১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:০৭:০০ পূর্বাহ্ন


নিরপরাধ অভিবাসীদেরও বিচারের আগে ফেরত পাঠানো হচ্ছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
নিরপরাধ অভিবাসীদেরও বিচারের আগে ফেরত পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)


যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট সংস্থা (আইস) সম্প্রতি একটি বিতর্কিত কৌশল গ্রহণ করেছে, অপরাধে অভিযুক্ত অভিবাসীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগেভাগেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। শুধু অভিযুক্ত নয়, অনেক ক্ষেত্রেই নিরপরাধ বা এখনো নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া অভিবাসীদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপ্রক্রিয়া ভেঙে পড়ছে, অপরাধের শিকাররা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে- এমনটাই অভিযোগ আইনজীবী ও প্রসিকিউটরদের।

কোলোরাডোর ডেনভার এলাকায় জেলা অ্যাটর্নি ব্রায়ান ম্যাসন জানিয়েছেন, আইস এর আগেভাগে হস্তক্ষেপের কারণে তাকে অন্তত ছয়টি গুরুতর ফৌজদারি মামলা বন্ধ করতে হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে যৌন সহিংসতা ও হত্যাচেষ্টার মতো অভিযোগ ছিল। এক ঘটনায় মূল সাক্ষীদের আগেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়, ফলে বিচারক অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। পরে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি এক আইস এজেন্টকে আক্রমণ করেন। বোস্টনে একটি মামলায়, বিচার চলাকালীন অভিযুক্তকে আইস আটক করে নিয়ে যায় এবং আদালতের অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়নি। ফলে বিচারপতি মামলাটি খারিজ করে দেন। সাফোক কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কেভিন হেইডেন ঘটনাটিকে দায়িত্বহীন ও ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আইনি বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন কৌশলের ফলে শুধু অভিযুক্ত নয়, নিরপরাধ বহু অভিবাসীও আদালতে নিজেদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ হারাচ্ছেন। কেউ কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলেও পরে আবার আইসের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। এক ঘটনায়, ম্যাসাচুসেটসে ড্রাইভিং সম্পর্কিত অভিযোগে অভিযুক্ত এক অভিবাসীকে আদালতে হাজির করতে অস্বীকৃতি জানায় আইস। পরে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের হস্তক্ষেপে ফেডারেল আদালত অভিযুক্তকে হাজির করার নির্দেশ দেন। ওই ব্যক্তি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও এরপর আবারও আইস তাকে আটক করে।

আইনজীবীরা বলছেন, এই পরিস্থিতির পেছনে আংশিকভাবে দায়ী নতুন লেকেন রাইলি অ্যাক্ট নামক আইনটি, যা নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে অভিযুক্ত অবৈধ অভিবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে আটক রাখার অনুমতি দেয়। যদিও এই আইন সরাসরি নির্বাসনের (ডিপোর্টেশন) নির্দেশ দেয় না, বাস্তবে অনেককে বিচার শুরুর আগেই দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে পারিবারিক সহিংসতা, চুরি, এমনকি শারীরিক হামলার মতো মামলাগুলোও বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

এই কঠোর অভিবাসন নীতির পেছনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। তিনি এই প্রক্রিয়াকে গ্যাং সদস্য ও হত্যাকারীদের দ্রুত বিতাড়নের সঠিক কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি সম্প্রতি এক পোস্টে লিখেছেন, মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের বিচার করা সম্ভব নয়। আমরা জানি কারা অপরাধী, তাদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে হবে।

নেভাদা ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক মাইকেল কাগান বলছেন, এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রে এক ধরনের দ্বিস্তর বিচারব্যবস্থা তৈরি করছে। যেখানে একজন নাগরিক অপরাধ করলে তাকে জেল খাটতে হয়, অথচ একজন অবৈধ অভিবাসী একই অপরাধ করেও দেশে ফেরত গিয়ে পার পেয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে।

ভার্জিনিয়ার পাবলিক ডিফেন্ডার নিকোলাস রেপুচ্চি বলেন, বর্তমানে অনেক অভিবাসীই সাক্ষ্য দিতে সাহস পাচ্ছেন না, কারণ তারা আদালতের আশপাশে আইসের উপস্থিতির আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, যদি কেউ আদালতে যেতে ভয় পান, তবে আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতেই পারি না।

ডিএ ব্রায়ান ম্যাসন বলেন, আগে তিনি আইসের সঙ্গে সমন্বয় করে অপরাধের শিকারদের জন্য ‘ইউ ভিসা’ নিশ্চিত করতেন, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে সাক্ষ্য দিতে পারেন। এখন সেই সহযোগিতা আর নেই। যদি কোনো ভুক্তভোগী আদালতে যেতে ভয় পান, কারণ তিনি পার্কিং লটে আইসের হাতে আটক হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে আমি সেই মামলাটি চালাতে পারি না।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা একমত, আইসির এই নতুন কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করছে এবং পুরো সমাজের জন্য একটি গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

শেয়ার করুন