৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন


জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৫
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল : অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প


যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পতন থেকে উদ্ধার করে আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলতে সৃষ্টিকর্তা তার জীবন বাঁচিয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের রোটুন্ডায় শপথ নেওয়ার পর অভিষেক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা অবৈধ এবং যাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ডিপোর্টেশন অর্ডার রয়েছে। যারা অপরাধী এবং যাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন রয়েছে তাদের যে কোনো মূল্যে বহিষ্কার করবে ট্রাম্প প্রশাসন।

পূর্বঘোষণা অনুসারে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বেশ কিছু চমক দিয়েছেন তিনি। সামনে থাকতে পারে আরো চমক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০০টি নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দিতে পারেন ট্রাম্প। দায়িত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন ধরনের নির্বাহী আদেশ জারি করা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জন্য সাধারণ একটি বিষয়। এ ধরনের আদেশের আইনি ভার আছে। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত এসব আদেশ চাইলে তা বাতিল করতে পারে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিমাণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করেছিলেন তা নজিরবিহীন। আর তার অনেকটা তিনি বাস্তবায়নও করেছেন। কেউ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করলে তিনি জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। দেড় শ বছরের পুরোনো এই সাংবিধানিক অধিকারকে ‘হাস্যকর’ বলে মনে করেন ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন ও সামনে করতে পারেন তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

অভিবাসন

ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি। আর একটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত। এগুলো সই করার পরে ট্রাম্প বলেন এসব বিষয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিসরে অভিবাসী বিতাড়ন কর্মসূচি চালু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন ট্রাম্প। জাতীয় সীমান্ত জরুরি অবস্থা ও দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষায় সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অভিবাসন অনেক পুরোনো একটি নীতির অবসান ঘটাতে যাচ্ছেন। এই নীতির কারণে স্কুল ও চার্চে অভিযান চালাতে পারত না কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে তিনি জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। দেড় শ বছরের পুরোনো এই সাংবিধানিক অধিকারকে ‘হাস্যকর’ বলেছিলেন ট্রাম্প। এই বিধান একদিন বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। শপথ নেওয়ার পরে এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। তবে শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়েই এই নীতি পরিবর্তন করা কঠিন। কারণ মার্কিন সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আবার মানবাধিকার সংগঠনগুলো মামলাও করতে পারে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করে বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এ পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর দীর্ঘদিনের প্রচলিত ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১৯ ফেব্রুয়ারির পর জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য এটি কার্যকর হবে। তবে এটি দ্রুত আদালতের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে উল্লেখ আছে, যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করবে, তারা নাগরিকত্ব লাভ করবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, ১৪তম সংশোধনীর পুনর্ব্যাখ্যার মাধ্যমে দুই ধরনের শিশুদের নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে: প্রথমত, যেসব শিশু অবৈধ অভিবাসী মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় এবং তাদের পিতা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা নন। দ্বিতীয়ত, যেসব শিশু বৈধ ভিসায় থাকা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয় এবং তাদের পিতাও নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা নন।এই আদেশে সমকামী বা নন-বাইনারি দম্পতিদের বিষয়ে কোনো বিবেচনা করা হয়নি। আদেশে পিতা-মাতা বলতে পুরুষ ও নারীর ‘জৈবিক অভিভাবকত্ব’ বোঝানো হয়েছে। নাগরিকত্বের অধিকার হারালে এসব শিশুদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, পাসপোর্ট, এমনকি জন্ম সনদ পাওয়াও জটিল হয়ে পড়বে। এতে তাদের ভ্রমণ বা পরিচয় প্রমাণের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আদেশ কার্যকর হলে নবজাতকরা আইনি অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। অভিভাবকরা, বিশেষ করে মা, জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন। যদিও আদালত এই আদেশ স্থগিত করতে পারে, তবুও এটি নবজাতক এবং তাদের পরিবারে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে।

মেক্সিকো নীতি 

ট্রাম্প খুব দ্রুত তার ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি আবারও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রথম মেয়াদে তিনি এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থী মেক্সিকোর অধিবাসী নয় এমন প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে এ সংক্রান্ত শুনানি হওয়ার আগ পর্যন্ত মেক্সিকোয় অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। 

