৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:২২:৪৪ অপরাহ্ন


ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ব্রিটেনের রাজা


বেশ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার চারদিনের লন্ডন সফর সরকারি সফর ছিল। সেখানে প্রোটোকল হিসেবে সরকারপ্রধানকে স্বাগত জানাতে ব্রিটিশ সরকারের কেউ ছিল না। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। চারদিনের সফরে ব্রিটিশ সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেনি। তবে সাফল্য যদি কিছু বলতে হয় তা ছিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার। এ সাক্ষাৎকারের পটভূমি ছিল নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং বিএনপির সুস্পষ্ট দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর জন্য বিএনপি চেয়ারম্যান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আলোচনার উপদেশ। সরকারপ্রধান কোরবানি ঈদের প্রাক্কালে ভাষণে এপ্রিল ২০২৬ প্রধানভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো ডিসেম্বর ২০২৫ নির্বাচনের সময় নির্ধারণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। দেশে কিন্তু কয়েকবার বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। এবারের সাক্ষাৎকারে উভয়পক্ষের মধ্যে নির্বাচন সময়সীমা নিয়ে দ্বন্দ্বের কিছুটা সমাধান হয়েছে। তারেক জিয়ার দাবির মুখে সরকার প্রধান সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়ার সন্তোষজনক অগ্রগতিসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারি ২০২৬ রোজা শুরু হবার আগে নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

উল্লেখযোগ্য যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী সময় ডিসেম্বর-জানুযারি। মার্চ মাসে রোজা, এপ্রিলে গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হয়, স্কুল-কলেজ পরীক্ষা থাকে, বর্ষা বাদলের সূচনা হয়। এ দেশে ইতিপূর্বে কেয়ার টেকার সরকার কয়েকবার তিন মাসের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচন করার নজির আছে। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভিন্নমাত্রার এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ১০ মাসেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং বেশ কিছু বিতর্কিত কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। একই সঙ্গে সংস্কার এবং বিচার বিষয়ে অগ্রগতি সামান্য। সরকারের প্রধান ফোকাস নির্বাচন থাকলে ইতিমধ্যে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারতো। বিশ্ব পরিস্থিতি টালমাটাল। এমতাবস্থায় যতো শিগগির অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়, ততই মঙ্গল।

নানামুখী চাপের মুখে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল। উভয় দলের তৃণমূলে ব্যাপক জন সমর্থন রয়েছে। আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন আদৌ বিশ্বাসযোগ্য বা শান্তিপূর্ণ হবে বলে সন্দেহ আছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ডিসেম্বর ২০২৫ বা ফেব্রুয়ারি ২০২৬ যখনি নির্বাচন হোক বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হবে সন্দেহ নেই।

এমতাবস্তায় নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সমঝোতা রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি আনবে। মনে রাখতে হবে কোনো রাজনৈতিক দলকে বঞ্চিত রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সবাইকে সুযোগ দিতে হবে জনমত যাচাই করার। 

সংস্কার এবং বিচার চলমান প্রক্রিয়া। একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার এবং বিচার গতি পাবে না। নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী অঙ্গীকারে সংস্কার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। অবশ্য বর্তমান সরকার নির্বাচন বিষয়ে কিছু সম্মত সংস্কার করতেই পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি অন্তর্বর্তী সরকারের বিবিধ কার্যক্রম পরবর্তী নির্বাচিত পার্লামেন্টে বৈধতা বিষয়ে সর্বদলীয় সম্মতি।

এখন আসুন রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে। দেশে কিন্তু আওয়ামী লীগের অবর্তমানে বিএনপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল। কিন্তু দেশজুড়ে নানা ঘটনায় বিএনপি বিতর্কিত হয়েছে। তৃণমূলের ওপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই দীর্ঘদিন প্রবাসী। সরকারে কিন্তু জামায়াত এবং ইসলামি মৌলবাদী দলগুলোর প্রভাব সুস্পষ্ট। এমতাবস্তায় নির্বাচনের আগে কী ধরনের মেরুকরণ হবে সেটি দেখতে হবে। 

এদিকে অর্থনীতি নাজুক, মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘর্ষ জ্বালানি সংকট অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে।

অনেকে সমালোচনা করলেও নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সরকার দূরত্ব দূর হওয়া প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের একমাত্র সাফল্য। তবে রাষ্ট্রপ্রধানের এই ধরনের সফর আয়োজনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রধানের অঙ্গীকার শুনতে ভালো লেগেছে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে যথাশিগগির নির্বাচনের পথনকশা ঘোষণা করবে।

শেয়ার করুন