৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২১:৩৩ অপরাহ্ন


রেমিটেন্স যোদ্ধারা পায় অপমান-অবহেলা!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
রেমিটেন্স যোদ্ধারা পায় অপমান-অবহেলা! বক্তব্য রাখছেন মির্জা জিল্লুর রহমান


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন পর্যায়ের প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় মর্মাহত হয়েছে দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধারা। অথচ কর্ষ্টাযিত অর্থ পাঠিয়ে এই দেশের নাজুক অর্থনীতিকে সচল করতে আপ্রান চেষ্টা করে যায় তারা। কিন্তু এর বিনিময়ে দেশে ঢুকতেই তাদের ভাগ্যে জোটে পায় অপমান, অবহেলা ও অবমাননা। 

গত ১০ নভেম্বর রোববার দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে এমন ক্ষোভ আর আক্ষেপের কথা। বিশ্বের বাংলাদেশী প্রবাসীদের সম্মিলিত ফোরাম ‘ইউনাইটেড এক্সপাট্রেট অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়াল্ড এর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ও কো-অর্ডিনেটর ব্যারিস্টার মির্জা জিল্লুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী মীর নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলন থেকে রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন, পার্লামেন্ট, বিদেশ মিশন, সামরিক বেসামরিক প্রতিটি সেক্টরে বৈষম্যহীনভাবে নাগরিক আনুপাতিকহারে প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছেন। পাশাপাশি তারা সরকারের সংস্কারের ড. ইউনুসের নেতৃত্বে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা যেন শতভাগ বাস্তবায়নও আশা করেন। তারা বলেন, আমরা প্রবাসীরা এই সরকারের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করছি।

সংবাদ সম্মেলন থেকে রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতিকে বাচানোর জন্য ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশীক মুর্দ্রা আহরণ বা রেমিটেন্স ২৫% থেকে ৫০% বাড়াতে সরকারের সহযোগীতা চেয়েছেন। তারা বলেন, সহযোগিতা পেলে বিদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে দ্রুত এই ব্যাপারে রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য পজেটিভ কেম্পেইন শুরু করা যেতে পারে। রেমিটেন্স যোদ্ধারা বলেন, তাদের ভোটাধীকার নিয়ে বিগত কোনও সরকারই সঠিক সিন্ধান্ত নিতে পারেনি। তারা বলেন, আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই, আমরা এই দেশের নাগরিক।

তারা বলেন, বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিকে আরো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে আরব আমিরাত, ইউরোপ আমেরিকা, যুক্তরাজ্যে আগামী ৫ বছরে আরো ২০ লাখ লোক পাঠানোর জন্য একটি দৃঢ় পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিতে হবে। তারা বলেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে বসবাসরত সকল বাংলাদেশীদের হাই কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত এনআইডি কার্ড প্রদান না করা হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা বিদেশী পাসপোর্টকে বাংলাদেশে আইডি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ হাই কমিশন যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়ার অব এটরনি প্রদান করতে বৃটিশ পাসপোর্টকে আইডি হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ বৃটিশ পাসপোর্টে নো ভিসা সিল ও জন্মস্থান উল্লেখ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনগুলোতে পাসপোর্ট বানাতে পুরুষদের মাথায় টুপি পড়তে দেওয়া হয় না। তা বাতিল করতে হবে। 

বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট রুটে বিমানের ভাড়া কমাতে হবে এবং ঢাকা ও সিলেটের মধ্যে অত্যধিক ভাড়ার বৈষম্য দূরেরও দাবি করেন তারা। তারা বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে অন্যান্য বিদেশী বিমানের ফ্লাইট চালু করতে হবে। বিগত সালে শুরু হওয়া ওসমানী বিমান বন্দরের নতুন টারমিনালের কাজ দ্রূত সম্পন্ন করতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জায়গা সম্পত্তি বেদখল ও মিথ্যা মামলা দিতে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও ২০২৪ সালে জুলাই আগষ্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রগন আন্দেলনের সাথে সম্পৃক্ত বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি আইন জীবিদের সকল মিথ্যা হয়রানি মুলক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান আর্থিক প্রণোদনার বিষয়ে বলা হয় নগদ প্রণোদনা বাড়াতে হবে। 

তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরিত রেমিটেন্সের ওপর ২.৫% নগদ প্রণোদনা প্রদান করে। আরও রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করতে এটি সাময়িকভাবে বাড়ানো যেতে পারে। এই ক্রান্তিকালে এই অন্তর্বর্তী সরকার কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যা আমাদের অবিলম্বে প্রবাসীদের আরও রেমিট্যান্সের জন্য চালু করা উচিত। অন্যদিকে বর্তমান বিনিময় হার সমন্বয় প্রসঙ্গেও তারা পরামর্শ দেন। বলেন, খোলা বাজারের তুলনায় রেমিট্যান্সে আরও অনুকূল বিনিময় হার অফার করা প্রয়োজন, যেন প্রবাসীরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে পারে। এজন্য আমাদের রোড শো এবং আর্থিক সুবিধাগুলো সম্পর্কে বিশাল ইতিবাচক প্রচারণা শুরু করা উচিত; যা বিশেষত যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবের জন্য যথেষ্ট নয়।

শেয়ার করুন