৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৫১:১০ অপরাহ্ন


সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে শুরু হচ্ছে স্কুলে সেলফোন নিষেধাজ্ঞা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে শুরু হচ্ছে স্কুলে সেলফোন নিষেধাজ্ঞা ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সেলফোন ব্যবহার


নিউইয়র্ক গভর্নর ক্যাথি হোচুল ইতিমধ্যেই স্টেটের ২৫৪ বিলিয়ন ডলারের বাজেট স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ‘বেল-টু-বেল’ স্কুল সেলফোন নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞাটি আগামী ২০২৫-২৬ স্কুল বছর, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, স্কুলের সময়কালে, অর্থাৎ সকালের বেল থেকে দিনের শেষ বেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন বা অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না। গভর্নর হোচুল এই উদ্যোগের পক্ষে বলেন, আমরা প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নজর দিচ্ছি। এই পদক্ষেপটি শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল বিভ্রান্তি কমিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সাহায্য করবে।

গভর্নর হোচুল বলেন, আমরা আমাদের কমিউনিটিগুলোকে নিরাপদ করতে চাই, কিন্তু আমাদের দরকার এমন শ্রেণিকক্ষ যেখানে তরুণ মনগুলো বিকশিত হতে পারে, আর এটি করতে হলে আমাদের ডিজিটাল বিভ্রান্তি একেবারে নির্মূল করতে হবে, যা আমাদের সন্তানদের মনোযোগ চুরি করে। আমরা আমাদের সন্তানদের ধূমপান, মদ্যপান ও মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর থেকে রক্ষা করেছি, এখন আমরা তাদের এমন আসক্ত প্রযুক্তি থেকে রক্ষা করছি, যা তাদের মনোযোগ হাইজ্যাক করতে ডিজাইন করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইন্টারনেট-সক্ষম ডিভাইস যেমন স্মার্টওয়াচ এবং ট্যাবলেট স্কুলের মাটিতে ব্যবহার করা যাবে না। তবে যদি কোনো ছাত্র একটি ডিভাইসের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পর্কিত সমস্যা বা ভাষান্তরের জন্য প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের জন্য কিছু ছাড় দেওয়া হবে। এছাড়াও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব নিয়ম তৈরি করতে পারবে, যেমন ছাত্রদের সেলফোন পাউচ, লকার বা কাবিতে রাখার ব্যবস্থা করা। এছাড়া স্কুলে এমন সেলফোনগুলো যা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না এবং পাঠ্যক্রমের জন্য যে ডিভাইসগুলো স্কুল দ্বারা সরবরাহ করা হবে, সেগুলোর ব্যবহার অনুমোদিত থাকবে।

এ পদক্ষেপটি এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন নিউইয়র্ক স্টেট ইউনাইটেড টিচার্স ইউনিয়নও সেলফোন নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে কথা বলেছে এবং বলেছে, আমরা একটি সংকটময় অবস্থায় আছি। তাদের মতে, প্রযুক্তির অপ্রতিরোধ্য প্রভাব শিক্ষার্থীদের মনোযোগ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। বৈধ যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য, স্কুলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে অভিভাবকরা যদি প্রয়োজন পড়ে, তাদের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। নিউইয়র্ক স্টেট ইউনাইটেড টিচার্স ‘বেল-টু-বেল’ সেলফোন নিষেধাজ্ঞার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক ও নীতিনির্ধারক অংশগ্রহণ করেন, যেখানে এর বোর্ড স্টেট জুড়ে বেল-টু-বেল সেলফোন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা পারসন বলেন, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, শ্রেণিকক্ষে অংশগ্রহণ এবং স্কুল নিরাপত্তা উন্নত করতে সহায়ক হবে। গিল্ডারল্যান্ড হাই স্কুলের স্কুল সাইকোলজিস্ট ড. নিক হ্যারিস আরো যোগ করেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীরা বিষণ্ন, উদ্বিগ্ন এবং বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। ইউনাইটেড ফেডারেশন অব টিচার্সের প্রেসিডেন্ট মাইকেল মালগ্রু বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে এই ধরনের পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ফোন সকালের বেল থেকে দিনের শেষ বেল পর্যন্ত সংগ্রহ করে রাখা হয়। শিক্ষকরা এই পদক্ষেপকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মনোযোগমুখী ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন।

এই বেল-টু-বেল সেলফোন নিষেধাজ্ঞা আগামী স্কুল বছর, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এটি নিউইয়র্ককে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্টেট হিসেবে পরিণত করবে । এছাড়াও গভর্নর হোচুল এই পদক্ষেপটিকে এক ধরনের সামাজিক বিপ্লব হিসেবে দেখছেন, যা প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে এক বড় সমাধান হতে পারে। এছাড়াও, নিউইয়র্ক প্রথম রাজ্য হিসেবে ‘বেল-টু-বেল’ সেলফোন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে, যা শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল নির্ভরতা কমিয়ে তাদের মধ্যে আরো ভালো মনোযোগ এবং মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তুলবে বলে গভর্নর হোচুল আশা প্রকাশ করেছেন। গভর্নর ক্যাথি হোচুলের বেল-টু-বেল সেলফোন নিষেধাজ্ঞা উদ্যোগটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল বিভ্রান্তি কমাতে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক হবে। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার আজকাল ছাত্রদের মধ্যে মনোযোগের অভাব, স্ট্রেস এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের শেখার ক্ষমতাকে ব্যাহত করছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, নিউইয়র্ক গভর্নর শিশুদের এমন প্রযুক্তিগত আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে চাচ্ছেন, যা তাদের শেখার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের এখন এমন প্রযুক্তি থেকে রক্ষা করা উচিত, যা তাদের মনোযোগ হাইজ্যাক করে এবং তাদের মনোবলকে দুর্বল করে তোলে। বেল-টু-বেল নিষেধাজ্ঞা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং মনোযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যেখানে তারা আরো ভালোভাবে শিখতে ও বিকশিত হতে পারবে।

শেয়ার করুন