৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:১৬:২৫ অপরাহ্ন


ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গণনির্বাসন পদক্ষেপ কতটা বাস্তবসম্মত?
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গণনির্বাসন পদক্ষেপ কতটা বাস্তবসম্মত? কলোরাডোর অরোরা সিটিতে ক্যাম্পেইন সমাবেশে অভিবাসী বিরোধী বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প


অনথিভুক্ত অভিবাসীদের গণ নির্বাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও আইনি মহলে চরম বিতর্ক চলছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১১ অক্টোবর শুক্রবার কলোরাডোর অরোরা সিটিতে এক ক্যাম্পেইন সমাবেশে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে ১৭৯৮ সালের এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট ব্যবহার করে অপরাধী অনথিভুক্ত অভিবাসীদের গণ নির্বাসন বাস্তবায়ন করবেন। এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিগত নোটিশ বা শুনানির প্রয়োজন নেই, এবং এতে আপিল করারও কোনো সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে সরকারকে প্রমাণ উপস্থাপনেরও বাধ্যবাধকতা নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭৯৮ সালের পুরোনো আইন এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট নতুনভাবে প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই আইন এখনও তেমনভাবে পরিবর্তিত হয়নি। এটি মূলত এমন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয় যখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করে বা আক্রমণের হুমকি দেয়। তবে কিছু রাজনীতিবিদ মনে করেন, বর্তমান অভিবাসন সংকট এবং মাদক পাচারকে ’আক্রমণ’ বা ’শিকারী অনুপ্রবেশ’ হিসেবে গণ্য করে এই আইন প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদিও এই ধারণার উপর আদালতে তেমন কোনো মামলা হয়নি, তাই এর সঠিক অর্থ এবং প্রয়োগ নিয়ে এখনও আইনি স্পষ্টতা নেই। এ অবস্থায় ইমিগ্রেশন কোর্টের ব্যাকলগ সংকট এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তবে, এই আইন প্রয়োগে আইনি মতামত ও বিতর্ক রয়েছে। ব্রেনান সেন্টারের লিবার্টি ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের একজন পরামর্শক ক্যাটরিন ইয়োন ইব্রাইট মনে করেন, ’মাইগ্রেশন বা মাদক পাচারকে আক্রমণ বা শিকারী অনুপ্রবেশ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।’ তবে প্রেসিডেন্ট যদি এই আইনের অধীনে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আদালত রাজনৈতিক প্রশ্নের নীতির আওতায় সেটিকে অরাজনৈতিক বিবেচনা করে তা অগ্রাহ্য করতে পারে। যদি ট্রাম্প এই আইন প্রয়োগ করেন, তবে এটি অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে, যেমনটি তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে হয়েছিল। যদিও ট্রাম্প বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন কত সংখ্যক অপরাধী অভিবাসীকে মুক্তি দিয়েছে সে সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ক্যাম্পেইন সমাবেশে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক অপরাধে জড়িত অনেক অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছেন। ইউ এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর ডেপুটি ডিরেক্টরের ২০২৪ সালের একটি চিঠি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৬৬২,৫৬৬ জন অনথিভুক্ত অভিবাসী রয়েছেন যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৪৩৫,৭১৯ জনের দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এবং ২২৬,৮৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। তাদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে ১৩,০৯৯টি হত্যাকাণ্ড, ১৫,৮১১টি যৌন নিপীড়ন, ২,৫২১টি অপহরণ, ১৩,৪২৩টি অস্ত্র অপরাধ, ১০,০৩১টি ডাকাতি এবং ৫৬,৫৩৩টি মাদক সংক্রান্ত অপরাধ সহ আরও গুরুতর অপরাধ। ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এই অপরাধীদের প্রচলিত আইনে নির্বাসন আদেশ কার্যকর করতে সক্ষম। ২০০ বছরের পুরোনো এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই।

এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্টের অধীনে গণনির্বাসন একটি চরম এবং নিষ্ঠুর পদক্ষেপ যা অভিবাসন সমস্যার সমাধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি মানবিক, সামাজিক এবং আইনি দিক থেকে অনেক প্রশ্ন তুলেছে। আইনগত দিক নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। আইনটি ব্যবহারের ফলে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া যেমন জটিল হবে, তেমনি আপিল ও ন্যায়বিচারের সুযোগ বন্ধ করা হবে। অভিবাসন সমস্যার মূল কারণগুলোকে সমাধান করতে হবে। ইমিগ্রেশন কোর্টের ব্যাকলগ কমানো, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং অভ্যন্তরীণ আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যেমন বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে, তেমনি এটি গণ নির্বাসনের মতো কঠোর ও বিতর্কিত পদক্ষেপকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে। এসব পদক্ষেপ নিলে গণ নির্বাসনের মতো কঠোর এবং বিতর্কিত আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। অভিবাসন সংকটের মানবিক সমাধানের জন্য নীতিগত এবং বাস্তবসম্মত উপায় গ্রহণই সঠিক পথ।

শেয়ার করুন