৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২৯:৪২ পূর্বাহ্ন


কোর্টের রায়
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকলে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকলে বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে


যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য এবং ভ্রমণ ভিসায় যারা ৩০ দিনের বেশি অবস্থান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের নির্দেশ কার্যকর করার অনুমতি দিয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল বিচারক ট্রেভর নিল ম্যাকফ্যাডেন। গত ১০ এপ্রিল ফেডারেল আদালতে দেওয়া রায়ে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কোনো নতুন আইন নয়; বরং এটি বিদ্যমান অভিবাসন আইনের বাস্তবায়ন মাত্র। ফলে এই আদেশ কার্যকর করতে সরকারকে নতুন করে জনমত যাচাই বা অতিরিক্ত কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন এবং বয়স ১৪ বছর বা তার বেশি, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ফেডারেল সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় দিতে হবে আঙুলের ছাপ, বর্তমান বাসার ঠিকানা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য। যাদের বয়স ১৪ বছরের নিচে তাদের ক্ষেত্রে এই দায়ভার অভিভাবকের ওপর বর্তাবে। নিবন্ধন না করলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার ফলে জেল, অর্থদণ্ড বা উভয় শাস্তি হতে পারে। যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের সব সময় নিবন্ধনের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে; না রাখলে সেটিও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই নির্দেশনা শুধু অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য নয়; বরং কানাডার যেসব নাগরিক ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদেরও নিবন্ধন করতে হবে। শীতকালে ফ্লোরিডার মতো উষ্ণ রাজ্যে সময় কাটানো স্নোবার্ড কানাডিয়ান পর্যটকরাও এই নির্দেশনার আওতায় পড়বেন। তাছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিক, যারা ৩০ দিনের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ফেডারেল অভিবাসন আইন বহু আগেই বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করেছিল। এর শুরু ১৯৪০ সালের এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট দিয়ে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয়। পরে ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টে তা আরো বিস্তৃত হয়। যদিও আইনটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর, তবে বাস্তবে এ নিবন্ধন কার্যক্রম খুব কমই প্রয়োগ হয়েছে।

২০০১ সালের ৯/১১ ঘটনার পর ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ট্রি এক্সিট রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’ নামে একটি কর্মসূচি চালু হয়, যেখানে ২৫টি মুসলিমপ্রধান দেশের ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। যদিও এই কর্মসূচি থেকে কোনো সন্ত্রাসবাদসংক্রান্ত শাস্তি আসেনি, তবু প্রায় ১৩ হাজার অভিবাসীকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। পরে ২০১১ সালে এ ব্যবস্থা স্থগিত এবং ২০১৬ সালে তা বাতিল করা হয়।

বর্তমান নতুন পদক্ষেপটি নিয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, এটি মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কারের কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের পথ তৈরি করছে। তাদের মতে, বহু অভিবাসী যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, কাজ করছেন ও পরিবার নিয়ে আছেন, তারা এখন এক গভীর দোটানার মুখোমুখি। নিবন্ধন করলে তারা সরকারকে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছেন, যা পরে ধরপাকড়ের জন্য ব্যবহার হতে পারে। আবার নিবন্ধন না করলে তারা ফৌজদারি অপরাধের শিকার হতে পারেন।

ইতিমধ্যে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS) নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নির্দেশনার আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের ইউএসসিআইএস-এর ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ ১২ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে।

ফেডারেল আদালতের এই রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত লক্ষাধিক অভিবাসীর জন্য এক কঠিন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের এই সিদ্ধান্ত অনেকের জন্য নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং পরিবার গড়ে তুলেছেন। এখন তাদের সামনে দুটি পথÑনিবন্ধন করে নিজের অবস্থান সরকারকে জানিয়ে দেওয়া, কিংবা নিবন্ধন না করে ফৌজদারি অপরাধের ঝুঁকি নেওয়া।

এই সিদ্ধান্ত অভিবাসন নীতিতে একটি মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে পুরোনো আইনের ধারা প্রয়োগ করে অভিবাসীদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন ও অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবীরা বিষয়টিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্বাসনের সূচনা হতে পারে। এখন দেখার বিষয়-এই রায় উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে তা কী মোড় নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে কী দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।

শেয়ার করুন