৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:১০:৪৮ পূর্বাহ্ন


অ্যাসাইলামের সময় পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করুন
ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়ন জোরালো হচ্ছে
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
ইমিগ্র্যান্ট বিতাড়ন জোরালো হচ্ছে


সারা বিশ্বে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে। এর উদ্দেশ্য বিশ্বে কূটনৈতিক সেবাদান কমিয়ে দেওয়া। এ প্রস্তাবিত দূতাবাস কার্যক্রম কমানো হলে তাতে অনেক দূতাবাস কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হতে পারে। কিংবা চাকরিচ্যুত করতে পারে। তাতে করে বর্তমানে যে ভিসা প্রসেসিং বিলম্বিত হচ্ছে, তা আরো বিলম্ব হবে। শুধু তাই নয়, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা গ্রিনকার্ড প্রক্রিয়া বা পরিষেবা প্রদান এবং বিশ্বে বসবাসরত আমেরিকানদের সেবা প্রদান করা দীর্ঘায়িত হতে পারে। তাছাড়া এতে ইমিগ্র্যান্টদের দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে এবং তাতে কনস্যুলার সার্ভিস পেতে অধিক অর্থ ব্যয় হবে। যদিও তা এখনো পর্যালোচনাধীন রয়েছে, তা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দল বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা আমেরিকান কূটনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ছাত্রদের স্ট্যাটাস পুনর্বহাল করেছে অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু তাতে বহিষ্কারের ভয় কমেনি। ট্রাম্প প্রশাসন মামলার সম্মুখীন হয়ে সাময়িকভাবে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্রের বৈধ স্ট্যাটাস পুনর্বহাল করেছে। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলেছেন, ভিসা টারমিনেশন এখনো পুনরায় চালু হতে পারে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এদিকে ফেডারেল ডাটাবেস থেকে ছাত্রদের রেকর্ড নষ্ট করে দিয়েছে। আর তাতে ছাত্ররা ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে ইমার্জেন্সি কোর্ট অর্ডার জারির দাবি তুলেছে। যদিও এসব ছাত্রের প্রবেশাধিকার বহাল করা হয়েছে। অনেক ছাত্র ভবিষ্যতে ডিপোর্টেশন ঝুঁকিতে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। মামলা এখনো চলছে। বিশেষ করে উদ্বিগ্ন ছাত্ররা তাদের সামান্য স্খলন কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য বহিষ্কার করার মতো টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অনেককে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জন্যও বহিষ্কার করা হচ্ছে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন ইমিগ্রেশন জাজদের একদিকে বহিষ্কার করছে, অন্যদিকে ডিউ প্রসেসের ভয় বৃদ্ধি করে চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক ডজন ইমিগ্রেশন জাজকে বরখাস্ত করেছে। এর সঙ্গে কোর্ট স্টাফকেও চাকরিচ্যুত করেছে। আর তাতে কোর্টের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মতো ভয়াবহ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইমিগ্র্যান্টরা এতে আইনি সহায়তায় বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থায় সৃষ্টি করে ব্যাপক ব্যাকলগের মধ্যে আরো ব্যাকলগ সৃষ্টি করে চলেছে। আর জাজদের প্রথম ট্রাকে ডিপোর্টেশনের প্রেশার দিয়ে চলেছে। আইনজ্ঞরা এবং আইনপ্রণেতারা বলছেন, জাজদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ইমিগ্র্যান্টদের বহিষ্কারের জন্য ব্যাপক প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত। আর তাতে ইমিগ্র্যান্টের বিতাড়ন সহজ হবে। একই সঙ্গে ইমিগ্র্যান্টদের যথার্থ শুনানি থেকে বঞ্চিত করবে। কোনো কোনো বিচারককে কোনো মামলার মাঝখানে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর এই ধরনের বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ক্লাস অ্যাকশন মামলা ফাইল করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন কোর্টের মধ্যে যেগুলো সম্পূর্ণ বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ভোগ করে না, তারা বর্তমানে প্রশাসনের পরিবর্তনের সঙ্গে বেশি মাত্রায় অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে।

আমেরিকার সিটিজেন ও ইমিগ্রেশন দলনের শিকার হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী এক আমেরিকার নাগরিককে গ্রেফতার করে ১০ দিন আটক রাখা হয়েছে। আর তাতে ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশনের ওপর আরোপিত নতিজার ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এই ১৯ বছর বয়সী হারমোমিল্লোকে মেক্সিকান নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার থেকে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ তার সিটিজেনশিপের প্রমাণকে অস্বীকার করে। একই ধরনের কাণ্ড রেড ইন্ডিয়ান ও অন্যান্য দেশীয় উপজাতিদের ও পুর্টোরিকানদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। পুর্টোরিকানরা এতে ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে। তাদের না আবার মেক্সিকোতে পাঠানো হয়। প্রশাসন এভাবে ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই, কিংবা কোনোরকম ইমিগ্রেশন ভায়োলেন্স করেনি- এমন লোককেও ক্রমাগতভাবে হয়রানি করে চলেছে। 

ইমিগ্র্যান্টরা এদিকে ক্রমাগতভাবে গ্রেফতার হওয়ার সমূহ ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষ করে রুটিন চেকআপের সময় এ গ্রেফতার চলছে বলে আইনজ্ঞরা হুঁশিয়ারি করেছেন। ইমিগ্র্যান্ট আইনজ্ঞরা ক্লায়েন্টদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, রুটিন চেকইন ও কোর্ট শুনানির সময় যথার্থ মামলা না হলে কোনো অপরাধের রেকর্ড ছাড়াও ইমিগ্র্যান্টদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রিনকার্ড ইন্টারভিউয়ের সময় এক আমেরিকান গ্রিনকার্ডধারী তার আমেরিকান নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে শর্ত নিরোধের বা কনডিশন রিমুভের সময় গ্রেফতার হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে তারা আবেদন অনুমোদিত হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন মারাত্মক অপরাধ করেনি- এমন ইমিগ্র্যান্টকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে এক বেআইনি সমস্যার উদ্ভব করেছে। আটকের ভয়ে অনেক ইমিগ্র্যান্ট তাদের নির্ধারিত, অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত হয় না। তাতে যেসব পরিবার আইনগত জটিলতায় আছে, তারাও আরো জটিল পরিস্থিতির শিকার। 

এই পরিপ্রেক্ষিতে উপদেশ হচ্ছে, যারা কোনো অ্যাসাইলাম বা অন্য মামলা পেশ করবেন, তারা পরিপূর্ণ মামলা লিখে যথাযথভাবে পেশ করবেন। যারা একসময় ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন, তারা তখন তাদের মামলা নতুন করে যুগোপযোগী করতে না পারলে সমূহ বিপদ রয়েছে।

শেয়ার করুন