যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গত ১৯ মে ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের জন্য চালু থাকা টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) কর্মসূচি বাতিলের অনুমতি দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভেনেজুয়েলান অভিবাসী এখন নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল বিচারক এডওয়ার্ড চেন কর্তৃক টিপিএস বাতিলের ওপর জারি করা অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের আদেশ স্থগিত করেছে। তবে বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন প্রশাসনের এই জরুরি অনুরোধ মেনে নেওয়ার বিপক্ষে মতো দিয়েছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দেন যে, ভেনেজুয়েলার টিপিএস সুবিধা বাতিল করা হবে, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৭ এপ্রিল। তবে বিচারক চেন মার্চ মাসে আদেশ দেন সিদ্ধান্তটি স্থগিত রাখার। তার মতে, নোমের এই সিদ্ধান্ত ‘নেতিবাচক বর্ণনা এবং অসাংবিধানিক বিদ্বেষ দ্বারা প্রভাবিত’ হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন এরপর নবম সার্কিট কোর্ট থেকে জরুরি স্বস্তি না পেয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। প্রশাসনের সলিসিটার জেনারেল ডি জন সাওয়ার আদালতে বলেন, যতদিন এই আদেশ কার্যকর থাকবে, ততদিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারিকে শতসহস্র ভেনেজুয়েলান নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দিতে হবে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। টিপিএস কর্মসূচি ১৯৯০ সালে কংগ্রেস অনুমোদন করে, যার আওতায় যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য ‘অসাধারণ এবং সাময়িক’ বিপর্যয়ে আক্রান্ত দেশের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের তৎকালীন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেহান্দ্রো মায়োরকাস ভেনেজুয়েলাকে টিপিএসে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে তা আরো ১৮ মাসের জন্য বাড়ান। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে এসে এই সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন ন্যাশনাল টিপিএস অ্যালায়েন্স এবং টিপিএস সুবিধাভোগীরা এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ফেব্রুয়ারিতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক চেন সরকারের পদক্ষেপকে ‘আইন লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
টিপিএস সুবিধাভোগীদের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে বলেন, ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের আদেশ বাতিল হলে লক্ষাধিক মানুষ সঙ্গে সঙ্গে আইনি অবস্থান হারাবে এবং তাদের এমন এক দেশে ফেরত যেতে হবে, যেখানে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এখনো ভ্রমণ ঝুঁকির সতর্কতা জারি রেখেছে। তারা আরো বলেন, টিপিএস আইন অনুযায়ী, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারির আগে কোনো সম্প্রসারণ বাতিল করার নজির নেই- এই হবে আইনটির ইতিহাসে প্রথম উদাহরণ।
এই মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে ওঠা একাধিক বিতর্কিত মামলার একটি। এ রায়ের ফলে শুধু টিপিএস সুবিধা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে নির্বাহী ক্ষমতার পরিসর ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন হতে চলেছে।
নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট মুরাদ আওয়াদে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনকে ৩৫ লাখের বেশি ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর জন্য টেম্পোরারি প্রোটেকটেড স্ট্যাটাস (টিপিএস) বাতিলের পথে এগিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছে। এর ফলে তাদের কর্মসংস্থান অনুমতি হারানোর পাশাপাশি নির্বাসনের ঝুঁকিও বেড়ে গেল। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় এমন এক সময়ে এলো যখন মাত্র এক মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সেই অনুরোধ খারিজ করে দেয়, যাতে তারা ভেনেজুয়েলানদের টিপিএস বাতিলসংক্রান্ত জেলা আদালতের স্থগিতাদেশটি রদ করতে চেয়েছিল। মুরাদ আওয়াদে সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপকে মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন এবং অভিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।