১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:১২:৫০ পূর্বাহ্ন


আরাকানসাস কারাগারে মুসলিম বন্দিদের আলাদা জুমা জামাতের নির্দেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
আরাকানসাস কারাগারে মুসলিম বন্দিদের আলাদা জুমা জামাতের নির্দেশ আরকানসাস ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনস


আরাকানসাস কারাগারে মুসলিম বন্দিদের আলাদা জুমার নামাজে জামাতের ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন ফেডারেল জজ ক্রিস্টিন জি বেকার মিলার। গত ৮ আগস্ট দেওয়া এ নির্দেশনায় আরকানসাস ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনসকে (এডিসি) শুক্রবারের নামাজের সময় মুসলিম বন্দিদের ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের থেকে আলাদা রাখার কথা বলা হয়েছে। ২০১৯ সালে গ্রেগরি হোল্ট ও ওয়ে স্টুয়ার্ট নামে দুই মুসলিম বন্দি এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। তারা কারাগারে একসঙ্গে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং কারাগারের ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ নীতি চ্যালেঞ্জ করেন। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় এসেছে। জজ মিলার রায়ে উল্লেখ করেন, একটি অস্থায়ী দেওয়াল বা পর্দা স্থাপন করাই সবচেয়ে যৌক্তিক সমাধান, যা কারাগারের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।

আরকানসাস ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনসের পূর্বের নীতিতে মুসলিম বন্দিদের ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ ও ‘ফাইভ পারসেন্টার’ গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো, যেখানে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা ছিল না। তবে এ রায়ের মাধ্যমে মুসলিম বন্দিদের আলাদা জুমা নামাজের সুযোগ নিশ্চিত হলো, যা নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) ও মামলার পক্ষে থাকা অন্যান্য সংগঠনের বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কেয়ারের ডেপুটি লিটিগেশন ডিরেক্টর গাদেইর আব্বাস বলেন, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের একসঙ্গে নামাজ পড়তে বাধ্য করা না হয়, মুসলিমদেরও অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নামাজ পড়তে বাধ্য করা উচিত নয়। এছাড়া কেয়ারের জাতীয় লিটিগেশন ডিরেক্টর লেনা মাসরি বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার অনুযায়ী ইসলাম, ন্যাশন অব ইসলাম ও ন্যাশন অব গডস অ্যান্ড আর্থসের সদস্যদের আলাদা নামাজ পড়ার সুযোগ দেওয়া জরুরি। মুসলিম বন্দিরা জানিয়েছেন, শুক্রবারের নামাজ তাদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং এ নামাজে অংশগ্রহণ না করলে তাদের মুসলিম পরিচয় বাতিল হয়ে যেতে পারে, যা তাদের অন্যান্য ধর্মীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত করবে।

এদিকে এ মামলাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশের অন্যান্য কারাগারেও মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় অধিকার ও সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা চলছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এক আলাবামার মুসলিম বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অনুমতি দিয়েছে, যেখানে তার ইমামকে মৃত্যুর সময় পাশে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এছাড়া ‘মুসলিম অ্যাডভোকেটস’ সংগঠন পাঁচ সোমালি শরণার্থী বন্দির পক্ষে হালাল খাবার ও নামাজ পড়ার সুযোগ না দেয়ার অভিযোগে মামলা করেছে।

২০১৫ সালে গ্রেগরি হোল্ট ইসলাম গ্রহণের পর ‘দাড়ি নিষিদ্ধ নীতি’ সংবিধানবিরোধী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে জিতেছিলেন। ২০০৮ সালের একটি সরকারি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুসলিম বন্দিরা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশি ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনস ইসলাম ও ন্যাশন অব ইসলামকে আলাদা ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কেয়ার দাবি করছে আরকানসাস কারাগারকেও একই নীতি অনুসরণ করতে হবে এবং ন্যাশন অব গডস অ্যান্ড আর্থসকেও আলাদা ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ রায় মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে গণ্য হচ্ছে এবং দেশের অন্যান্য কারাগারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন