৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:০৩:৩৭ অপরাহ্ন


ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সমতাভিত্তিক হওয়া অপরিহার্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৪
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সমতাভিত্তিক হওয়া অপরিহার্য বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় পতাকা


ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে ভারত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশী। জলে-স্থলে ৩.৭৫ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতবেষ্টিত। দুটি দেশ আবার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সংস্থা সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা বাংলাদেশ শ্রদ্ধার সঙ্গেই স্মরণ করে। কিন্তু এটিও অস্বীকার করা যাবে না দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যতটা উদারভাবে ভারতের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, ভারত কিন্তু তার ২৫ শতাংশ করেনি। 

দীর্ঘদিন অমীমাংসিত হয়ে আছে অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টন সমঝোতা। দুই সৎ প্রতিবেশীর সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত সীমান্তের কাটা তারের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ভারত, সীমান্তে নিরস্ত্র নিরীহ নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে বাংলাদেশি নাগরিকদের। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেল, সড়ক ও জলপথে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ দরজা-জানালা খুলে দিলেও ভারত চিকেন নেকের ভেতর দিয়ে নেপাল-ভুটানের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য করতে সুযোগ দিচ্ছে না। নানা তালবাহানায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। মোটকথা, ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনো পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে ভারত বিষয়ে যৌক্তিক ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে।

স্বীকার করতে বাধ্য ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। এমনকি সদ্য অপসারিত বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল ধরনের ভারতবিরোধী অন্তর্ঘাত তৎপরতা নির্মূল করেছে। ভারতের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত সড়ক, রেল এবং জলপথে যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করতে উদারতা দেখিয়েছে। অনেক ভারতীয় কোম্পানি এবং ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করছে। কিন্তু বিনিময়ে সেই পরিমাণ সুযোগ বাংলাদেশিদের দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির পরিপন্থী ভারত বা নেপাল থেকে সৃষ্ট নদনদীগুলোর উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফাভাবে পানি অপসারণ করায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো মৃতপ্রায়। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষিকাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে প্লাবনে ভাসানো হচ্ছে বাংলাদেশকে। এগুলো কিছুই সৎ প্রতিবেশীসূলভ মনোভাবের পরিচায়ক নয়। অভিযোগের পাহাড় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে, ভারত মানছে না আন্তর্জাতিক নিয়মও। অভিন্ন ৫৩ টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা এগুচ্ছে না ভারতের একগুঁয়েমির কারণে। অনেকের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশের সব কাজে অশুভ প্রভাব বিস্তার করেছে।

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণবিপ্লবের কারণের ভারত প্রভাবিত বাংলাদেশ সরকারের পতন হয়েছে। নতুন সরকার দেশ সংস্কারের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসূলভ সমতাভিত্তিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। বিশেষত বাংলাদেশের বাঁচা-মরার সমস্যা অভিন্ন নদীগুলোর জল বণ্টন আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী অবিলম্বে সমাধান হতে হবে। সীমান্তে অবিলম্বে নিরীহ নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করতে হবে। চিকেন নেক দিয়ে নেপাল-ভুটানের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ দিতে হবে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান না হলে বাংলাদেশ অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাধানের জন্য উপস্থাপন করতে বাধ্য হবে।

বাংলাদেশিরা অবশ্যই সাধরণভাবে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ভারতের তৎকালীন সরকার এবং জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু ভারতের মনে রাখা উচিত ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। নিজেদের সকল সিদ্ধান্ত প্রভাবহীনভাবে নেওয়ার অধিকার বাংলাদেশের আছে। একতরফাভাবে একটি দেশ সব কিছু নিবে কিন্তু বিনিময়ে ন্যায্য অধিকারটুকু বঞ্চিত রাখবে এটি ভাবার দিন শেষ। ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সমতাভিত্তিক হতেই হবে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বৈরী সম্পর্ক কারো জন্য কল্যাণকর হবে না। 

শেয়ার করুন