৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৮:০০ পূর্বাহ্ন


রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন সময়ের দাবি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন সময়ের দাবি


সনাতন ধারার পরস্পরবিদ্বেষী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের স্বৈরতান্ত্রিক ঢঙের আস্ফালন পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। পুরোনো ঢঙে সরকার দখলের রাজনীতি চালু থাকলে ছাত্র-জনতার আত্মবিসর্জনে অর্জিত পরিবর্তনের সুযোগ ব্যর্থতায় পরিণত হবে। বরাবরের মতো ক্ষমতায় আসা দল স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে। জুলাই-আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সক্রিয় রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলোর আচার আচরণে কিন্তু স্বৈরাচারী মনোভাব পরিবর্তনের শুভ লক্ষণ দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতার মুখে পরিবর্তনের শুভবার্তা থাকলেও বাস্তবে দলগুলোর কার্যক্রমে সেগুলোর প্রতিফলন খুব কম দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭২-২০২৪ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিএনপি-জামায়াত জোট, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে সরকারকে দেশ পরিচালনা করতে দেখেছে। কোনো সরকারই জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে বলে মনে হয় না। 

এখন কিন্তু নতুন প্রজন্ম চায় না পুরোনো দিনের বস্তা পচা রাজনীতি নিয়ে কোনো সরকার আবারও দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলুক। তাই পরিবর্তনের পথ সুগম করার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রায়ন, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা সুনিশ্চিত করা। বছরের পর বছর কাউন্সিল না করে ব্যক্তিবিশেষ বা পরিবারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। এ ধরনের রাজনীতির পরিণতি স্বেচ্ছাচার, কর্তৃত্ববাদী শাসন। যা বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ৫৩ বছর দেখে আসছে। এ ধারার পরিবর্তনের এবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনীব্যবস্থার সংস্কার, রাজনৈতিক দলগুলোর সংশোধনের অঙ্গীকার সুনিশ্চিত না করে নির্বাচন হলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন হবে না। কিছু রাজনৈতিক দল, সরকারঘনিষ্ট প্রেশার গ্রুপের কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির আচার-আচরণ, কার্যক্রমে কিছু বিরুদ্ধ মত দমনের স্বৈরাচারী আচরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্যবিহীন সমাজ গড়তে হলে সব পথ ও মতের সহঅবস্থানের পরিবেশ গড়তে হবে। কোন দল বা ব্যক্তি টিকে থাকবে বা থাকবে না সেটি নির্ধারণের দায়িত্ব বা অধিকার জনগণের। সহঅবস্থানের নীতি গৃহীত এবং প্রতিষ্ঠিত না হলে ১৯৭২, ১৯৯০-এর মতো ২০২৪ ব্যর্থ হতে পারে।

দেখছি কিছু দল দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার নেশায় ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। কিছু প্রান্তিক দল ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার নেশায় ব্যাকুল। ছাত্র-জনতার অর্জনকে হাইজ্যাক করে কিছু চেনামুখ জনদরদি হওয়ার অভিনয় করছে। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সবাইকে চেনে। সরকার যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি করে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তাহলে শেকড়বিহীন প্রান্তিক দল বা ইতিপূর্বে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলগুলোর ভরাডুবি হতে পারে।

তাই বলছি, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার এখন সময়ের দাবি। সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান, সব মত প্রকাশ এবং সমালোচনা সইবার মানসিকতা সৃষ্টি অত্যাবশ্যক।

শেয়ার করুন