১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:৫৬:০৫ পূর্বাহ্ন


এক রাতে তিন মসজিদে ‘ডেভিডের তারা’ চিহ্ন ও ভাঙচুর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
এক রাতে তিন মসজিদে ‘ডেভিডের তারা’ চিহ্ন ও ভাঙচুর নুয়েসেস মসজিদের প্রধান ফটকে ইহুদি ধর্মীয় প্রতীক ‘ডেভিডের তারা’ এবং (ডানে) তারা স্প্রে-পেইন্ট করছেন মুখ ঢাকা এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি


টেক্সাসের অস্টিন শহরে গত ২২ মে একরাতেই তিনটি মসজিদে ধারাবাহিকভাবে ভাঙচুরের ঘটনায় মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে গভীর শঙ্কা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে অস্টিন পুলিশ বিভাগ এবং শহরের সব ইসলামিক সেন্টারে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১১টা ৩০ মিনিটে সেন্ট্রাল অস্টিনের নিউসেস মসজিদে প্রথম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, একজন মুখঢাকা ব্যক্তি মসজিদের বারান্দার দরজা, ইমামের অফিসের দরজা ও আশপাশের বেড়াজালে স্প্রে-পেইন্ট করে বিভিন্ন প্রতীক আঁকছে। দেওয়ালে আঁকা প্রতীকের মধ্যে ইহুদি ধর্মীয় প্রতীক ‘স্টার অব ডেভিড’ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল।

ঘটনাগুলোর লক্ষ্য ছিল ১৯০৬ নুইসেস স্ট্রিট এ নিউয়েসেস মসজিদ, ১১৯০০ এন লামার ব্লুভার্ড এ ইসলামিক আহলুল বাইত অ্যাসোসিয়েশন এবং ১৪৫১৪ ওয়েন টেকব্লুভার্ড এ অস্টিন দিয়ানেত সেন্টার। রাত ১১টা ৩০ মিনিট নাগাদ নিউয়েসেস মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ ও আশপাশের স্থানে স্প্রে-পেইন্টে ‘ডেভিডের তারা’সহ বিভিন্ন প্রতীক আঁকা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মুখঢাকা এক সাদা পুরুষ মসজিদের বারান্দার দরজা, ইমামের অফিসের দরজা ও বাউন্ডারিতে এসব আঁকছেন। একই রাতে ইসলামিক আহলুল বাইত অ্যাসোসিয়েশন এবং অস্টিন দিয়ানেত সেন্টারের বিলবোর্ড ও প্রবেশদ্বারেও একই ধরনের ভাঙচুর চালানো হয়। একই সময়ে শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ইসলামিক আহলুল বায়ত অ্যাসোসিয়েশন মসজিদ এবং অস্টিন ডিয়ানেত সেন্টারেও একই ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। দুটি মসজিদের বিলবোর্ড ও প্রবেশদ্বারকে লক্ষ্য করে অবমাননাকর চিহ্ন ও বার্তা স্প্রে করে দেওয়া হয়।

নিউসেস মসজিদের বোর্ড সদস্য রাওয়ান্দ আবদেলঘানি বলেন, গত অক্টোবর থেকে নিউসেস মসজিদ চারবার বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হয়েছে। এই মসজিদটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং পুরো অস্টিন কমিউনিটির জন্য একটি উন্মুক্ত, আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থানের জায়গা হিসেবে পরিচিত। তিনি আরো বলেন, আমরা সাম্প্রতিক ইসলামোফোবিয়া, অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ও শিক্ষার্থীদের বাক্্স্বাধীনতা দমন করার প্রবণতায় উদ্বিগ্ন। নিউসেস মসজিদ, যা ১৯৭৭ সাল থেকে অস্টিন শহরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের অনেক মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই তিনটি ভাঙচুরের ঘটনা পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হচ্ছে, যা ঘৃণা ছড়ানো ও বিভাজন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে। আমরা অস্টিন পুলিশ বিভাগের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং শহরের সব ইসলামিক সেন্টারে নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। অস্টিন পুলিশ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা প্রতিটি মসজিদের চারপাশে নির্দেশিত টহল বাড়িয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের শনাক্তে তৎপরতা চালাচ্ছে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সবাই এই কমিউনিটির অংশ। প্রতিটি বাসিন্দা যেন নিরাপদ, সম্মানিত ও মূল্যায়িত বোধ করে সেটিই আমাদের অঙ্গীকার।

ঘটনার পরদিন ২৩ মে শুক্রবার অস্টিনের ইহুদি সংগঠন শালোম অস্টিন এক বিবৃতিতে ইসলামিক সম্প্রদায়ের পাশে থাকার অঙ্গীকার জানায় এবং এই হামলার নিন্দা করে। তারা জানায়, ইসলামভীতিমূলক ঘৃণার এই ঘটনা অস্টিনের মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে না। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে ঘৃণা কীভাবে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে আমরা তা জানি। তাই আজ মুসলিম প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শালোম অস্টিন আরো জানায়, তাদের নিরাপত্তা টিম অস্টিন পুলিশ বিভাগকে তদন্তে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে। অস্টিন পুলিশ বিভাগ সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে, কেউ যদি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারেন বা কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য থাকে, তাহলে austintexas.gov/againsthate ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দ্রুত জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে, অস্টিনের মুসলিম সম্প্রদায় এখন ঘৃণার রাজনীতির এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। ধর্মীয় উপাসনালয়ে বারবার হামলা শুধু একটি সম্পদায়ের ওপর নয়, বরং সমগ্র সমাজের শান্তি, সম্প্রীতি এবং মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত। মসজিদগুলো যেমন বিশ্বাসের কেন্দ্র, তেমনি এগুলো সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক। এই ধরনের হামলা আমাদের বহুত্ববাদী সমাজকে দুর্বল করে তোলে। এখন সময় এসেছে-প্রশাসনের উচিত শুধু অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করাই নয়, বরং সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব, যে কোনো রকম বিদ্বেষ, ঘৃণা ও ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। নীরবতা ঘৃণাকে শক্তি দেয়, আর ঐক্যই পারে তাকে পরাজিত করতে।

শেয়ার করুন