Persistent Organic Pollutants – POPs-এর ব্যবহার ও নির্গমন কমানো বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণমূলক উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে ঢাকা আশপাশের জলাশয়গুলি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে, জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি ঘটাচ্ছে। এছাড়াও, POPs খাদ্য শিল্পেও পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এই সংকট মোকাবিলায় অর্থবহ পরিবর্তন আনতে বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিতভাবে কাজ করা জরুরি।” এই শক্তিশালী বার্তাটি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো আয়োজিত এক জাতীয় পরামর্শক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ প্রদান করেন। কর্মশালাটি গত ১৫ জুলাই ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার বিষয় ছিল “টেক্সটাইল খাতে Persistent Organic Pollutants-সহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবহার ও নির্গমন হ্রাস।”
টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি হলেও, এই শিল্পে বিপজ্জনক রাসায়নিকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে গুরুতর পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে Persistent Organic Pollutants নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক, পরিবেশে দীর্ঘদিন টিকে থাকে এবং জীবদেহে জমা হয়ে, প্রকৃতি ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এই ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে ২০২২ সালে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (GEF) এবং জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) অর্থায়নে একটি ৫ বছরের আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের টেক্সটাইল খাতে ব্যবহার ও নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিক (CoCs), বিশেষ করে পিওপি, কমিয়ে আনা।
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর (DoE), বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে, আঞ্চলিক পর্যায়ে এটি পরিচালনায় সহযোগিতা করছে ইন্দোনেশিয়ার সংস্থা BSCRC-SEA। জাতীয় পর্যায়ে এই প্রকল্পের প্রধান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে এসডো এবং আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাচারাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিল (NRDC)।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কর্মশালার বিশেষ অতিথি ড. ফাহমিদা খানম বলেন, “পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ব্যবহার করে POPs ও অন্যান্য উদ্বেগজনক রাসায়নিক পদার্থ (CoCs) এর ব্যবহার কমানো জরুরি। তিনি কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত POPs শনাক্ত করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি টেক্সটাইল শিল্পভিত্তিক পৃথক গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন”।
এসডো’র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “টেকসই পরিবর্তনের জন্য শুধু নীতিগত পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়; আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও সচেতন হতে হবে। রাসায়নিক ব্যবস্থাপনাকে সফল করতে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত স্তরে সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।”
জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী ড. মাহফুজুল হক বলেন, “এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতকে বিপজ্জনক রাসায়নিক থেকে পরিবেশবান্ধব বিকল্পে রূপার করার জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপ প্রদান করছে, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কর্মশালার সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান (এনডিসি) টেক্সটাইল খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই খাত দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে গুরুত্ব সহকারে ও দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করা প্রয়োজন।” তিনি পরিবেশ দূষণের ওপর কর আরোপ, জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং ব্যবসার প্রতিটি স্তরে পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রকল্পের গুরুত্ব
টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, তবে বিপজ্জনক রাসায়নিকের ওপর নিভরশীলতা পরিবেশের টেকসইতা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। টেক্সটাইল প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত পিওপি (Persistent Organic Pollutants) এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক (CoCs) পানি দূষিত করে, জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং শ্রমিক ও আশপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
নিরাপদ বিকল্প গ্রহণ এবং রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার মাধ্যমে এই প্রকল্পের লক্ষ্যসমূহ হলো টেক্সটাইল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেকসই মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি। বর্জ্য হ্রাস করে এবং সম্পদের পুনঃব্যবহার উৎসাহিত করে সার্কুলার অর্থনীতি প্রচার করা। কর্মশালাটি সবাই মিলে একসঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সমাপ্ত হয়, যেখানে স্বচ্ছতা, উদ্ভাবন এবং বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এই কর্মশালার মাধ্যমে বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতে রাসায়নিক ঝুঁকি হ্রাসে ২০২২-২০২৭ মেয়াদী জিইএফ/ইউএনইপি অর্থায়িত প্রকল্পের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করবে। প্রকল্পটি ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ চারটি দেশের মধ্যে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।