৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:১০:১৯ পূর্বাহ্ন


ড. ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা থেকে সরে আসায় স্বস্তি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
ড. ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনা থেকে সরে আসায় স্বস্তি প্রধান উপদেষ্টা ড. মূহাম্মদ ইউনূস


নানা জন নানা মত এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর বহুমুখী অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ডে বিরক্ত বাংলাদেশে সৃষ্ট অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান তার পদত্যাগ ভাবনা থেকে সরে আসার কথা বলে পরিবেশে আপাতত স্থিতিবস্থা সৃষ্টি করেছেন। তার উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনার পর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংস্কার, বিচার, নির্বাচন তিনটি প্রাধিকার বর্তমান সরকারের। এগুলো করার পথে সরকারের কার্যক্রম পরাজিত স্বৈরশক্তির ষড়যন্ত্রে বাধাগ্রস্ত হলে সরকার জনগণকে জানিয়ে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারপ্রধান ঘোষিত ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রভাব গ্রহণযোগ্য হবে না। 

সরকার প্রধান সব রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের নিবিড় আলোচনার সূচনা করেছেন। ইতিমধ্যেই বিএনপি, জামায়াত এবং নবগঠিত এনসিপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেছেন তার এবং তার সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি অনুভব করেছেন সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কিছু মহল নানাভাবে নানা সংকট সৃষ্টি করে জনজীবন দুঃসহ করেছে এবং সরকারকে বিব্রত করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তার কাজ করার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তিনি পদত্যাগের ভাবনায় ছিলেন।

পরাজিত শক্তি এবং দোসরা প্রতিশোদের পথ খুঁজবে সেটি স্বাভাবিক পিছু ফিরে দেখলে দেখা যাবে মব জাস্টিস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, খুন, রাহাজানি, কথায় কথায় রাজপথ অবরোধ, ব্লকেড এগুলো অনেক কিছুই কিছু চিহ্নিত রাজনৈতিক দল এবং সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের সৃষ্টি। এছাড়া সরকার নিজেরাও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের অতিরিক্ত কিছু কাজে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের বিতর্কিত করে তুলেছে। 

সেনাবাহিনীর সঙ্গে সৃষ্ট তিক্ত সম্পর্কের জন্য উভয় পক্ষ সমানভাবে দায়ী। স্মরণে রাখতে হবে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণে সরকার পরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। জনগণ সরকার পরিবর্তনের ঘোষণা শুনেছেন সেনাপ্রধানের থেকে, আগস্ট ২০২৪ থেকে সেনাবাহিনী রাজপথে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। তবে একই সঙ্গে মব ভায়োলেন্স প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতায় চোখে পড়েছে। সম্প্রতি সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসে সরকার। 

সেনাপ্রধান কিছু বিষয় বিশেষত মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি নিয়োগের উদ্যোগ বিষয়ে সেনাবাহানীসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত না করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, দেশের স্বার্থে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন শেষে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যেতে চায়। সেনাপ্রধানের কথাগুলোর সঙ্গে দ্বিমত প্রশ্ন করা বা তার উক্তিগুলোকে বিতর্কিত করার সুযোগ নেই। কিন্তু একশ্রেণির ব্লগার এবং জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক মহল সেনাপ্রধানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টারত আছে। 

সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই বিভিন্ন মহল নানা দাবি দাওয়া নিয়ে ঘেরাও, ব্লকেডের মতো জনবিরোধী কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপির প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের পদায়ন নিয়ে আদালতের রায়ের বিষয়ে বিএনপি এবং এনসিপি মুখোমুখি হয়ে পড়ে। সড়ক অবরোধ ছাড়াও উভয় পক্ষ তাদের মতে পক্ষপাতিত্বের দোহাই তুলে কিছু উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। ড. ইউনূস সংগত কারণেই মনে করেন তাকে জিম্মি করা হচ্ছে। নাজুক সময়ে যখন জাতীয় ঐক্য জরুরি তখন এই ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পথ সুগম করে। 

যাহোক অনেক নাটকীয়তার পর সরকার প্রধান আপাতত পদত্যাগ ভাবনা থেকে সরে আশায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে গেছে মনে করা যায়। অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর কেউ কেউ, সেনাবাহিনী, বিএনপি, জামাত, এনসিপি, হেফাজত সবারই অনেক ভুলভ্রান্তির সমাহার বর্তমান অবস্থা। একটি ঝাঁকুনি প্রয়োজন ছিল। বর্তমান অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান পদত্যাগ করে সরে গেলে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যেত। 

এখন সব পক্ষের বোধোদয় হলে ভালো। সরকারের বোঝা উচিত বাংলাদেশের মানুষ কানা, বধির বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়। আন্তর্জাতিক মহলকেও দীর্ঘদিন ভুল বোঝানো যাবে না। একই সঙ্গে বিএনপি, জামাতকেও বুঝতে হবে তাদের কালো অতীত বিষয়েও জনগণ অবহিত। এনসিপি, হেফাজত বাদে অন্যান্য প্রান্তিক রাজনৈতিক দলের কোনো জনভিত্তি নেই। এই অবস্থায় সরকারের উচিত হবে সব স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত রেখে দেশকে যথাশিগগির নির্বাচন ট্রেনে আরোহণ করানো। দেশের বাইরে থাকা কিছু অসৎ উদ্দেশ্যের ব্লগার এবং দেশে ফেরা কিছু অশুভ মহলের প্ররোচণায় প্রভাবিত না হয়ে সেনাবাহিনীসহ সব পক্ষের সহায়তায় দ্রুত অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। যদি প্রয়োজন হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। 

মনে রাখতে হবে, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা করবে নির্বাচন কমিশন। বর্তমান সরকার যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠানো সরকার-ঘনিষ্ঠ প্রান্তিক রাজনৈতিক দলের উচিত হয়েছে কি না ভেবে দেখা দরকার। একই সঙ্গে বিএনপিসহ ক্ষমতাপ্রত্যাশী মহলগুলোর দেওয়ালের লিখন পড়ে নিজেদের সংস্কার করা প্রয়োজন। আশা করি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শেষে বর্তমান সরকারের নিরাপদ প্রস্থান হবে।

শেয়ার করুন