৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন


ছোট ক্লাসের জন্য নিউইয়র্ক সিটির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
ছোট ক্লাসের জন্য নিউইয়র্ক সিটির ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিউইয়র্ক সিটির স্কুলের শ্রেণিকক্ষ


নিউইয়র্ক সিটির বিশাল শিক্ষাব্যবস্থা এখন বড় ধরনের রূপান্তরের পথে। স্টেট গভর্নমেন্টের স্বল্প শিক্ষার্থী সংখ্যার ছোট আকারের শ্রেণিকক্ষ করার আইনের বাস্তবায়নে আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে সিটি ব্যয় করছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তার সঙ্গে নিউইয়র্ক সিটি নিয়োগ দিচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ নতুন শিক্ষক। ২০২২ সালে পাস হওয়া স্টেট আইন অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ৬০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে- প্রাথমিক স্তরে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং উচ্চস্তরে সর্বোচ্চ ২৫ জন। এই প্রথমবার এই আইন বাস্তবায়নে শহরের স্কুলগুলোকে বাস্তব পরিবর্তনের পথে এগোতে হচ্ছে।

নিউইয়র্ক স্টেটে পাস হওয়া এই শ্রেণিকক্ষ আকার নিয়ন্ত্রণ আইন শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইনের অধীনে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সব স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা বাধ্যতামূলক। উদ্দেশ্য হলো শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, শেখার পরিবেশ উন্নত করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় আরো সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। তবে এই আইন কার্যকর করতে স্কুলগুলোকে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষ সম্প্রসারণ ও বাজেট বৃদ্ধির মতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

এই লক্ষ্যে নিউইয়র্ক সিটির ৭৪১টি স্কুল আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করে জমা দিয়েছে এবং সেই পরিকল্পনাগুলোর বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। সিটি বোর্ড অব এডুকেশনের চ্যান্সেলর মেলিসা অ্যাভিলেস-রামোস সম্প্রতি সিটি কাউন্সিলে এক বাজেট শুনানিতে জানান, এই পরিকল্পনাগুলোর মোট খরচ ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা রাজ্য ও শহর মিলিয়ে বরাদ্দ করবে।

প্রায় প্রতিটি স্কুলেই এই অর্থ নতুন শিক্ষক নিয়োগে ব্যবহার করা হবে, তবে কিছু স্কুল ১০০ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ অথবা অতিরিক্ত শ্রেডুকক্ষ তৈরির কাজেও এই অর্থ ব্যয় করবে।

চ্যান্সেলর অ্যাভিলেস-রামোস বলেন, আমরা চেয়েছি যেন এই ব্যয় সরাসরি স্কুল বাজেটের ওপর চাপ না ফেলে, কারণ তাদের এই আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করতেই হবে। পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি স্কুল বাস্তবসম্মতভাবে আইনটি মানতে পারে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কুইন্সের এমএস ১৫৮ মেরি কুরি স্কুল ৩১ জন এবং হিলক্রেস্ট হাই স্কুল ২৩ জন অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। তবে এক-তৃতীয়াংশ স্কুলে তিনজন বা তার কম শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ৮১টি স্কুল শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য জায়গা রূপান্তরের আবেদন করলেও মাত্র ১০টি প্রকল্পকে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য বলা হয়েছে। কিছু স্কুল তাদের বা প্রাককে শ্রেণি বন্ধ করে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরির প্রস্তাব দিলেও কতগুলো আবেদন অনুমোদন পেয়েছে, তা কর্তৃপক্ষ জানায়নি।

ওয়াশিংটন হাইটসের পিএস ১৮৭-এর অভিভাবক ও পিটিএ নেত্রী অলিম্পিয়া কাজি বলেন, স্কুলটি এতটাই ভিড়পূর্ণ যে তারা আর মাত্র একজন শিক্ষক নিয়োগ করতে পেরেছে সেটার জন্যও একটি শিল্পকক্ষ ছেড়ে দিতে হয়েছে। এর আগে ওই কক্ষটি ছিল একটি লাইব্রেরি, যেটিও আমরা হারিয়েছি। সিটি বোর্ড অব এডুকেশনের ডেপুটি চ্যান্সেলর এমা ভাদেরা জানান, ‘আমরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আগে থেকেই ঘোষণা করেছি, যাতে বেশি শিক্ষক আবেদন করতে পারেন। কারণ এবার আমরা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষক নিয়োগ করছি।

তথ্য অনুযায়ী, কুইন্সে ১ হাজার ২৮০ এবং ব্রুকলিনে ৯৮০ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রঙ্কস ও ম্যানহাটন তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক শিক্ষক পাবে। ইস্ট হারলেমের ডিস্ট্রিক্ট ৪ এবং সেন্ট্রাল ব্রঙ্কসের ডিস্ট্রিক্ট ১২-এর স্কুলগুলো সবচেয়ে কম আবেদন করেছে। এই জেলাগুলোকে উৎসাহিত করতে শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট জেলা সুপারিনটেনডেন্ট ও প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। তবে পুরো আইন বাস্তবায়নে শহরের সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০২৮-২৯ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে শহরজুড়ে মোট ২০ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ৪৯৫টি অতি ভিড়পূর্ণ স্কুলে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া এই আইন বাস্তবায়ন অসম্ভব অথচ এসব স্কুলে পড়াশোনা করছে শহরের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী।

অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘ক্লাস সাইজ ম্যাটারস’-এর নির্বাহী পরিচালক লিওনি হেইমসন বলেন, আমরা পাঁচ বছরের পরিকল্পনার তৃতীয় বছরে ঢুকলেও শিক্ষা বিভাগ এখনো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। নতুন স্কুল নির্মাণ এবং বাস্তবসম্মত ভর্তি নীতিমালা না আনলে, শিক্ষার্থীরা কখনোই কাক্সিক্ষত মনোযোগ পাবে না।

নিউইয়র্ক সিটির শ্রেণিকক্ষ আকার কমানোর এই উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক হতে পারে, তবে এটি এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নীতিগত সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরো সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে ভিড়পূর্ণ ও স্বল্প সক্ষমতাসম্পন্ন এলাকার স্কুলগুলোতে কার্যকর পরিবর্তন আনতে না পারলে এই বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত ফল দেবে না বলেই আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষা অধিকারকর্মীরা। আইন অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের আকার ধাপে ধাপে কমানো বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবায়নের গতি ও দিকনির্দেশনাই নির্ধারণ করবে এই উদ্যোগের সফলতা।

শেয়ার করুন