৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৪২:৫০ অপরাহ্ন


কংগ্রেসে ট্র্যাপস অ্যাক্ট উত্থাপন
অনলাইনে ২ লাখ ৮০ হাজার প্রতারণা ও স্ক্যামের অভিযোগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
অনলাইনে ২ লাখ ৮০ হাজার প্রতারণা ও স্ক্যামের অভিযোগ কংগ্রেসে ট্র্যাপস অ্যাক্ট উত্থাপন করা হয়েছে


আমেরিকায় অনলাইন ও ডিজিটাল পেমেন্ট স্ক্যাম এখন একটি জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে। ২০২৪ সালে নিউইয়র্কের বাসিন্দারা ফেডারেল ট্রেড কমিশনে (এফটিসি) প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার প্রতারণা ও স্ক্যামের অভিযোগ জানিয়েছেন। এফটিসি জানিয়েছে, বর্তমানে বছরে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি চুরি হচ্ছে এ ধরনের স্ক্যামের মাধ্যমে যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রতারণার সবচেয়ে করুণ শিকার হচ্ছেন বয়স্ক নাগরিকরা। স্ক্যামাররা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে নাতি-নাতনির কণ্ঠ নকল করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। কেউ কেউ পুরো জীবনের জমানো সঞ্চয় হারাচ্ছেন এসব প্রতারণায়। শুধু বয়স্করাই নন, অনেক সাধারণ মানুষও প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন। টোল বা ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত ভুয়া মেসেজ, কিংবা ডিএমভির নামে জাল টেক্সট পাঠিয়ে স্ক্যামাররা ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে।

এ ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে, মার্কিন কংগ্রেসে ট্র্যাপস অ্যাক্ট নামে একটি দ্বিদলীয় বিল গত ২৫ জুলাই প্রস্তাব করা হয়েছে। ট্র্যাপস অ্যাক্ট বা টাস্ক ফোর্স ফর রিকগনাইজিং অ্যান্ড অ্যাভার্টিং পেমেন্ট স্ক্যামস হলো একটি প্রস্তাবিত মার্কিন আইন, যার লক্ষ্য অনলাইন ও ডিজিটাল পেমেন্ট স্ক্যামের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ট্র‍্যাপস অ্যাক্টের মূল উদ্যোক্তা হলেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর রাফায়েল ওয়ারনক (জর্জিয়া)। তার সঙ্গে রিপাবলিকান পক্ষ থেকে যুক্ত হয়েছেন সিনেটর মাইক ক্র‍্যাপো (আইডাহো) এবং সিনেটর জেরি মরান (কানসাস)। ডেমোক্র্যাট দলের আরেক প্রবীণ সদস্য সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার (ভার্জিনিয়া) ও বিলটির সমর্থক। এটি একটি দ্বিদলীয় উদ্যোগ, অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের সিনেটররাই এতে সমর্থন দিয়েছেন।

এ আইনটি পাস হলে একটি ফেডারেল টাস্ক ফোর্স গঠিত হবে, যেখানে যুক্ত থাকবে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট, ফেডারেল ট্রেড কমিশন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন, কনজিউমার ফিন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরো এবং কনজিউমার ফিন্যান্স ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা। টাস্ক ফোর্সটি ডিজিটাল স্ক্যাম রোধে তদন্ত করবে, নতুন আইন প্রস্তাব করবে এবং ফেডারেল, স্টেট ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করবে।

বিলটি ইতিমধ্যেই বয়স্ক নাগরিকদের সংগঠন এএআরপি এবং মার্কিন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতো বিভিন্ন ভুক্তভোগী ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছে। আইনটি এখনো পাস হয়নি, তবে কংগ্রেসে আলোচনা চলছে এবং বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো চাপ আসছে এটি দ্রুত আইন হিসেবে গৃহীত করার জন্য। ট্র্যাপস অ্যাক্টকে অনেকেই দেখছেন ডিজিটাল প্রতারণার বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে, বিশেষ করে প্রবীণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি বলেও অনেক আইনপ্রণেতা মনে করছেন। এ টাস্কফোর্স শুধু স্ক্যামারদের তদন্তই করবে না, বরং নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রণ প্রস্তাব করবে এবং ফেডারেল, স্টেট ও লোকাল লেভেলের এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে। এটি এ সংকট মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ এ সমস্যা শুধু ব্যাংক বা ফিন্যান্স কোম্পানির নয়, বরং এটি টেলিকম ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকেও জড়িত করে।

তবে ট্র‍্যাপস অ্যাক্ট কোনো চূড়ান্ত সমাধান নয়-এটি একটি শুরু। অনলাইন স্ক্যাম একটি বহুমাত্রিক সমস্যা, যার সমাধান কোনো একটি সংস্থা বা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে একা সম্ভব নয়। তাই কংগ্রেসের অন্য সদস্যদের এ বিলকে সমর্থন করা জরুরি এবং নাগরিকদেরও সোচ্চার হয়ে এর পক্ষে আওয়াজ তোলা দরকার। এ যুদ্ধ শুধু আইনের নয়, এটি আমাদের পরিবার, আমাদের প্রবীণরা এবং ডিজিটাল জগতে আমাদের নিরাপত্তার লড়াই। আর যারা এ আইনের বিরোধিতা করবে, তারা ছাড়া আর কেউই নয় সেই স্ক্যামাররাই।

শেয়ার করুন