৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫২:২২ অপরাহ্ন


ডিভোর্সেও সেল!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৪
ডিভোর্সেও সেল!


নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বেশি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় প্রতি শুক্রবার। এদিনে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে আছে আজকাল, প্রবাস, নবযুগ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সাদা কালো এবং হ্যালো বাংলাদেশ। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা হলো গত ১৯ জুলাই শুক্রবার নিউইয়র্ক থেকে এর কোনোটিই প্রকাশিত হয়নি। ২৪ জুলাই দেশ প্রকাশিত হয়নি। বলা যায়, নিউইয়র্কের বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় দিন।

গত সপ্তাহে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ঝরে গেছে শত শত প্রাণ। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকায় সংবাদপত্রের প্রকাশনা এবং টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার প্রবাসী দেশে তাদের স্বজনদের খোঁজখবর নিতে পারছিলেন না ইন্টারনেট সচল না থাকার কারণে। যোগাযোগবিহীন থেকে টেনশন বাড়তে থাকে তাদের। পরিবার স্বজনদের খবর জানতে প্রবাসীরা ছিলেন উৎকণ্ঠিত। পরদিন ছিল শুক্রবার। নিউইয়র্ক থেকে সবচেয়ে বেশি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় দিনে। সবাই অধীর আগ্রহে ছিলেন শুক্রবারের সংবাদপত্র পড়ে তারা কিছুটা হলেও বাংলাদেশের খবর পাবেন। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা ছিল, সেদিন নিউইয়র্ক থেকে একটি পত্রিকাও প্রকাশিত হয়নি। অনেকে প্রশ্ন করেছেন নিউইয়র্কের সংবাদপত্রগুলো কি একেবারেই ঢাকার ওপর নির্ভরশীল? ঢাকায় পত্রিকা বেরোলে নিউইয়র্কে সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে। আর ওখানে বন্ধ থাকলে এখানেও কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

তারা জানান, সাংবাদিকদের অনেক সোর্স থাকে। তাছাড়া বিবিসি, আলজাজিরা, ডয়চেভেলে, কলকাতার আনন্দবাজার, আজকাল, গণশক্তিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশকে নিয়ে কমবেশি সংবাদ প্রকাশ করেছে। আমাদের সংবাদপত্রের মালিকরা যদি তাদের উৎকণ্ঠিত পাঠকদের জন্য একটা দুই পাতার টেলিগ্রামও বের করতেন, তাহলে প্রবাসীদের অনেক উদ্বেগের অবসান হতো।

সময় টিভির দুঃসময়!

গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার টাইমস স্কোয়ারে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে সময় টিভির নিউইয়র্ক প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকি লাঞ্ছিত হয়েছেন। ব্যাপারটা দুঃখজনক। আমরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তি সাকিকে নয়, তাদের ক্ষোভ ছিল সময় টিভির ওপর। তাছাড়া সাংবাদিক সাকিও তার সাংবাদিকতাসুলভ আচরণ করেননি, ওল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেছেন, সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছেন। তবে আইনের দেশে থেকে কাউকে লাঞ্ছিত করা বা গায়ে হাত তোলা উচিত নয়।

গ্যারান্টির গ্যারান্টি নেই

নিউইয়র্কের একটি বাংলা ভাষার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে ড্রাইভিং শেখানো হয়। প্রশ্ন হলো শতভাগ গ্যারান্টি বলে কোনো কথা আছে কি? এ প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই। আমরা দেখেছি বাংলাদেশে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ‘শতভাগ’ নিরপেক্ষ থাকবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিলাম। আপনারা নির্বাচনের দিন দেখেন নিরপেক্ষতার প্রমাণ পান কি না। যদি না পান, বলবেন, ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নাকে খত দিয়ে চলে যাবো।’ আমরা দেখেছি নির্বাচনও শতভাগ সফল হয়নি। আবার কমিশনার সাহেবও নাকে খত দিয়ে চলে যাননি।

তাই আমাদের বক্তব্য ‘আলতু মিয়ার ফালতু বয়ান’ না হয়ে বাস্তবমুখী হবে এটাই আশা করবো।

ডিভোর্সেও সেল!

