যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় প্রায় চার দশক ধরে বসবাসরত গ্রিন কার্ডধারী ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধ লুইস লিওনকে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্তৃপক্ষ গোপনে গুয়াতেমালায় নির্বাসিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। ঘটনার পরপরই পরিবারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। এমনকি একপর্যায়ে একটি সূত্র থেকে বলা হয়, তিনি মারা গেছেন। তবে পরে জানা যায়, তিনি জীবিত এবং বর্তমানে গুয়াতেমালার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লিওনের পরিবার জানায়, তিনি ১৯৮৭ সালে চিলির স্বৈরশাসক অগুস্তো পিনোশের সরকারের অধীনে নির্যাতনের শিকার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি পেনসিলভানিয়ার আলেনটাউনে একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করেছেন। অবসরের পর তিনি স্ত্রী ও পরিবারের সঙ্গে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
গত ২০ জুন লিওন ও তার স্ত্রী স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে যান তার হারানো গ্রিনকার্ড পুনরায় সংগ্রহের জন্য। কিন্তু অফিসে প্রবেশের পরপরই আইসের দুই কর্মকর্তা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। লিওনের স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত অফিস ভবনের ভেতরে আটকে রাখা হয়। এরপর থেকেই লিওনের কোনো খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। কোথায় তাকে রাখা হয়েছে বা তার শারীরিক অবস্থা কেমন-এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিচ্ছিল না। এ সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারী, যিনি নিজেকে একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান তিনি সহায়তা করতে পারেন। কিন্তু তিনি কীভাবে মামলাটির সম্পর্কে জানলেন, তা স্পষ্ট করেননি। ৯ জুলাই সে নারী আবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, লিওন মারা গেছেন। এ খবরে পরিবার গভীর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে। তবে এক সপ্তাহ পর চিলিতে থাকা এক আত্মীয় জানান, তিনি লিওনের সন্ধান পেয়েছেন-তিনি জীবিত এবং বর্তমানে গুয়াতেমালার একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পরিবার জানায়, লিওনকে প্রথমে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি আইস ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে গুয়াতেমালায় পাঠানো হয়-যে দেশে তার কোনো আত্মীয়স্বজন বা পূর্বপরিচয় নেই। আইসের প্রকাশিত ডিটেনশন বা নির্বাসনের তালিকাতেও তার নাম ছিল না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু মানবিকভাবে অমানবিক নয়, বরং এটি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুতর উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ে বলা হয়েছে, প্রশাসন চাইলে কোনো অভিবাসীকে তাদের নিজ দেশে নয়, অন্য কোনো দেশেও নির্বাসন দিতে পারে। তবে তা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করতে হবে।
লিওন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এ বয়সে হঠাৎ এমন পরিবেশ পরিবর্তন তার জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। পরিবার জানিয়েছে, তারা যত দ্রুত সম্ভব গুয়াতেমালায় গিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে চায়। আইসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ ঘটনার তদন্ত করছে।