীনস্থ ব্রুকলিন কলেজের চারজন খণ্ডকালীন অধ্যাপক দাবি করেছেন, প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তাদের সক্রিয়তা ও মতপ্রকাশের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বরখাস্ত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানরা তাদের পুনঃনিয়োগের সুপারিশ করলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তে তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে। উল্লেখ্য, যেসব কোর্সে তাদের পড়ানোর কথা ছিল সেগুলো এখনো তালিকাভুক্ত রয়েছে এবং অনেক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ওয়েটিং লিস্টও রয়েছে। অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, তারা ছাত্রদের কাছ থেকে ইতিবাচক মূল্যায়ন পেয়েছেন এবং বিভাগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। বরখাস্তকৃত এক অধ্যাপক বলেন, আমরা কেবল অনুমান করতে পারছি, কারণ আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আমাদের মধ্যে একমাত্র মিল হচ্ছে যে, আমরা সবাই প্যালেস্টাইন ইস্যুতে কথা বলেছি। বরখাস্ত হওয়া চারজনই পুনঃনিয়োগের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ইতোমধ্যেই ব্রুকলিন কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরখাস্তের বিষয়ে কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেনি এবং গণমাধ্যমের অনুরোধেও কোনো মন্তব্য বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের শিক্ষকদের সংগঠন প্রফেশনাল স্টাফ কংগ্রেস এবং ফ্যাকাল্টি ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন বলেছে, এ অধ্যাপকদের ছাঁটাই প্রক্রিয়াগত ন্যায়বিচার ও মতপ্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী। প্রফেশনাল স্টাফ কংগ্রেসের সভাপতি জেমস ডেভিস বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর ফেলিক্স ভি. ম্যাটোস রদ্রিগেজকে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, এই চারজন অধ্যাপকের বরখাস্তে কোনো অসদাচরণের অভিযোগ বা খারাপ কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন ছিল না। বরং তাদের মধ্যে একমাত্র মিল হচ্ছে যে তারা ইসরায়েলের সমালোচনা করেছেন এবং প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কিউনির শতাধিক ইহুদি অধ্যাপক ও কর্মী একটি যৌথ চিঠিতে বলেন, এই অধ্যাপকদের বরখাস্ত করা না নিউইয়র্ক, না কিউনি, না ইহুদিদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বরং এটি এক ভয়ংকর নজির স্থাপন করছে, যা একাডেমিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে। এ বরখাস্তের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন কংগ্রেসে একাধিক শুনানিতে কলেজ ক্যাম্পাসে কথিত অ্যান্টিসেমিটিজম ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে। কিউনি চ্যান্সেলর, ইউসি বার্কলে এবং জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা এসব শুনানিতে অংশ নেন। শুনানির সময় একাধিকবার প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে একজন আন্দোলনকারী চিৎকার করে বলেন, ইসরায়েল শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে দিচ্ছে।
বরখাস্ত হওয়া এক অধ্যাপক বলেন, শিক্ষাদান শুধু আমার জীবিকা ছিল না, এটি ছিল আমার জীবনের উদ্দেশ্য। কিন্তু প্যালেস্টাইন ইস্যুতে দাঁড়ানো এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, এই দমন-পীড়ন কাজ করছে, কিন্তু এটা আমাকে থামাতে পারবে না। গাজায় যা হচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়ংকর-আমরা চুপ থাকতে পারি না। অন্য একজন অধ্যাপক জানান, চাকরি হারানোর ফলে তার পরিবার এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে। আমি জানি না আমার সন্তানের কলেজের খরচ কীভাবে চালাব, কিংবা স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা কী হবে। ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হুমকির মুখে এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় আছি। তারপরও তারা কেউই তাদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশ বা প্যালেস্টাইনপন্থী সক্রিয়তা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছেন না। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, একাডেমিক স্বায়ত্তশাসন এবং রাজনৈতিক চাপের প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অনেক শিক্ষক ও অধিকারকর্মী বলছেন, ইসরায়েল সরকারের সমালোচনা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে তা চাকরি হারানোর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা মনে করেন, ইতিহাস এই সময়ের ন্যায়বিচারহীনতা ক্ষমা করবে না।