সেদিন বিকালে স্টেপলস থেকে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় ফিরছিলাম। স্টোরটা আমার বাসা থেকে অল্প দূরত্বে। বাসে বা হেঁটেও যাওয়া-আসা করা যায়। তবে বেশির ভাগ সময় হেঁটেই যাই। এতে দুটি কাজ হয়। হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, আবার হাঁটলে বাস ভাড়াটাও বেঁচে যায়। রথ দেখা কলা বেচা দুটোই হয়ে যায় একসঙ্গে।

হাঁটার সময় একজন একটা ফ্লায়ার গুঁজে দিলো হাতে। দেখলাম একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফ্লায়ার। তাতে ইন্স্যুরেন্স ছাড়াও নানা ধরনের সার্ভিসের কথা উল্লেখ আছে। আমি ফ্লায়ারের পুরোটা না পড়েই তার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, আমার কোন ইন্স্যুরেন্সের দরকার নেই। বলেই সামনে হাঁটা শুরু করলাম। তারপরও সে নাছোড়বান্দার মতো আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বললো-স্যার, আমরা সস্তায় ডিভোর্স লেটারও ফাইল করি। অফিসিয়ালি ৪৯৯ ডলার। তবে এখন একটু কম চলছে। সেল বলতে পারো। তুমি এখন চাইলে সে সুযোগটা নিতে পারো। এবার আমি থামলাম। তার দিকে চেয়ে বললাম, আমাকে দেখে কি অসুখী মানুষ মনে হয়? আমি আমার বউকে নিয়ে ৪০ বছর ধরে খুব ভালো আছি। আমার ডিভোর্সের দরকার নেই। তুমি আসতে পারো।

টিপিক্যাল ইন্স্যুরেন্স দালালের মতোই সে একটুও বিরক্ত না হয়ে আমার পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো, তাদের ফার্ম বাঙালি কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত। অনেক ক্লায়েন্ট আছে তাদের। আমার জন্য সে ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা করে দেবে। তাছাড়া লোক রেফার করলে প্রতিটি কেসে আমাকে কমিশনও দেবে। নিউইয়র্কে ডিভোর্স ফাইল ফি ২১০ ডলার। এর সঙ্গে আর সামান্য খরচ যোগ দিলেই তারা আবেদনটি কোর্টে সাবমিট করে দেবে।

আমি এবার তাকে কড়া একটা ধমক দিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করলাম। ভাবছিলাম, সব পণ্যেই সেল থাকে। নিউইয়র্কে ডিভোর্সও এখন পণ্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেজন্য তা সেলে পাওয়া যায়।

বন্ধ হলো সাপ্তাহিক খবর

প্রকাশনার দুই মাসের মাথায় নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক খবর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেল। এ ব্যাপারে নানাজনে নানা মন্তব্য করছে। আমি সে প্রসঙ্গে কথা না বলে অন্য একটি ব্যাপারে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।

আপনি যদি নতুন বিজনেস শুরু করেন, তাহলে অবশ্যই বিজনেস শুরুর আগে মার্কেট অ্যানালাইসিস করা উচিত। আপনি মার্কেটে নতুন একটা বিজনেস নিয়ে আসছেন। কিন্তু সেই মার্কেটে তো আগে থকেই একই প্রোডাক্টের অনেক ভিড়। আপনি যদি প্রস্তুতি না নিয়ে নামেন, তাহলে সেই ভিড়ে আপনি তো হারিয়ে যাবেন। মার্কেট অ্যানালাইসিস করার ফলে আপনি আপনার কাস্টমারের প্রয়োজন সম্পর্কে সব জানতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ পাওয়া যাবে।

আর আমরা, বিশেষ করে বাঙালিরা তা করি না বলেই ব্যবসায়ে লোকসান দিই এবং সময়ের আগেই মার্কেট থেকে হারিয়ে যাই।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুমতি দিন!

নিউইয়র্ক, ২২ জুলাই

শেয়ার করুন