সীমান্ত বন্ধ 

১৯৪৪ সালে নেওয়া পদক্ষেপটি টাইটেল ৪২ নামে পরিচিত। এর অধীনে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে অভিবাসন কমাতে পারে মার্কিন সরকার। সবশেষ করোনা মহামারির সময় টাইটেল ৪২ ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি রোগের সন্ধানে আছে, যেটি মেক্সিকোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করার পরিকল্পনাকে ন্যায্যতা দিতে সহায়তা করবে।

মাদক চক্র 

ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আল-কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এবং হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর তালিকায় এসব চক্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সীমান্ত প্রাচীর 

২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রাচীরটির একটি অংশ নির্মাণ করা হলেও এখনো বড় একটি অংশ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ট্রাম্প হয়তো এবার সেই কাজটি শেষ করতে পারেন।

শুল্ক 

যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেটি বজায় রেখেছিলেন।

তবে এবার ট্রাম্প সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব শুল্ক ভোক্তাপণ্যকে আরো ব্যয়বহুল করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। কিছু দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের কথা ভাবছে।

ক্রিপ্টো মজুত 

ট্রাম্প সব সময় ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বিটকয়েনের একটি কেন্দ্রীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য ট্রাম্প খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের মতো একটি কৌশলগত মজুত। ট্রাম্পের ভাষ্য, মার্কিনিদের উপকারে এটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে।

জলবায়ু নীতি 

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো তহবিলের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা, আইন এবং তহবিল কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। এটিকে তিনি তার সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি হিসেবে দেখেন। ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে, বাইডেনের নেওয়া এসব পদক্ষেপের বেশির ভাগই বাতিল করতে চান তিনি। অফশোর ও কেন্দ্রীয় ভূমিতে খনন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয় আসেন ট্রাম্প। এটি একটি আন্তর্জাতিক মাইলফলক চুক্তি, যার উদ্দেশ্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির মাত্রা কমিয়ে আনা। ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার প্রথম দিনই জো বাইডেন পুনরায় এই চুক্তিতে যোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। তবে ট্রাম্প আবারও চুক্তি থেকে সরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিলে সই করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতাকে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন যে, হোয়াইট হাউসে ফিরে আরো অনেক আদেশে সই করবেন তিনি।

ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা 

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই নিজের প্রায় ১ হাজার ৫০০ সমর্থককে কারামুক্ত করার জন্য এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর শত শত মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি তাদের অনেককেই ক্ষমা করতে আগ্রহী। তবে প্রত্যেকের জন্য এ কথা বলতে পারছি না। কারণ, তাদের মধ্যে দু-একজন সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।’ ওই হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তত ৬০০ জনের বিরুদ্ধে হামলা এবং কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

গোপন নথি 

রোববার অভিষেক-পূর্ব বিজয় সমাবেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত গোপন নথি প্রকাশ করবেন তিনি, যা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। তিনি আরও বলেছেন, ১৯৬৮ সালে সিনেটর রবার্ট কেনেডি এবং নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্যের ক্ষেত্রেও একই কাজ করবেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ 

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় দাবি করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার প্রথম দিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যুদ্ধ বন্ধে তার ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে যুদ্ধ বন্ধে প্রথম দিনগুলোতে কী পদক্ষেপ নেবেন, এখনো তা স্পষ্ট নয়। শপথ নেওয়ার দিন ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছাতে চান।

কিউবা ও ভেনেজুয়েলা 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা’ দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন। ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারেন। তিনি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে পারেন।

ডিইআই 

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্কুল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। ‘বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই)’ অধীনে শ্রেণিবদ্ধ এসব চর্চার প্রতি অনেক সময় রক্ষণশীলরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়েছে। ট্রাম্প এগুলো বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং মেটা, ওয়ালমার্ট ও অ্যামাজনসহ প্রধান প্রধান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলো ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ ব্যবহার করে ডিইআই প্রোগ্রাম রয়েছে এমন স্কুল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় তহবিল নিষিদ্ধ করতে পারেন। তিনি ‘সমালোচনামূলক জাতিতত্ত্ব’ শেখানো হয়, এমন স্কুলগুলোর জন্যও তহবিল নিষিদ্ধ করতে পারেন।

