বাংলাদেশের কক্সবাজারের মহেশখালী উপকূলে থাকা এক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট গ্রুপ মালিকানাধীন ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দুটি সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফিরে আসার পর ১০০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে এলএনজি জোগান দেওয়ায় গ্যাস গ্রিডে বেশ স্বস্তি ছিল। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের সাগর উপকূলে প্রাকৃতিক কারণেই এফেসারু অপারেশন বিঘ্নিত হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সাম্প্রতিক ঝড়ের সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিনের জন্য আশা একটি জলযান সামিট গ্রুপ মালিকানাধীন এফেসারু বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করে এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে ৫০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ কমে গাছে। দুটি এফেসারু পূর্ণ ক্ষমতায় চালু থাকার পরেও গ্যাস ঘাটতি ছিল ১০০০-১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
এখন সেখানে ৫০০ মিলিয়ন ঘাটতি যোগ হওয়ায় তীব্র গ্যাস সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ জ্বালানি খাত। অনেকটা আতঙ্কে সময় কাটছে পেট্রোবাংলা এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোর। গ্যাসনির্ভর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, শিল্প, সিএনজি সব ক্ষেত্রেই এখন গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চয়তা। এক্ষুনি বলা যাচ্ছে না সিঙ্গাপুর থেকে যথাসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত এফেসারু ফিরবে কি না? এখন ঘন গ্রীষ্মকাল। বিদ্যুৎ চাহিদা তুঙ্গে। গ্যাসের ঘাটতি যে কয়লা বা তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে পূরণ করা হবে সেখানেও ডলার সংকট। জুলাই মাসের শেষ নাগাদ চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ট্রান্সফরমার স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ হলে মাতারবাড়ী এবং বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে, তবে কয়লার অভাবে মাঝেমধ্যে পায়েরা বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার সময় পিছিয়ে গাছে। বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর সমন্বয়ের অভাবেও বিঘ্নিত হয়ে চলেছে জ্বালানিনিরাপত্তা।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক উন্নয়ন অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাব এবং দেশীয় প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়ন করে ভ্রান্ত কৌশলে আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়ার মাসুল দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেখানেও দীর্ঘদিন ঝুলে আছে মাতারবাড়ীতে ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থেকে স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান কাজ জোরে শোরে শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। কয়লা উত্তোলন নিয়ে এখনো দোদুল্যমানতায় সরকার। ২০২৫ ও ২০২৬ সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। একটি দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা অনিশ্চিত থাকলে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কোনো ক্ষেত্রেই স্বস্তি থাকে না। আমলানির্ভর জ্বালানি খাতের সংকটের কারণ সরকারের পরামর্শদাতাদের আনাড়িপনা।