বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বিশ্ববরেণ্য নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় চীন সফর থেকে কাঙ্ক্ষিত সার্বিক অর্জন না হলেও যতটুকু হয়েছে তা-ও কিন্তু একেবারে অপর্যাপ্ত নয়। ভৌগোলিকভাবে ৩.৭৫ দিক থেকে ভারত বেষ্টিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই মূলনীতি নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে নিজেদের ইউনিক ভৌগোলিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় পরিণত হতে পারবে এই বিশ্বাস বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আছে।
এবারের সফরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সম্যসা নিরসনে চীনের অধিকতর জোরালো ভূমিকার অঙ্গীকার এবং তিস্তাবাঁধ বিষয়ে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতার বিষয়। বলাবাহুল্য, এই দুই বিষয়ে সুস্পট অগ্রগতি হয় নি। তবে যা হয়েছে সেটি মন্দ কী।
১৫ হাজার কোটি টাকার বিশ্বমানের মেডিকেল প্রতিষ্ঠা, ১২হাজার কোটি টাকার চারটি মহাসাগরীয় বাণিজ্য জাহাজ ক্রয়, ১০ হাজার কোটি টাকার তিস্তা ব্যারেজ তৈরি, বিনা শুল্কে ২০২৮ সাল পর্যন্ত মুক্তপণ্য বাণিজ্যসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ১ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা চীনে সুপরিচিত। চীনের একটি প্রদেশ সরকারের তিনি উপদেষ্টা ছিলেন।
চীনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রণীত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা পড়ানো হয়। তিনি প্রধান উপদেষ্টা থাকায় বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে সেটি অনুমেয়। বিশেষত যখন পূর্ববর্তী সরকার ভারতের একছত্র প্রভাবমুক্ত হয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে পারছি না। তখন সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস পূর্বমুখী উন্নয়ন সহযোগিতার দুয়ার পুনরায় খুলে দিলেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা স্মরণযোগ্য। রেলসংযোগসহ পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এক একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের শিল্পায়ন, যোগাযোগ, খাত, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে অন্যান্য দেশের মতো চীনের আছে বহুমুখী সহায়তার সুযোগ।
বিশেষত কুনমিনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ, সম্ভব হলে মায়ানমার হয়ে সড়ক এবং রেল যোগাযোগ স্থাপন হলে বাংলাদেশ বন্দর সুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে, কিন্তু দেখতে হবে এই ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। অপর প্রধান প্রতিবেশী এবং বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেন বৈরিতা সৃষ্টি না হয়। চীন অবশ্যই নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
চীন নবায়ন যোগ্য জ্বালানি প্রসারে বাংলাদেশকে বিশাল সহায়তা করতে পারে। বিশেষত চীন সৌরবিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য তাদের বিশ্বমানের সুবিধাদি বাংলাদেশে স্থাপন করে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি শিল্প স্থাপন করতে পারে, বিশ্ব মানের হাসপাতাল গড়ে তুলে চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ফল, সবজি মাছ আমদানি করতে পারে। বাংলাদেশের সুলভ শ্রম ব্যবহার করে শিল্প স্থাপন করে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাঁটিটি কমাতে পারে।
আমি বলছি না এক সফরে সবকিছু অর্জিত হয়েছে। তবে যতটুকু হয়েছে সেইটুকুই মন্দ কি। সাদা কে সাদা বলার মানসিকতাটুকু সবার থাকা প্রয়োজন। অন্তত ভারত প্রভাবিত বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন কতটুকু স্থায়ী হয় সেটি দেখতে হবে।