গর্ভপাত 

আগের বেশির ভাগ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মতো ট্রাম্প ‘মেক্সিকো সিটি নীতি’ পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে গর্ভপাত বিষয়ক পরামর্শ সেবাদাতা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে কেন্দ্রীয় সহায়তা দেওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তিনি একটি গর্ভপাত বিষয়ক বিধিও পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সরবরাহকারী এবং নিম্ন-আয়ের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির আওতায় রোগীদের কাছে গর্ভপাতের কথা বলা যাবে না।

খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার নারী 

ট্রাম্প বারবার স্কুল এবং স্বাস্থ্যসেবায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণের সমালোচনা করে এটিকে ‘ট্রান্সজেন্ডার পাগলামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশেষ করে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

টিকটক

টিকটক নিয়ে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এটি ৭৫ দিনের জন্য। এতে চীনা মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক নিষিদ্ধ করার আইন স্থগিত হলো। ট্রাম্প এর আগে টিকটকের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তার এ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় টিকটকে তার ভিডিওগুলো কোটি কোটি বার দেখা হয়েছে।

অন্যদিকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমেরিকায় এখন থেকে সুবর্ণ যুগের সূচনা হয়েছে। আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরও উন্নতি করবে। সারা বিশ্বে আবার সম্মান অর্জন করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে ঈর্ষা করবে সব দেশ। কাউকে আর মার্কিনদের ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের আসনে বসা রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প বলেন, ‘সাম্প্রতিক নির্বাচনে জনগণ আমাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এখানে সংঘটিত হওয়া ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে জনগণকে তাদের আস্থা, তাদের সম্পদ, তাদের গণতন্ত্র এবং বস্তুত তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দিয়েছে। এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার পতনের শেষ হয়েছে।’ 

নিজের অভিষেকের দিনকে ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা ও আমাদের জাতির মহান লক্ষ্যকে আর অস্বীকার করা হবে না। আমরা অবিলম্বে ন্যায়পরায়ণ, দক্ষতা ও আমেরিকার সরকারের প্রতি আনুগত্য ফিরিয়ে আনব।’ গত আট বছরে তিনি যেসব পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন, তা আমেরিকার ২৫০ বছরের ইতিহাসে অন্য যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের আমলে।

আজকের এই বিজয় সহজ ছিল না বলে অভিষেক ভাষণে উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের থামাতে চেয়েছিলেন, তারা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি আমার জীবনও কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। মাত্র কয়েক মাস আগে, পেনসিলভানিয়ার একটি সুন্দর মাঠে একজন আততায়ীর বুলেট আমার কান বিদ্ধ করে চলে যায়। কিন্তু তখন আমি অনুভব করি এবং এখন সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে যে একটি কারণে জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় তিনি শপথ নেন। শপথ নেওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। ট্রাম্প অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্প, টিফানি ট্রাম্প, লারা ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার, ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।

বিদেশি অতিথি হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইসহ অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে সরে যেতে বলেছে ট্রাম্প শিবির

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলেছে নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবির। এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত দু’জন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতিকদের ঢেলে সাজাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। 

সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগে যেসব কূটনীতিক সরে দাঁড়িয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জন বাস। তিনি রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এশিয়া থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন নীতি দেখভাল করছিলেন তিনি। তার বিদায়ের খবর প্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের আন্ডার সেক্রেটারি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার সব কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের অধীন দায়িত্ব পালন করা এই দুটি স্তরের সব কর্মকর্তাকেই সরে যেতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনবল ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা টিমের তিনজন কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলেছে ট্রাম্প শিবির। তবে এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কিংবা ট্রাম্প শিবির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প আরো শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি ফেরানো এবং ইসরায়েলের প্রতি আরো সমর্থন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কিছু ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশে পরিণত করা এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চাপ দেওয়া।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওর নিয়োগ নিশ্চিত হয়। এ সময় কংগ্রেসে শুনানিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সক্ষমতা সীমিত করে রাখা হয়েছিল। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে দফতরের কর্মীদের আরো বড় ভূমিকা থাকা উচিত। যেসব কূটনীতিককে বিদায় নিতে হচ্ছে, তারা পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা থাকছেন, তবে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাদের সামনে অবসর নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যদি তারা পররাষ্ট্র দফতরের চাকরি চালিয়ে যেতে চান, তাহলে তাদের দফতরে নতুন কাজের জায়গা খুঁজে বের করতে হবে এবং তা নির্ভর করবে নতুন নেতৃত্বের ওপর।

শেয়ার করুন