ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের ফলে দেড়যুগের অপশাসনের অবসানের পর ছাত্র-জনতার পছন্দের অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকার কঠিন এজেন্ডা নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। চারিদিকে মহাসংকট ঘনীভূত। প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং সংস্থায় প্রয়োজন ন্যূনতম সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতেই হিমশিম খাচ্ছে সরকার। পূর্ববর্তী সরকারের মন্ত্রী, আমলারা শুধু নয়, সরকারঘনিষ্ঠ সংস্থা প্রধান, আমলা অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে অথবা আত্মগোপনে।
এ মুহূর্তে হঠাৎ করে অধিকাংশ সংস্থা, সরকারি অফিস, শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলনের নামে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা প্রতিক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। আন্দোলনকালে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। দেখছি অনেক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানা-অজানা অনেককে অভিযুক্ত করে অনেকটা পূর্ববর্তী সময়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ ঢঙে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সীমিত সময়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য এগুলো হিতে বিপরীত হবে। সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। সরকারকে সময় দিন।
সরকারের হাতে অনেক প্রাধিকার। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠগুলোকে শৃঙ্খলার অধীনে এনে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার উদ্যোগ দৃশ্যমান। অর্থপাচারকারীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বাড়ছে। বিপুল বিদেশি ঋণ পরিশোধের বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা বিবেচনাধীন। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবং যোগাযোগব্যবস্থার সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে ছাত্র-জনতার সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থায় পতিত সরকার-ঘনিষ্ঠ মানুষের অপসারণ করে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প, যোগাযোগ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, পরিবেশ, স্থানীয় সরকার সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংস্কার করতে হলে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দিতে হবে। অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে অনির্দিষ্টকাল দায়িত্ব পালন করা যাবে না। সবে তিন সপ্তাহ গেল। আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার করে ন্যূনতম সময়ে নতুন নির্বাচন করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তির আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল এ সরকার। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির অপশাসন, কুশাসন দেখেছে।
দূষিত, কলঙ্কিত রাজনীতি পরিশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলো পরিমার্জিত না হলে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যেন জনতার ভোট নির্বাচিত সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়। শাসক না হয়ে সেবক হয়। প্রয়োজনে কনস্টিটিউশন ন্যূনতম পরিবর্তন করা প্রয়োজনীয় মনে হলে করতে হবে। দেশে কিন্তু জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। কনস্টিটিউশন বহাল আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কার্যক্রম কিন্তু নির্বাচিত পরবর্তী সরকারকে জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদন করতে হবে।
সম্প্রতি প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সন্নিহিত ভারতের রাজ্যগুলোতে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল এবং ভারতের বাঁধ উপচে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে স্মরণকালের মারাত্মক প্লাবন হয়েছে। লাখ লাখ বানভাসি মানুষ বিপর্যস্ত। দেশবাসী সম্মিলিতভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে। প্রতিটি দুর্যোগেই এমনিভাবে জেগে ওঠে বাংলাদেশ। ইনশাআল্লাহ বিপদ কেটে যাবে।
আমি দেখেছি, প্রবাসীদের মধ্যেও দেশসেবার আকুল ইচ্ছা জেগে উঠেছে। আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবাসে দূতাবাসগুলোতেও যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করে এনআরবি বিশেষজ্ঞদের মেধা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাবেন। পরিশেষে, আমি সবাইকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বোতভাবে সহায়তা করতে অনুরোধ করছি। দেশ পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে।