১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:১৬:৩৬ অপরাহ্ন


চার মাসে ২ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি সোশ্যাল সিকিউরিটি ভাতার আবেদন করেছেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
চার মাসে ২ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি সোশ্যাল সিকিউরিটি ভাতার আবেদন করেছেন সোশ্যাল সিকিউরিটি


যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বিপুল সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক আগেভাগেই সোশ্যাল সিকিউরিটি রিটায়ারমেন্ট ভাতার জন্য আবেদন করছেন। সাধারণত ৬৭ বছর বা তার পর আবেদন করলে বেশি মাসিক ভাতা পাওয়া যায়, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ৬২ বছর বা তার আগেই আবেদনকারীর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকালীন নীতিগত পরিবর্তন, গুজব এবং ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তাই এই প্রবণতার পেছনে মূল কারণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধার জন্য আগেভাগেই আবেদন করার প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ আবেদন করেছে, যা ১৩ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি বলে জানা গেছে। এই সংখ্যার হঠাৎ বৃদ্ধিকে বিশেষজ্ঞরা ‘নাটকীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

অনেকেই ৬২ বছর বয়সে সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন, তবে ৬৭ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলে মাসিক ভাতা অনেক বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৬২ বছর বয়সে সুবিধা নিলে মোট আয় জীবনকালীন ভাতা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়, আর প্রত্যেক বছর পুরো অবসর বয়স (৬৭ বছর) পার হওয়ার পর অপেক্ষা করলে মাসিক সুবিধা ৮ শতাংশ করে বাড়ে যতক্ষণ না ৭০ বছর বয়সে পৌঁছানো হয়। অর্থাৎ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে দীর্ঘমেয়াদে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অনেক অবসরপ্রাপ্ত নিজের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আগেভাগেই সুবিধার জন্য আবেদন করছেন।

উদ্বেগের মূল কারণ প্রশাসনিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। মার্টি ম্যাকগোয়ান, একজন অবসরপ্রাপ্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী পরিচালক, ৬৭তম জন্মদিনের পরপরই সোশ্যাল সিকিউরিটির জন্য আবেদন করেন। মূল পরিকল্পনা ছিল ৭০ বছর বয়সে আবেদন করে বেশি সুবিধা নেওয়ার। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সময় সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন, কর্মী ছাঁটাই এবং নীতিগত অনিশ্চয়তা তাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল।

বিশেষ করে ইলন মাস্কের সোশ্যাল সিকিউরিটির বিরুদ্ধে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের বৃহৎ সরকারি ব্যবস্থাপনাকে সংকুচিত করার প্রচেষ্টা এবং মার্কিন অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। মার্কেটেও বড় ধরনের ধস এসে ম্যাকগোয়ানের বিনিয়োগের মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ডলার কমে যায়, যা তার আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ তৈরি করে। এই কারণে ম্যাকগোয়ান এবং তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন একজন আগে সুবিধা নেবেন, অন্যজন অপেক্ষা করবেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিসগুলো ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে। ফোনলাইনগুলো জটিল হয়, লোকজন দ্রুত সুবিধার জন্য আবেদন করতে চাইছে এবং অনেকেই ভীত-এই ভয়ের কারণেই আগেভাগেই সুবিধার জন্য আবেদন বাড়ছে। কিছু অবসরপ্রাপ্ত তাদের স্বামী বা স্ত্রীর কম সুবিধার পরিবর্তে নিজেদের হিসাব থেকে বেশি সুবিধার জন্য আবেদন করছেন। বেবি বুমারদের সংখ্যাগত বৃদ্ধি, অর্থাৎ বৃহত্তর বয়সের জনগোষ্ঠীর অবসরের ফলে স্বাভাবিকভাবেই আবেদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই বৃদ্ধি একাই এত বড় ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল সিকিউরিটি হলো একটি ‘দীর্ঘজীবী বীমা’ বা দীর্ঘ জীবনের জন্য নিরাপত্তা। যারা অপেক্ষা করতে পারে তারা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে বেশি উপকৃত হন। সময়ে সুবিধা নিলে মাসিক ভাতা কমে যায় এবং আপনি হয়তো আপনার সঞ্চয় দ্রুত শেষ করে ফেলতে পারেন।

জ্যাক স্মলিগান, আরবান ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো, বলেন, বাণিজ্যিক বাজারে যেমন কোনো ইনফ্লেশন-ইনডেক্সড বার্ষিক ভাতা (এনুইটি) কেনা যায় না, তেমনি সোশ্যাল সিকিউরিটি অপেক্ষা করলেই সেটার সমতুল্য সুবিধা দেয়। আরবান ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন অবসরপ্রাপ্ত সোশ্যাল সিকিউরিটির সুবিধার জন্য আবেদন করবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এর ফলে প্রশাসনিক চাপও আরো বাড়বে। অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটি ম্যাকগোয়ানের জন্য দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত ছিল। মাত্র ১২ দিনের মধ্যে তিনি সুবিধা পেতে শুরু করেন। তবে তার স্ত্রী এখনো অপেক্ষা করছেন সুবিধা নেওয়ার জন্য, যেহেতু তারা বেশি মাসিক সুবিধা পেতে চেয়েছিলেন।

সংক্ষেপে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে ছড়ানো গুজবের কারণে অনেক অবসরপ্রাপ্ত আগেভাগেই সোশ্যাল সিকিউরিটির জন্য আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও দীর্ঘমেয়াদে ধৈর্য ধরেই সুবিধা নিলে বেশি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব, বর্তমান অনিশ্চয়তা ও জীবনের বাস্তব চাপ অনেককে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করছে। এই প্রবণতা আগামী সময়ে সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রশাসনের ওপর প্রশাসনিক চাপে বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। তাই অবসরপ্রাপ্তদের জন্য যথাযথ তথ্য ও আর্থিক পরামর্শ পাওয়া একান্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করুন