৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্প প্রশাসনকে তৃতীয় দেশে দ্রুত অভিবাসী প্রত্যাবাসনের অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনকে তৃতীয় দেশে দ্রুত অভিবাসী প্রত্যাবাসনের অনুমতি সুপ্রিম কোর্টের যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট


যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গত ২৩ জুন এক বিভক্ত রায়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে নিজ দেশ ছাড়া তৃতীয় দেশে অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে নিম্ন আদালতের সেই আদেশ আপাতত স্থগিত হয়ে গেল, যেখানে বলা হয়েছিল যে অভিবাসীদের নিজ দেশের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের আইনি আপত্তি জানানোর সুযোগ দিতে হবে। এই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা তাদের যুক্তি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেননি, যা সাধারণত জরুরি আদেশের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তবে বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র একটি কড়া মতবিরোধ জানিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত হাজার হাজার মানুষকে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডিবুটিতে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আটক অভিবাসীদের দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর পথ সুগম হয়েছে।

এই মামলায় অভিযুক্ত অভিবাসীদের মধ্যে ছিলেন মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কিউবার নাগরিকরা, যাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বিকল্প হিসেবে তৃতীয় দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র বলেন, ডিপোর্টেশন প্লেন প্রস্তুত করুন। এটা আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য একটি জয়। উল্লেখ্য, কিছু অভিবাসীকে ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে একজন ফেডারেল বিচারকের আদেশে সেই ফ্লাইট জিবুতির একটি মার্কিন নৌঘাঁটিতে অবতরণ করে। অভিবাসীদের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ সুদানে পাঠানো হলে তারা কারাবরণ, নির্যাতন বা মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন। একজন অভিবাসন আইনজীবী বলেন, তাদের মাত্র ১৬ ঘণ্টা আগে জানানো হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ অমানবিক। বোস্টনের ফেডারেল বিচারক ব্রায়ান ই মারফি (যিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক নিযুক্ত) পূর্বে আদেশ দিয়েছিলেন, তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানোর আগে অবশ্যই অভিবাসীদের সেই দেশের ঝুঁকি নিয়ে কথা বলার বাস্তব সুযোগ দিতে হবে। তবে তিনি সরাসরি তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ করেননি।

বিচারপতি সোটোমেয়র তার ১৯ পাতার মতবিরোধে লিখেছেন, সরকার আইনের তোয়াক্কা না করে মনে করছে তারা কাউকে যে কোনো দেশে ফেরত পাঠাতে পারে, কোনো রকম পূর্ববার্তা বা শুনানির সুযোগ ছাড়াই। এই আদেশের বিরোধিতা করেন বিচারপতি এলেনা কাগান ও কেটাঞ্জি ব্রাউন জ্যাকসনও। তাদের মতে, এই রায় একটি ফেডারেল আইনকে উপেক্ষা করেছে, যা নির্ধারণ করে যে কেউ এমন দেশে বহিষ্কৃত হতে পারে না, যেখানে নির্যাতন বা মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। তারা যুক্তি দেন, এমন ঝুঁকি থাকলে অভিবাসীদের অবশ্যই শুনানি পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত।

এই মামলার সূচনা হয়েছিল একটি ট্রায়াল কোর্টের রায় থেকে, যেখানে বলা হয় যে, অভিবাসীদের তৃতীয় দেশে পাঠানো হবে, তাদের আগাম নোটিশ ও নির্যাতনের ঝুঁকি প্রমাণের সুযোগ দিতে হবে। গত মে মাসে সরকার আটজন অভিবাসীকে দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে বিমানে তুলে পাঠানোর চেষ্টা করে, যদিও তারা কেউই সে দেশে আগে কখনো যাননি। পরে বিমানটি ডিবুটির একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে অবতরণ করে এবং তারা সেখানেই আটক থাকেন।বিচারক মারফি আদেশ দেন, এই আটজনকে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ ও বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ দিতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তারা আদেশ মানতে সম্মত হলেও এতে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশনীতি পরিচালনার ওপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে। মার্কিন সলিসিটার জেনারেল ডি. জন সাওয়ার বলেন, এই অবস্থার কারণে ডিবুটির সামরিক ঘাঁটিতে একটি অস্থায়ীকারাগার তৈরি করতে হয়েছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং যুদ্ধ-আক্রান্ত অঞ্চলের হুমকিতে পড়ছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আটজন অভিবাসী এখনো ডিবুটিতে রয়েছেন এবং তারা সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর পুনরায় বহিষ্কার রোধে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনবলেছে, অপরাধে দোষী অভিবাসীদের নিজ দেশ না নেওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তবে মামলার একপর্যায়ে সরকারের আইনজীবীরাও স্বীকার করেন, তৃতীয় দেশে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে নোটিশ ও নির্যাতনের ভয় নিয়ে আপত্তি জানানোর সুযোগ। বিচারক মারফির আদেশ অনুযায়ী, নির্যাতন ঝুঁকি প্রমাণের জন্য অভিবাসীদের অন্তত ১০ দিন এবং আপত্তি জানানোর জন্য আরো ১৫ দিন সময় দেওয়া উচিত।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্যানামা ও কোস্টারিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অভিবাসীদের সাময়িকভাবে রাখার চুক্তি করেছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব চুক্তি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল আইনি বিষয় নয়, বরং মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত।

শেয়ার করুন