৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৪৭:১৮ অপরাহ্ন


রেমিট্যান্সে এক শতাংশ কর ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২৫
রেমিট্যান্সে এক শতাংশ কর ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর ডলারের ছবি


যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিদেশে অর্থ পাঠানোর (রেমিট্যান্স) ওপর ১ শতাংশ হারে কর আরোপ করেছে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত নতুন বাজেট আইনের আওতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪ জুলাই এ বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। আইনটি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নগদ অর্থ, মানি অর্ডার বা ক্যাশিয়ার চেক ব্যবহার করে টাকা পাঠাবেন, তাদের এই কর দিতে হবে। এই কর মার্কিন নাগরিক, গ্রিন কার্ডধারী, ছাত্র ভিসা, কর্ম ভিসা কিংবা পর্যটক-সবার ওপরই প্রযোজ্য হবে, যদি তারা অনানুষ্ঠানিক বা নগদ মাধ্যমে অর্থ পাঠান। তবে বৈধ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইউএস-ইস্যু করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা পাঠালে এই কর প্রযোজ্য হবে না।

নিয়মটি কার্যকর হলে মেক্সিকো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৫০০ কোটি ডলার। এছাড়াও ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, এল সালভাদর, গুআতেমালা, বাংলাদেশ ও ডোমিনিকান রিপাবলিকসহ একাধিক দেশ অর্থনৈতিক চাপে পড়বে। নতুন কর ব্যবস্থাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি প্রবাসীদের ওপর একটি অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করবে এবং তাদের পরিবারের কাছে অর্থ সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, করের কারণে অনেকেই হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক বা অবৈধ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা অর্থ পাচার এবং জালিয়াতির ঝুঁকি বাড়াবে।

কর আদায়ের দায়িত্ব থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। অর্থ পাঠানোর সময় প্রতিষ্ঠানগুলোই সরাসরি ১ শতাংশ কর কেটে নেবে এবং তা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সরকারের কাছে জমা দেবে। শুরুতে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এই করের হার ৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছিল, পরে তা ৩.৫ শতাংশে নামানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তবে করের আওতা বাড়িয়ে এতে মার্কিন নাগরিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে এর প্রভাব আরো বিস্তৃত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য ও গবেষণা অনুযায়ী, রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ ১ শতাংশ বাড়লে, প্রেরিত অর্থের পরিমাণ গড়ে ১.৬ শতাংশ কমে যায়। অর্থাৎ এই নতুন করের কারণে বহু প্রবাসী হয় কম অর্থ পাঠাবেন, নয়তো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল (যেমন- হুন্ডি) বেছে নেবেন, যা বৈধ অর্থপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সরকার হারাবে রাজস্ব। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, এই করের ফলে এল সালভাদরের মতো দেশে জাতীয় আয়ের ০.৬ শতাংশ হারিয়ে যেতে পারে, যা এমন একটি দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই কর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিদেশি সহায়তা হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্বিগুণ ধাক্কা’ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, লাইবেরিয়া ইতিমধ্যেই মার্কিন সাহায্য কমে যাওয়ায় জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ হারিয়েছে; এবার রেমিট্যান্স করের কারণে আরো ০.১৬ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়বে। গবেষণায় বলা হয়েছে, অন্তত ১৬টি দেশে রেমিট্যান্স করজনিত ক্ষতি মার্কিন সহায়তা হ্রাসের ক্ষতির চেয়েও বেশি হবে।

মানবাধিকার ও অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলছে, এটি অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে অযৌক্তিকভাবে আর্থিকভাবে শাস্তি দিচ্ছে, যারা এই অর্থের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন অনেক উন্নয়নশীল দেশ মার্কিন সহায়তা হারাচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগছে। এতে অনেকেই বিকল্প, অনানুষ্ঠানিক ও অনিয়ন্ত্রিত পথে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হবেন, যা বৈধ অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ১ শতাংশ রেমিট্যান্স কর আইন শুধু অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির কৌশল নয়, বরং এটি অভিবাসীদের প্রতি একধরনের অবিচার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উপেক্ষার একটি বিতর্কিত উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন