প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরানে চালানো মার্কিন বিমান হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। তারা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিপর্যয়কর যুদ্ধের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিকে তার অভিপ্রায় সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই সামরিক হামলা চালিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে এক বিপজ্জনক যুদ্ধের পথে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি আরো যোগ করেন, এই একতরফা সামরিক পদক্ষেপ থেকে যে কোনো নেতিবাচক পরিণতি আসবে, তার সম্পূর্ণ দায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাঁধে বর্তাবে।
এদিকে ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এই হামলাকে ‘চরম অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই দেশকে কেবল কংগ্রেসই যুদ্ধের দিকে নিতে পারে। প্রেসিডেন্টের সেই এখতিয়ার নেই। তিনি আরো সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ কখনোই একক সিদ্ধান্তে শুরু হওয়া উচিত নয়। এই হামলা কেবল ইরান নয়, সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে মার্কিন সংবিধান, কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে অবজ্ঞা করে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেন, কংগ্রেসকে এ বিষয়ে জরুরি অধিবেশন ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে।
নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধান এবং কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষমতা আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি ইমপিচমেন্টের স্পষ্ট ও নির্ভুল ভিত্তি। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প একপেশে, অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি নিয়েছেন, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আটকে দিতে পারে।
মিশিগানের কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘নিরস্ত্র ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের মিথ্যা’ অপবাদ দিয়ে আমরা যে অন্তহীন যুদ্ধ পেয়েছি, তার পরিণতি দেখেছি। আমরা এবার সেই ফাঁদে পা দেবো না। তিনি কংগ্রেসকে ‘তাৎক্ষডুক হস্তক্ষেপের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
ম্যাসাচুসেটসের কংগ্রেসম্যান জিম ম্যাকগভার্ন পরিস্থিতিকে সরাসরি ‘পাগলামি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই ইরানকে বোমা মেরেছেন। আমাদের অবৈধভাবে আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে ফেলেছেন। আমরা কি কিছুই শিখিনি?
ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, এই পদক্ষেপ একটি দীর্ঘমেয়াদি, বিধ্বংসী যুদ্ধের সম্ভাবনাকে ভয়াবহভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, কোনো প্রেসিডেন্টেরই এককভাবে জাতিকে এমন একটি ভয়ংকর যুদ্ধে টেনে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে যখন তার হুমকিগুলোর ধরন এলোমেলো এবং কোনো সুসংগঠিত কৌশল নেই।
তিনি আরো বলেন, ইরানের সন্ত্রাসবাদ, পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা ও আঞ্চলিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে শক্তি, দৃঢ়তা এবং কৌশলগত স্বচ্ছতা প্রয়োজন। অথচ আজকের পদক্ষেপে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী, বিস্তৃত ও আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর প্রেক্ষাপটে শুমার ‘ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট’ আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমিত করতে একটি তাৎক্ষডুক ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সিনেট নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই আইনটি দ্রুত সিনেটের ভোটের জন্য উপস্থাপন করুন। আমি এই আইনের পক্ষে ভোট দেব এবং উভয় দলের সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারাও ভোট দিন। ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট এমন একটি আইন, যা প্রেসিডেন্টের বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সীমিত করে এবং দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হয়। শুমার বলেন, আমেরিকান জনগণ ও কংগ্রেসের সামনে প্রেসিডেন্টকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। আজকের হামলার উদ্দেশ্য কী এবং এর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে।
রাজনৈতিক বিভাজন আরো তীব্র
এই বিবৃতির মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, মার্কিন রাজনীতিতে যুদ্ধ ইস্যুটি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে আরো বড় বিভাজন সৃষ্টি করেছে। রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে ‘সাহসিকতা ও শক্তির প্রয়োগ’ হিসেবে প্রশংসা করলেও ডেমোক্র্যাটরা একে ‘গভীর কৌশলগত শূন্যতা’ ও ‘একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধ’ বলেই আখ্যা দিচ্ছেন। যুদ্ধের ময়দানের পাশাপাশি এখন যুদ্ধ গড়াচ্ছে কংগ্রেসের ভেতরও আইন, অধিকার ও সংবিধান নিয়ে। পরবর্তী পদক্ষেপে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র কি কেবল বিদেশে যুদ্ধ চালাবে, নাকি নিজের ভেতরেই নেতৃত্বের জন্য এক নতুন লড়াই শুরু করবে।